সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

তরুণীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল: পরিবার বলছে এক কথা, ভাইরাল ভিডিও বলছে আরেক

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০২:৫১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
  • / ১০৫ Time View

viral 20250629141139

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

viral 20250629141139

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া একটি বিব্রতকর বেদনাদায়ক ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার হাতপা বাঁধা। হৃদয়বিদারক এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ঘটনার পেছনের সম্পর্ক বিবরণ

জানা গেছে, বাইলাবুনিয়া গ্রামের শাখাওয়াত হোসেনের মেয়ে তন্নী পাশের গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী কামাল গাজী দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। পারিবারিক সম্মতি না থাকলেও তারা ২০ জুন পালিয়ে বিয়ে করেন এবং এরপর তন্নী স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

তবে তন্নীর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ২৮ জুন রাতে তন্নীর বাবা তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন—যাদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ছিলেন বলে দাবি উঠেছে—তন্নীকে জোর করে তুলে নিয়ে যান

ভিডিওর অভ্যন্তরীণ বার্তা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যা দেখা গেছে, তাতে তন্নীর মতামতের কোনো স্থান ছিল না। বরং স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে—যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্মানের ঘোর লঙ্ঘন।

ভিডিওটি শেয়ার করে তন্নীর

স্বামী কামাল গাজী লিখেছেন,

আমার বাড়ি থেকে আমার কলিজা বউকে এভাবে মেরে হাতপা বেঁধে নিয়ে গেছে। দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।

পুলিশ বলছে পারিবারিক, তবু প্রশ্ন থেকেই যায়

রাঙ্গাবালী থানার ওসি এমারত হোসেন বলেন,

ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক। মেয়ের বাবা চাননি তার মেয়ে ছাত্রলীগকর্মী কামালের সঙ্গে থাকুক। স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন উঠছে—কোন আইনের বলে প্রাপ্তবয়স্ক এক নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে হাতপা বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়? যদি এটি সত্যিই পারিবারিক বিষয় হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই পরিবারের হাতে এই ধরনের সহিংসতা করার অধিকার কীভাবে দিল?

আইনি সামাজিক দৃষ্টিকোণ

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার স্বেচ্ছায় পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করলে তা আইনত বৈধ। সে ক্ষেত্রে পরিবার বা অন্য কোনো পক্ষ জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে গেলে তা অপহরণ, হেনস্তা বেআইনি আটক হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এছাড়া সামাজিকভাবে এমন ভিডিওর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও অবমাননা যে বার্তা দেয়, তা সমগ্র সমাজের নারীদের নিরাপত্তা অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে

প্রত্যাশা আহ্বান

এখনও পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকলেও, এই ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য সামাজিক প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট তদন্তের ভিত্তি হতে পারে। প্রশাসনের উচিত এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে কোনো নারী এভাবে নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার না হন

সমাজ হিসেবে আমাদেরও ভাবতে হবে—পারিবারিক সিদ্ধান্তের নামে আমরা কি ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করছি না? সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে জোরালো বার্তা দেওয়া—নারীর সম্মান, স্বাধীনতা আইনসিদ্ধ অধিকার কোনোভাবেই বলপ্রয়োগে দমনযোগ্য নয়।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

তরুণীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল: পরিবার বলছে এক কথা, ভাইরাল ভিডিও বলছে আরেক

Update Time : ০২:৫১:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

viral 20250629141139

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে ঘটে যাওয়া একটি বিব্রতকর বেদনাদায়ক ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ১৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, তার হাতপা বাঁধা। হৃদয়বিদারক এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ঘটনার পেছনের সম্পর্ক বিবরণ

জানা গেছে, বাইলাবুনিয়া গ্রামের শাখাওয়াত হোসেনের মেয়ে তন্নী পাশের গ্রামের ছাত্রলীগকর্মী কামাল গাজী দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। পারিবারিক সম্মতি না থাকলেও তারা ২০ জুন পালিয়ে বিয়ে করেন এবং এরপর তন্নী স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

তবে তন্নীর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। ২৮ জুন রাতে তন্নীর বাবা তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন—যাদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ছিলেন বলে দাবি উঠেছে—তন্নীকে জোর করে তুলে নিয়ে যান

ভিডিওর অভ্যন্তরীণ বার্তা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যা দেখা গেছে, তাতে তন্নীর মতামতের কোনো স্থান ছিল না। বরং স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ অন্যদের হাতে—যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্মানের ঘোর লঙ্ঘন।

ভিডিওটি শেয়ার করে তন্নীর

স্বামী কামাল গাজী লিখেছেন,

আমার বাড়ি থেকে আমার কলিজা বউকে এভাবে মেরে হাতপা বেঁধে নিয়ে গেছে। দেশবাসীর সহযোগিতা চাই।

পুলিশ বলছে পারিবারিক, তবু প্রশ্ন থেকেই যায়

রাঙ্গাবালী থানার ওসি এমারত হোসেন বলেন,

ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক। মেয়ের বাবা চাননি তার মেয়ে ছাত্রলীগকর্মী কামালের সঙ্গে থাকুক। স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে গেছেন।

কিন্তু এখানেই প্রশ্ন উঠছে—কোন আইনের বলে প্রাপ্তবয়স্ক এক নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে হাতপা বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়? যদি এটি সত্যিই পারিবারিক বিষয় হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই পরিবারের হাতে এই ধরনের সহিংসতা করার অধিকার কীভাবে দিল?

আইনি সামাজিক দৃষ্টিকোণ

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তার স্বেচ্ছায় পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করলে তা আইনত বৈধ। সে ক্ষেত্রে পরিবার বা অন্য কোনো পক্ষ জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে গেলে তা অপহরণ, হেনস্তা বেআইনি আটক হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এছাড়া সামাজিকভাবে এমন ভিডিওর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও অবমাননা যে বার্তা দেয়, তা সমগ্র সমাজের নারীদের নিরাপত্তা অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে

প্রত্যাশা আহ্বান

এখনও পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না থাকলেও, এই ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য সামাজিক প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট তদন্তের ভিত্তি হতে পারে। প্রশাসনের উচিত এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে কোনো নারী এভাবে নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার না হন

সমাজ হিসেবে আমাদেরও ভাবতে হবে—পারিবারিক সিদ্ধান্তের নামে আমরা কি ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করছি না? সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত এ বিষয়ে জোরালো বার্তা দেওয়া—নারীর সম্মান, স্বাধীনতা আইনসিদ্ধ অধিকার কোনোভাবেই বলপ্রয়োগে দমনযোগ্য নয়।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share