সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইরানি শীর্ষ আলেমের ফতোয়া: ‘আল্লাহর শত্রু’ ঘোষণা, মুসলিম ঐক্যের আহ্বান

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
  • / ৭৮ Time View

6723b1cba641994751cc8d2efa299bc1 68621d5070ef0

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
6723b1cba641994751cc8d2efa299bc1 68621d5070ef0
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু

 

বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ইরানের শীর্ষ  ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজির দেওয়া এক কঠোর ফতোয়া। এই ফতোয়ায় মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। ফতোয়ায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের–এর।

ফতোয়ার মূল বক্তব্য

আয়াতুল্লাহ শিরাজি তার ঘোষণায় বলেন—

“যে ব্যক্তি বা নেতৃত্ব ইসলামী নেতা কিংবা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হুমকি দেয়, তারা ‘মোহারেব’ বা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী হিসেবে গণ্য হবে।”

এই ফতোয়ার মাধ্যমে তিনি সরাসরি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে সেই মোহারেব তালিকায় যুক্ত করেন। ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাতকারী ব্যক্তিদের প্রতিহত করাই এখন সময়ের দাবি।

মোহারেব’ ঘোষণার অর্থ কী?

ইরানি আইন অনুযায়ী, মোহারেব শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, যারা আল্লাহ, ইসলাম বা ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলে কিংবা তাদের হুমকির মুখে ফেলে। এই অপরাধের শাস্তি হতে পারে:

style="text-align: justify;">
  • মৃত্যুদণ্ড
  • অঙ্গচ্ছেদ
  • ক্রুশবিদ্ধকরণ
  • নির্বাসন
  • ফক্স নিউজ বলছে, এই ফতোয়া কেবল একটি ধর্মীয় মতামত নয়—বরং ইরানের মতো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে এটি একটি কার্যকর রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও বিবেচিত।

    বিশ্ব মুসলিমদের প্রতি আহ্বান

    ফতোয়ায় আয়াতুল্লাহ শিরাজি আরও বলেন—

    “ইসলামিক রাষ্ট্রসমূহের পক্ষ থেকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর মতো ইসলামবিরোধী নেতাদের প্রতি কোনো সহযোগিতা বা সমর্থন দেওয়া হারাম। বরং মুসলমানদের উচিত তাদের কথাবার্তা, আচরণ এবং আগ্রাসনের জন্য প্রকাশ্যে অনুতপ্ত করা প্রত্যাখ্যান করা।”

    তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান—বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বৈশ্বিক শক্তিগুলোর আগ্রাসনের মোকাবিলা করে।

    পটভূমি: ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাত

    এই ফতোয়া আসে এমন এক সময়ে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে শত শত মানুষ। গত ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালায়। পরবর্তী ১২ দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে চলেছে পাল্টাপাল্টি হামলা। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংঘাতে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, অভিজ্ঞ কমান্ডার, ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

    এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও এই সময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয় মার্কিন বাহিনীর পক্ষ থেকে। এতে ইরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

    যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তা

    দীর্ঘ সংঘাত শেষে গত ২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল নয় এবং যেকোনো সময় নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে।

    বিশ্লেষণ: ধর্মীয় ফতোয়া নাকি রাজনৈতিক বার্তা?

    আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, আয়াতুল্লাহ শিরাজির এই ফতোয়া কেবল একটি ধর্মীয় অবস্থান নয়; বরং এর মাধ্যমে ইসলামি বিশ্বের রাজনৈতিক আবেগ ও প্রতিরোধ মনোভাবকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টাও রয়েছে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিবেশে এই ধরনের বক্তব্য মুসলিম জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিরোধের মনোভাব আরও বাড়াতে পারে।

    আয়াতুল্লাহ শিরাজির ফতোয়া এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান এবং ইসলামবিরোধী নেতৃত্বকে ‘আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘোষণা মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে—তা বলাই বাহুল্য। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে উঠতে পারে বলেও অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

    পরিস্থিতি এখন একদিকে ধর্মীয় চেতনা, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার দোলাচলে দুলছে—যার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম উভয় বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

     

    শেয়ার করুনঃ
    Pin Share

    Please Share This Post in Your Social Media

    0 0 votes
    Article Rating
    Subscribe
    Notify of
    guest
    0 Comments
    Newest
    Oldest Most Voted
    Inline Feedbacks
    View all comments
    0
    Would love your thoughts, please comment.x
    ()
    x

    ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইরানি শীর্ষ আলেমের ফতোয়া: ‘আল্লাহর শত্রু’ ঘোষণা, মুসলিম ঐক্যের আহ্বান

    Update Time : ১১:৫৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
    শেয়ার করুনঃ
    Pin Share
    6723b1cba641994751cc8d2efa299bc1 68621d5070ef0
    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু

     

    বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে ইরানের শীর্ষ  ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজির দেওয়া এক কঠোর ফতোয়া। এই ফতোয়ায় মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। ফতোয়ায় মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। খবর এনডিটিভি ও ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের–এর।

    ফতোয়ার মূল বক্তব্য

    আয়াতুল্লাহ শিরাজি তার ঘোষণায় বলেন—

    “যে ব্যক্তি বা নেতৃত্ব ইসলামী নেতা কিংবা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হুমকি দেয়, তারা ‘মোহারেব’ বা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী হিসেবে গণ্য হবে।”

    এই ফতোয়ার মাধ্যমে তিনি সরাসরি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে সেই মোহারেব তালিকায় যুক্ত করেন। ফতোয়ায় আরও বলা হয়েছে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাতকারী ব্যক্তিদের প্রতিহত করাই এখন সময়ের দাবি।

    মোহারেব’ ঘোষণার অর্থ কী?

    ইরানি আইন অনুযায়ী, মোহারেব শব্দটি ব্যবহার করা হয় সেইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, যারা আল্লাহ, ইসলাম বা ধর্মীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলে কিংবা তাদের হুমকির মুখে ফেলে। এই অপরাধের শাস্তি হতে পারে:

    style="text-align: justify;">
  • মৃত্যুদণ্ড
  • অঙ্গচ্ছেদ
  • ক্রুশবিদ্ধকরণ
  • নির্বাসন
  • ফক্স নিউজ বলছে, এই ফতোয়া কেবল একটি ধর্মীয় মতামত নয়—বরং ইরানের মতো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে এটি একটি কার্যকর রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও বিবেচিত।

    বিশ্ব মুসলিমদের প্রতি আহ্বান

    ফতোয়ায় আয়াতুল্লাহ শিরাজি আরও বলেন—

    “ইসলামিক রাষ্ট্রসমূহের পক্ষ থেকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর মতো ইসলামবিরোধী নেতাদের প্রতি কোনো সহযোগিতা বা সমর্থন দেওয়া হারাম। বরং মুসলমানদের উচিত তাদের কথাবার্তা, আচরণ এবং আগ্রাসনের জন্য প্রকাশ্যে অনুতপ্ত করা প্রত্যাখ্যান করা।”

    তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান—বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বৈশ্বিক শক্তিগুলোর আগ্রাসনের মোকাবিলা করে।

    পটভূমি: ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাত

    এই ফতোয়া আসে এমন এক সময়ে, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে শত শত মানুষ। গত ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালায়। পরবর্তী ১২ দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে চলেছে পাল্টাপাল্টি হামলা। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংঘাতে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, অভিজ্ঞ কমান্ডার, ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

    এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও এই সময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয় মার্কিন বাহিনীর পক্ষ থেকে। এতে ইরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

    যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তা

    দীর্ঘ সংঘাত শেষে গত ২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল নয় এবং যেকোনো সময় নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে।

    বিশ্লেষণ: ধর্মীয় ফতোয়া নাকি রাজনৈতিক বার্তা?

    আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, আয়াতুল্লাহ শিরাজির এই ফতোয়া কেবল একটি ধর্মীয় অবস্থান নয়; বরং এর মাধ্যমে ইসলামি বিশ্বের রাজনৈতিক আবেগ ও প্রতিরোধ মনোভাবকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টাও রয়েছে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিবেশে এই ধরনের বক্তব্য মুসলিম জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিরোধের মনোভাব আরও বাড়াতে পারে।

    আয়াতুল্লাহ শিরাজির ফতোয়া এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের প্রতি ঐক্যের আহ্বান এবং ইসলামবিরোধী নেতৃত্বকে ‘আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘোষণা মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে—তা বলাই বাহুল্য। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে উঠতে পারে বলেও অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

    পরিস্থিতি এখন একদিকে ধর্মীয় চেতনা, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার দোলাচলে দুলছে—যার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম উভয় বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

     

    শেয়ার করুনঃ
    Pin Share