সময়: রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সচল এনবিআর, নেতারা এখন বদলি আতঙ্কে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৩৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ২৪৬ Time View

509c756a76eabad9fa57591d593a67af 68225cd712e95

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
509c756a76eabad9fa57591d593a67af 68225cd712e95
 

দীর্ঘ এক সপ্তাহের অচলাবস্থা, কর্মবিরতি ও প্রশাসনিক জটিলতার পর আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আদায়ের শেষ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের প্রধান কাস্টম হাউজগুলোতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য; কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই প্রেক্ষাপটে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানিয়েছেন, তিনি চান ভবিষ্যতে আর কখনো যেন এনবিআরকে এমন স্থবির অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আশা করছি, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না। সবাই যদি অতীতের মতো আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে, তাহলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।”

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। চূড়ান্ত হিসাব পেতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন, গত বছরের তুলনায় এবার রাজস্ব আয় কিছুটা বেশি হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গত কয়েক দিনের অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব সংগ্রহ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায়কৃত রাজস্ব ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব।”

আন্দোলনের অবসান, কিন্তু রয়ে গেছে শঙ্কা

গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ চেয়ারম্যানের অপসারণসহ নানা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। সরকারের দৃঢ় অবস্থানের পর রবিবার রাতে তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এরপর সোমবার প্রথম কর্মদিবসেই এনবিআর কার্যালয়ে ফিরে আসে স্বাভাবিকতা। কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের সব শাখার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বে ফিরে যান।

তবে আন্দোলনের রেশ পুরোপুরি কাটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কর্মস্থলে ফিরে সবাই কাজ শুরু করলেও অনেকের মুখে এখনো আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বদলির মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

সচল চট্টগ্রাম বন্দর, স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাবে গত শনিবার সকাল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম। কাস্টমস হাউজ বন্ধ থাকায় কোনো পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চালানো যায়নি। ফলে থমকে যায় আমদানি-রপ্তানির প্রবাহ।

তবে সোমবার সকাল থেকেই পুরোপুরি সচল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দর। শুরু হয় জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস, বেসরকারি ডিপো থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বন্দরে এনে জাহাজে তোলার কাজ। রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কাস্টমস ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, রোববার রাতেই রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন শুরু হয়, আর সোমবার সকাল থেকে অন্যান্য কার্যক্রমও চালু হয়ে যায়।

কর্মস্থলে ফিরে চাঙ্গা পরিবেশ

সোমবার সকাল ৯টা থেকেই এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ডেস্কে কাজে যোগ দেন। চট্টগ্রাম, বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ দেশের প্রায় সব কাস্টম হাউজেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আবারও সচল হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট দ্রুত সমাধানের ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে তারা মনে করছেন, এই ঘটনা এনবিআর ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ এবং সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

এক সপ্তাহের উত্তেজনা ও অচলাবস্থার অবসান ঘটলেও আন্দোলনের প্রতিধ্বনি এখনো রয়ে গেছে এনবিআরের অন্দরমহলে। প্রশাসনের ভেতরে অনিশ্চয়তা, সংস্কারের দাবি এবং নেতাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে আপাতত এনবিআর সচল, রাজস্ব আদায় চলছে—এটাই দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় স্বস্তির খবর। তবে এই সচলতার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক বিচক্ষণতা, কর্মীসন্তুষ্টি এবং বাস্তবমুখী সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সচল এনবিআর, নেতারা এখন বদলি আতঙ্কে

Update Time : ০৬:৩৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
509c756a76eabad9fa57591d593a67af 68225cd712e95
 

দীর্ঘ এক সপ্তাহের অচলাবস্থা, কর্মবিরতি ও প্রশাসনিক জটিলতার পর আবারও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব আদায়ের শেষ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের প্রধান কাস্টম হাউজগুলোতে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য; কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই প্রেক্ষাপটে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানিয়েছেন, তিনি চান ভবিষ্যতে আর কখনো যেন এনবিআরকে এমন স্থবির অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আশা করছি, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না। সবাই যদি অতীতের মতো আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে, তাহলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।”

তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে সোমবার সকাল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। চূড়ান্ত হিসাব পেতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন, গত বছরের তুলনায় এবার রাজস্ব আয় কিছুটা বেশি হবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গত কয়েক দিনের অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব সংগ্রহ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদায়কৃত রাজস্ব ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি, যা পরবর্তীতে সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এই লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব।”

আন্দোলনের অবসান, কিন্তু রয়ে গেছে শঙ্কা

গত এক সপ্তাহ ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ চেয়ারম্যানের অপসারণসহ নানা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। সরকারের দৃঢ় অবস্থানের পর রবিবার রাতে তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এরপর সোমবার প্রথম কর্মদিবসেই এনবিআর কার্যালয়ে ফিরে আসে স্বাভাবিকতা। কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের সব শাখার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্বে ফিরে যান।

তবে আন্দোলনের রেশ পুরোপুরি কাটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কর্মস্থলে ফিরে সবাই কাজ শুরু করলেও অনেকের মুখে এখনো আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বদলির মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

সচল চট্টগ্রাম বন্দর, স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাবে গত শনিবার সকাল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত কার্যত অচল হয়ে পড়ে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম। কাস্টমস হাউজ বন্ধ থাকায় কোনো পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম চালানো যায়নি। ফলে থমকে যায় আমদানি-রপ্তানির প্রবাহ।

তবে সোমবার সকাল থেকেই পুরোপুরি সচল হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দর। শুরু হয় জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস, বেসরকারি ডিপো থেকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বন্দরে এনে জাহাজে তোলার কাজ। রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। কাস্টমস ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, রোববার রাতেই রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন শুরু হয়, আর সোমবার সকাল থেকে অন্যান্য কার্যক্রমও চালু হয়ে যায়।

কর্মস্থলে ফিরে চাঙ্গা পরিবেশ

সোমবার সকাল ৯টা থেকেই এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ডেস্কে কাজে যোগ দেন। চট্টগ্রাম, বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ দেশের প্রায় সব কাস্টম হাউজেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আবারও সচল হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট দ্রুত সমাধানের ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে তারা মনে করছেন, এই ঘটনা এনবিআর ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ এবং সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

এক সপ্তাহের উত্তেজনা ও অচলাবস্থার অবসান ঘটলেও আন্দোলনের প্রতিধ্বনি এখনো রয়ে গেছে এনবিআরের অন্দরমহলে। প্রশাসনের ভেতরে অনিশ্চয়তা, সংস্কারের দাবি এবং নেতাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে আপাতত এনবিআর সচল, রাজস্ব আদায় চলছে—এটাই দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় স্বস্তির খবর। তবে এই সচলতার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক বিচক্ষণতা, কর্মীসন্তুষ্টি এবং বাস্তবমুখী সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share