সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভোলায় স্বামীকে নির্যাতন ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা: রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:৫৭:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / ৮১ Time View

5bfbcd1591c60cd7fc6c7f124bd7a1b4 686350fd1e722

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

5bfbcd1591c60cd7fc6c7f124bd7a1b4 686350fd1e722

ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় শ্রমিক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর একটি মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামীকে সন্ত্রাসীরা সারা রাত আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের পর তার স্ত্রীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন চালায়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান জানান, সোমবার (৩০ জুন) সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে রোববার রাতে।

ভুক্তভোগী নারী বর্তমানে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের সহায়তায় সোমবার রাতেই তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন এবং দুইটি বিয়ে করেছেন। ১৪-১৫ দিন আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। গত শনিবার তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে নিজ বাসায় ডাকেন। রাতে সেখানে হঠাৎ করে উপজেলার শ্রমিক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাসেল আহমেদ ওরফে রাসেল রানা এবং আরও কয়েকজন বাসায় প্রবেশ করে।

তারা তাকে মারধর শুরু করে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করতে চান না বলে দাবি করে চার লাখ টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হামলাকারীরা রড ও হাতুড়ি দিয়ে তার পায়ে, হাতে ও পিঠে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরদিন সকালে তার প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে স্বামীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাকেও হামলার শিকার হতে হয়। হামলাকারীরা তখন দাবি করে এক লাখ টাকা দিলেই স্বামীকে ছেড়ে দেবে। প্রথম স্ত্রী তখন শ্বশুরকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা আসছে শুনে সন্ত্রাসীরা স্বামীকে বাইরে নিয়ে যায় চা খাওয়ানোর কথা বলে।

এই সুযোগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে প্রথম স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার চিৎকারে আশপাশের নারীরা ছুটে এলেও তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

হুমকি মামলা

ধর্ষণের পর হামলাকারীরা ঘটনাটি গোপন রাখতে ভুক্তভোগীদের হুমকি দেয়। এরপর তারা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেলে স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশি সহায়তা নিয়ে তারা থানায় যান। পুলিশ তাৎক্ষণিক তদন্ত করে মামলা গ্রহণ করে এবং রাতে নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

ভোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ভুক্তভোগী নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার চিকিৎসা চলছে।

অভিযুক্তদের পালিয়ে যাওয়া পাল্টা বক্তব্য

ঘটনার পর অভিযুক্তদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন ও আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে ছাত্রদলের আরেক নেতা রাসেল আহমেদ বলেন, “আমি একসময় ঐ এলাকায় থাকতাম, এখন থাকি না। আরেক রাসেলকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

আরেক আসামি জয়নাল আবেদীন, যিনি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী, তিনিও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমি নির্দোষ।”

ওসি মহব্বত খান জানান, “ভুক্তভোগীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

এই ভয়াবহ ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকারকর্মীরা দ্রুত তদন্ত, গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আশঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভোলায় স্বামীকে নির্যাতন ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা: রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ

Update Time : ১১:৫৭:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

5bfbcd1591c60cd7fc6c7f124bd7a1b4 686350fd1e722

ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় শ্রমিক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর একটি মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামীকে সন্ত্রাসীরা সারা রাত আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের পর তার স্ত্রীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন চালায়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহব্বত খান জানান, সোমবার (৩০ জুন) সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরও চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে রোববার রাতে।

ভুক্তভোগী নারী বর্তমানে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের সহায়তায় সোমবার রাতেই তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন এবং দুইটি বিয়ে করেছেন। ১৪-১৫ দিন আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। গত শনিবার তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে নিজ বাসায় ডাকেন। রাতে সেখানে হঠাৎ করে উপজেলার শ্রমিক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, যুবদল কর্মী আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাসেল আহমেদ ওরফে রাসেল রানা এবং আরও কয়েকজন বাসায় প্রবেশ করে।

তারা তাকে মারধর শুরু করে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সংসার করতে চান না বলে দাবি করে চার লাখ টাকা দাবি করে। তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হামলাকারীরা রড ও হাতুড়ি দিয়ে তার পায়ে, হাতে ও পিঠে বেধড়ক মারধর করে। পরে তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে রাতভর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।

পরদিন সকালে তার প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে স্বামীকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে তাকেও হামলার শিকার হতে হয়। হামলাকারীরা তখন দাবি করে এক লাখ টাকা দিলেই স্বামীকে ছেড়ে দেবে। প্রথম স্ত্রী তখন শ্বশুরকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা আসছে শুনে সন্ত্রাসীরা স্বামীকে বাইরে নিয়ে যায় চা খাওয়ানোর কথা বলে।

এই সুযোগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে প্রথম স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার চিৎকারে আশপাশের নারীরা ছুটে এলেও তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

হুমকি মামলা

ধর্ষণের পর হামলাকারীরা ঘটনাটি গোপন রাখতে ভুক্তভোগীদের হুমকি দেয়। এরপর তারা গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেলে স্ত্রী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশি সহায়তা নিয়ে তারা থানায় যান। পুলিশ তাৎক্ষণিক তদন্ত করে মামলা গ্রহণ করে এবং রাতে নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

ভোলা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ভুক্তভোগী নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার চিকিৎসা চলছে।

অভিযুক্তদের পালিয়ে যাওয়া পাল্টা বক্তব্য

ঘটনার পর অভিযুক্তদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন ও আলাউদ্দিন গা ঢাকা দেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে ছাত্রদলের আরেক নেতা রাসেল আহমেদ বলেন, “আমি একসময় ঐ এলাকায় থাকতাম, এখন থাকি না। আরেক রাসেলকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

আরেক আসামি জয়নাল আবেদীন, যিনি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী, তিনিও বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আমি নির্দোষ।”

ওসি মহব্বত খান জানান, “ভুক্তভোগীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

এই ভয়াবহ ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকারকর্মীরা দ্রুত তদন্ত, গ্রেপ্তার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আশঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share