কুমিল্লায় হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জামায়াত আমিরের কঠোর বার্তা: “যেকোনো মূল্যে অপরাধীদের বিচার চাই”

- Update Time : ১১:৪৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
- / ১০২ Time View
কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার (২৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
“কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন একান্তই লজ্জাজনক ও বর্বরোত্তর ঘটনা। এই লোমহর্ষক ঘটনার মাধ্যমে গোটা সমাজ ব্যবস্থার মানবিক মুখটি কালিমালিপ্ত হয়েছে। এমন দুষ্কৃতিকারীদের খুঁটির জোর যাই থাকুক না কেন, আইনের আওতায় এনে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় সমাজ এক ভয়ঙ্কর জংলি রূপে রূপান্তরিত হবে।”
এই ঘটনার ভয়াবহতা বাড়িয়ে তোলে ধর্ষণের পর নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া। মাত্র ৫১ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া সেই ক্লিপে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক এক নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘিরে ধরে বর্বরভাবে মারধর করছে, নারীটি প্রাণভিক্ষা চাচ্ছে, কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে না। ভিডিওটি ঘৃণা ও ক্ষোভের ঝড় তোলে সামাজিক মাধ্যমে, নানা মহল থেকে নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি ফজর আলী (৩৮)-কে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার ভিডিও যারা ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়—এমন আরও তিনজনকে আগেই আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাতে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী একটি ঘরে একা ছিলেন। সেই সুযোগে একদল যুবক তার ঘরে ঢুকে তাকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়, একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং দলবেঁধে মারধর করে। এসময় একজন ভিডিও ধারণ করে যা পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্ন
ঘটনাটি শুধু একটি নারীর উপর বর্বর যৌন সহিংসতার ঘটনা নয়—এটি একটি সংখ্যালঘু হিন্দু নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ধর্ম, পরিচয়, লিঙ্গ নির্বিশেষে একজন নাগরিক যদি নিজ ঘরেও নিরাপদ না থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও আইনের প্রয়োগ নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ ও সন্দেহ জন্মায়।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা
জামায়াতে ইসলামীর আমির যেভাবে ঘটনাটির নিন্দা করেছেন এবং “খুঁটির জোর” থাকা অপরাধীদেরও ছাড় না দেওয়ার কথা বলেছেন, তা দেশের রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। অপরাধী কে, কোন দলের বা পরিচয়ের, সেটা নয়—প্রধান বিষয় হলো ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া চালানোর দাবি উঠেছে।
রাষ্ট্র ও সমাজের দায়
একজন নারী নির্যাতিত হলেন, ধর্ষিত হলেন, তার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হল—এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তা হয়ে উঠল মানুষের কৌতূহলের বিষয়। কিন্তু এর পেছনে যে মানবিক বিপর্যয়, এক ব্যক্তির জীবনের চরম ট্র্যাজেডি, তা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। রাষ্ট্র যদি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়, তবে সমাজে বার্তা যাবে—এই দেশে কেউ নিরাপদ নয়।
কুমিল্লার এই ঘটনাটি যেন একটি প্রজন্মের চেতনাকে নাড়িয়ে দেয়ার মতো। নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, আইনের শাসন—সব কিছু মিলিয়ে এটি একটি জাতীয় আত্মজিজ্ঞাসার মুহূর্ত। রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজ—সবার উচিত যৌথভাবে কাজ করে নিশ্চিত করা, এমন ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে এবং অপরাধীরা—যে-ই হোক, যতোই ক্ষমতাবান হোক, তার বিচার হোক দ্রুত, কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক।
Please Share This Post in Your Social Media

কুমিল্লায় হিন্দু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জামায়াত আমিরের কঠোর বার্তা: “যেকোনো মূল্যে অপরাধীদের বিচার চাই”

কুমিল্লার মুরাদনগরে এক হিন্দু নারীকে গলায় ছুরি ধরে ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার (২৯ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
“কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন একান্তই লজ্জাজনক ও বর্বরোত্তর ঘটনা। এই লোমহর্ষক ঘটনার মাধ্যমে গোটা সমাজ ব্যবস্থার মানবিক মুখটি কালিমালিপ্ত হয়েছে। এমন দুষ্কৃতিকারীদের খুঁটির জোর যাই থাকুক না কেন, আইনের আওতায় এনে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় সমাজ এক ভয়ঙ্কর জংলি রূপে রূপান্তরিত হবে।”
এই ঘটনার ভয়াবহতা বাড়িয়ে তোলে ধর্ষণের পর নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া। মাত্র ৫১ সেকেন্ডের ভাইরাল হওয়া সেই ক্লিপে দেখা যায়, ১০-১২ জন যুবক এক নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘিরে ধরে বর্বরভাবে মারধর করছে, নারীটি প্রাণভিক্ষা চাচ্ছে, কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে না। ভিডিওটি ঘৃণা ও ক্ষোভের ঝড় তোলে সামাজিক মাধ্যমে, নানা মহল থেকে নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি উঠে আসে।
পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি ফজর আলী (৩৮)-কে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার ভিডিও যারা ধারণ করে ছড়িয়ে দেয়—এমন আরও তিনজনকে আগেই আটক করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাতে, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী একটি ঘরে একা ছিলেন। সেই সুযোগে একদল যুবক তার ঘরে ঢুকে তাকে ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখায়, একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং দলবেঁধে মারধর করে। এসময় একজন ভিডিও ধারণ করে যা পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
মানবাধিকার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্ন
ঘটনাটি শুধু একটি নারীর উপর বর্বর যৌন সহিংসতার ঘটনা নয়—এটি একটি সংখ্যালঘু হিন্দু নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ধর্ম, পরিচয়, লিঙ্গ নির্বিশেষে একজন নাগরিক যদি নিজ ঘরেও নিরাপদ না থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও আইনের প্রয়োগ নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ ও সন্দেহ জন্মায়।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা
জামায়াতে ইসলামীর আমির যেভাবে ঘটনাটির নিন্দা করেছেন এবং “খুঁটির জোর” থাকা অপরাধীদেরও ছাড় না দেওয়ার কথা বলেছেন, তা দেশের রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। অপরাধী কে, কোন দলের বা পরিচয়ের, সেটা নয়—প্রধান বিষয় হলো ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া চালানোর দাবি উঠেছে।
রাষ্ট্র ও সমাজের দায়
একজন নারী নির্যাতিত হলেন, ধর্ষিত হলেন, তার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হল—এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তা হয়ে উঠল মানুষের কৌতূহলের বিষয়। কিন্তু এর পেছনে যে মানবিক বিপর্যয়, এক ব্যক্তির জীবনের চরম ট্র্যাজেডি, তা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। রাষ্ট্র যদি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়, তবে সমাজে বার্তা যাবে—এই দেশে কেউ নিরাপদ নয়।
কুমিল্লার এই ঘটনাটি যেন একটি প্রজন্মের চেতনাকে নাড়িয়ে দেয়ার মতো। নারীর প্রতি সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, আইনের শাসন—সব কিছু মিলিয়ে এটি একটি জাতীয় আত্মজিজ্ঞাসার মুহূর্ত। রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজ—সবার উচিত যৌথভাবে কাজ করে নিশ্চিত করা, এমন ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে এবং অপরাধীরা—যে-ই হোক, যতোই ক্ষমতাবান হোক, তার বিচার হোক দ্রুত, কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক।