বিশ্ব গণমাধ্যমে ইরানের শহীদদের ঐতিহাসিক শেষ বিদায়ের প্রতিচ্ছবি: ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতির সাড়া

- Update Time : ০৬:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
- / ৮৮ Time View
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ চক্রান্তে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে শহীদ হওয়া ইরানের ৬০ জন সাহসী যোদ্ধা, সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীর ঐতিহাসিক শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে আয়োজিত এ বিদায় অনুষ্ঠান শুধু একটি জানাজা ছিল না, বরং ছিল একটি জাতির দৃপ্ত অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ, যা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ইরানিদের সাহস, আত্মত্যাগ ও একতা।
বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো এই বিদায় অনুষ্ঠানকে অভূতপূর্ব, বিশাল এবং ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের শহীদদের শেষ বিদায়ের আয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইরানিরা কেবল যে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তা-ই নয়, বরং তারা তাদের শহীদদের রক্তের ঋণও কখনো ভুলে না।”
তুর্কি টিআরটি ওয়ার্ল্ড এই বিদায় অনুষ্ঠানকে “ঐতিহাসিক” বলে আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, এতে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অসংখ্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। টিআরটির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ইরানের জনগণ তাদের শহীদদের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, তা বিশ্ববাসীর চোখে ইরানকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
চ্যানেল ফ্রান্স–২৪ জানায়, ইসরাইলি আগ্রাসনে শহীদদের জানাজা উপলক্ষে তেহরানে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছে, তা ছিল নজিরবিহীন। উপস্থিত ছিলেন আইআরজিসির কমান্ডার জেনারেল সালামি, জেনারেল হাজিজাদেহ, এবং জেনারেল বাকেরির মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা।
সিএনএন, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো শহীদদের জানাজায় হাজার হাজার ইরানির উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিশ্লেষণ করেছে, কীভাবে এই ঘটনা ইরানের জাতীয়তাবাদ ও প্রতিরোধ শক্তিকে জোরালো করেছে।
আরব গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি আরব বিশ্বেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আল জাজিরা অনুষ্ঠানটির কিছু অংশ সরাসরি সম্প্রচার করে এবং বিশেষ বিশ্লেষণে জানায়, ইরানিরা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবল সামরিক নয়, বরং সামাজিকভাবে অভূতপূর্ব ঐক্য প্রদর্শন করেছে।
আল আরাবিয়া এবং অন্যান্য আরব চ্যানেলগুলো এই অনুষ্ঠান এবং ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পাল্টা আঘাত বিশ্লেষণ করেছে।
ইরানিদের প্রতিরোধ ও ইসরাইলের বিপর্যয়
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইল ইরানের সামরিক ও পরমাণু খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এ জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চেয়েছিল।
তবে ফলাফল হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত। ইরানের পাল্টা হামলায় তেলআবিব, হাইফাসহ অধিকৃত ভূখণ্ডে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার বসতি স্থাপনকারী দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইল ভেবেছিল নিরবিচারে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা বিজয় অর্জন করবে, কিন্তু ইরান শুধু যে প্রতিশোধ নিয়েছে তা-ই নয়, বরং প্রমাণ করেছে যে তারা প্রতিটি শহীদের রক্তের মূল্য দিতে জানে।
যুদ্ধবিরতির পেছনের চাপ
শহীদদের শেষ বিদায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার মাত্র একদিন পরই ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়, যা কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, ১২ দিনের টানা পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরান যে প্রতিরোধ শক্তি দেখিয়েছে, তাতে ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বরং এই সময়ে ইরানের অভ্যন্তরীণ ঐক্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলের জন্য।
ইরানের শহীদদের শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান একটি দেশের আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস এবং সাহসিকতার সর্বোচ্চ নিদর্শন। এটা ছিল কেবল একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি প্রতিবাদ, একটি ঘৃণার জবাব এবং একটি জাতির ঐক্যবদ্ধ চিৎকার—‘আমরা শহীদের রক্তের বদলা নিতে জানি।’
বিশ্ব গণমাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, ইরান শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র নয়—বরং এটি প্রতিরোধের প্রতীক। আর শহীদদের প্রতি তাদের এই সম্মান ভবিষ্যতেও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে।
তথ্যসূত্র:
- পার্স টুডে – parstoday.ir
- টিআরটি ওয়ার্ল্ড – trtworld.com
- ফ্রান্স ২৪ – france24.com
- আল জাজিরা – aljazeera.com
- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস – apnews.com
- সিএনএন – cnn.com
Please Share This Post in Your Social Media

বিশ্ব গণমাধ্যমে ইরানের শহীদদের ঐতিহাসিক শেষ বিদায়ের প্রতিচ্ছবি: ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ জাতির সাড়া

ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ চক্রান্তে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে শহীদ হওয়া ইরানের ৬০ জন সাহসী যোদ্ধা, সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীর ঐতিহাসিক শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে আয়োজিত এ বিদায় অনুষ্ঠান শুধু একটি জানাজা ছিল না, বরং ছিল একটি জাতির দৃপ্ত অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ, যা বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ইরানিদের সাহস, আত্মত্যাগ ও একতা।
বিশ্ব গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো এই বিদায় অনুষ্ঠানকে অভূতপূর্ব, বিশাল এবং ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের শহীদদের শেষ বিদায়ের আয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইরানিরা কেবল যে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তা-ই নয়, বরং তারা তাদের শহীদদের রক্তের ঋণও কখনো ভুলে না।”
তুর্কি টিআরটি ওয়ার্ল্ড এই বিদায় অনুষ্ঠানকে “ঐতিহাসিক” বলে আখ্যায়িত করে জানিয়েছে, এতে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অসংখ্য বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। টিআরটির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ইরানের জনগণ তাদের শহীদদের প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছে, তা বিশ্ববাসীর চোখে ইরানকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
চ্যানেল ফ্রান্স–২৪ জানায়, ইসরাইলি আগ্রাসনে শহীদদের জানাজা উপলক্ষে তেহরানে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছে, তা ছিল নজিরবিহীন। উপস্থিত ছিলেন আইআরজিসির কমান্ডার জেনারেল সালামি, জেনারেল হাজিজাদেহ, এবং জেনারেল বাকেরির মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা।
সিএনএন, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো শহীদদের জানাজায় হাজার হাজার ইরানির উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিশ্লেষণ করেছে, কীভাবে এই ঘটনা ইরানের জাতীয়তাবাদ ও প্রতিরোধ শক্তিকে জোরালো করেছে।
আরব গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাটি আরব বিশ্বেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আল জাজিরা অনুষ্ঠানটির কিছু অংশ সরাসরি সম্প্রচার করে এবং বিশেষ বিশ্লেষণে জানায়, ইরানিরা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবল সামরিক নয়, বরং সামাজিকভাবে অভূতপূর্ব ঐক্য প্রদর্শন করেছে।
আল আরাবিয়া এবং অন্যান্য আরব চ্যানেলগুলো এই অনুষ্ঠান এবং ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পাল্টা আঘাত বিশ্লেষণ করেছে।
ইরানিদের প্রতিরোধ ও ইসরাইলের বিপর্যয়
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইল ইরানের সামরিক ও পরমাণু খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এ জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চেয়েছিল।
তবে ফলাফল হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত। ইরানের পাল্টা হামলায় তেলআবিব, হাইফাসহ অধিকৃত ভূখণ্ডে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার বসতি স্থাপনকারী দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইল ভেবেছিল নিরবিচারে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা বিজয় অর্জন করবে, কিন্তু ইরান শুধু যে প্রতিশোধ নিয়েছে তা-ই নয়, বরং প্রমাণ করেছে যে তারা প্রতিটি শহীদের রক্তের মূল্য দিতে জানে।
যুদ্ধবিরতির পেছনের চাপ
শহীদদের শেষ বিদায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার মাত্র একদিন পরই ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়, যা কাকতালীয় নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, ১২ দিনের টানা পাল্টাপাল্টি হামলায় ইরান যে প্রতিরোধ শক্তি দেখিয়েছে, তাতে ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বরং এই সময়ে ইরানের অভ্যন্তরীণ ঐক্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলের জন্য।
ইরানের শহীদদের শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান একটি দেশের আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস এবং সাহসিকতার সর্বোচ্চ নিদর্শন। এটা ছিল কেবল একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি প্রতিবাদ, একটি ঘৃণার জবাব এবং একটি জাতির ঐক্যবদ্ধ চিৎকার—‘আমরা শহীদের রক্তের বদলা নিতে জানি।’
বিশ্ব গণমাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, ইরান শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র নয়—বরং এটি প্রতিরোধের প্রতীক। আর শহীদদের প্রতি তাদের এই সম্মান ভবিষ্যতেও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে।
তথ্যসূত্র:
- পার্স টুডে – parstoday.ir
- টিআরটি ওয়ার্ল্ড – trtworld.com
- ফ্রান্স ২৪ – france24.com
- আল জাজিরা – aljazeera.com
- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস – apnews.com
- সিএনএন – cnn.com