সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সেই জুলাই শুরু আজ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৩০:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ৭৩ Time View

4666d459c0911fc997e23467df9fd241 6862eb6cbf323

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

4666d459c0911fc997e23467df9fd241 6862eb6cbf323

আজ ১ জুলাই—যে দিনটি স্মরণ করায় এক বছর আগের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জাগরণ, শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার দাবিতে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের। ২০২৪ সালের ঠিক এই দিনেই রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গর্জে উঠেছিল শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ—“কোটা না, মেধা চাই।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নানা প্রান্তের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে। ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের বিরুদ্ধেই ৫ জুন শুরু হয় ছাত্রদের প্রতিবাদ, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য। ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিভিন্ন ভবন ও হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিসমূহ ছিল—
১. ২০১৮ সালের মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা
২. একটি কমিশন গঠন করে দ্রুত বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বাতিল
৩. অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা সংবিধান অনুযায়ী বিবেচনায় নেওয়া

/> ৪. চাকরিতে কেবল মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা

শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, দাবি না মানলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপরের দিন ২ জুলাই ‘গণপদযাত্রা’র ঘোষণা আসে। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ—সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিভেজা দিনে বিক্ষোভ চালিয়ে বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল, তাহলে স্বাধীনতার পর আবার কেন বৈষম্য?”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ১০ মিনিটের প্রতীকী অবরোধ করেন। আন্দোলনের অন্যতম মুখ আরিফ সোহেল বলেন, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে স্লোগানে জানান, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও চলবে এই বৈষম্যবিরোধী যুদ্ধ।

এই দিনটি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও কর্মসূচির কমতি নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হবে। দুপুরে গাইবান্ধা ও বিকালে রংপুরে পথসভায় অংশ নেবেন এনসিপি নেতারা।

এছাড়া বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশ নেবেন জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের পরিবার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।

এক বছর পেরিয়ে আজও প্রশ্ন রয়ে গেছে—দাবি পূরণ কতটুকু হলো? বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা বুকভরে ধারণ করেছিলেন, তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সময়ের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে।

আজকের দিনটি তাই শুধুই স্মৃতিচারণ নয়, বরং নতুন করে আশাবাদের, অঙ্গীকারের—বৈষম্যহীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত একটি রাষ্ট্রের দাবিতে অগ্রসর হবার দিন। সেই জুলাই শুরু হলো আবারও।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সেই জুলাই শুরু আজ: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী

Update Time : ০৬:৩০:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

4666d459c0911fc997e23467df9fd241 6862eb6cbf323

আজ ১ জুলাই—যে দিনটি স্মরণ করায় এক বছর আগের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জাগরণ, শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার দাবিতে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের। ২০২৪ সালের ঠিক এই দিনেই রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে এবং দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গর্জে উঠেছিল শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠ—“কোটা না, মেধা চাই।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নানা প্রান্তের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে। ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি চাকরির কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের বিরুদ্ধেই ৫ জুন শুরু হয় ছাত্রদের প্রতিবাদ, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য। ১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিভিন্ন ভবন ও হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিসমূহ ছিল—
১. ২০১৮ সালের মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা
২. একটি কমিশন গঠন করে দ্রুত বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বাতিল
৩. অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা সংবিধান অনুযায়ী বিবেচনায় নেওয়া

/> ৪. চাকরিতে কেবল মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা

শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, দাবি না মানলে বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপরের দিন ২ জুলাই ‘গণপদযাত্রা’র ঘোষণা আসে। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ৪ জুলাই পর্যন্ত চলবে বলে জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ—সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিভেজা দিনে বিক্ষোভ চালিয়ে বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল, তাহলে স্বাধীনতার পর আবার কেন বৈষম্য?”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ১০ মিনিটের প্রতীকী অবরোধ করেন। আন্দোলনের অন্যতম মুখ আরিফ সোহেল বলেন, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক অবরোধ করে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে স্লোগানে জানান, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও চলবে এই বৈষম্যবিরোধী যুদ্ধ।

এই দিনটি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও কর্মসূচির কমতি নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষিত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হবে। দুপুরে গাইবান্ধা ও বিকালে রংপুরে পথসভায় অংশ নেবেন এনসিপি নেতারা।

এছাড়া বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশ নেবেন জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের পরিবার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।

এক বছর পেরিয়ে আজও প্রশ্ন রয়ে গেছে—দাবি পূরণ কতটুকু হলো? বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা বুকভরে ধারণ করেছিলেন, তার কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব সময়ের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে।

আজকের দিনটি তাই শুধুই স্মৃতিচারণ নয়, বরং নতুন করে আশাবাদের, অঙ্গীকারের—বৈষম্যহীন, ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত একটি রাষ্ট্রের দাবিতে অগ্রসর হবার দিন। সেই জুলাই শুরু হলো আবারও।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share