সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:১৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / ৩৭৩ Time View

1751118300 8e039daf123555dd14461537f2f44d29

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1751118300 8e039daf123555dd14461537f2f44d29

দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
একীভূতকরণের পথে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক, গ্রাহক সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতা

কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখার পরও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল অঙ্কের মুদ্রা ছাপিয়ে ১২টি আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা দিয়েছে। আজ শনিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে এই সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ২০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সহায়তা মূলত দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলা এবং গ্রাহকের আমানত সুরক্ষার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে। সহায়তার আওতায় ১০টি ব্যাংককে ‘ডিমান্ড লোন’ হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা চাহিদা ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে ৯টি ব্যাংকের জন্য, যা ব্যাংকগুলোর নিত্যদিনের লেনদেন সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)
  • ন্যাশনাল ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
  • এবি ব্যাংক
  • বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল)
  • ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)
  • বেসিক ব্যাংক
  • পদ্মা ব্যাংক

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা পেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়ায় ব্যাংকটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির আওতায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংককে খুব শিগগিরই একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, “এই ব্যাংকগুলোতে ইতোমধ্যে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ‘অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির’ কারণে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যেই এসব ব্যাংক একীভূত হবে বলে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পুনর্গঠনের পর তাদের শেয়ার স্থানান্তর করা হবে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে এটি ব্যাংকিং খাতকে রক্ষার একটি কৌশলিক পদক্ষেপ হলেও, অন্যদিকে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ও তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন টাকা ছাপিয়ে তারল্য সৃষ্টির এই প্রবণতা মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যদি তা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত না হয়।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

Update Time : ১০:১৫:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1751118300 8e039daf123555dd14461537f2f44d29

দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
একীভূতকরণের পথে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক, গ্রাহক সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতা

কঠোর মুদ্রানীতি বজায় রাখার পরও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিপুল অঙ্কের মুদ্রা ছাপিয়ে ১২টি আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা দিয়েছে। আজ শনিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে এই সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ২০০ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সহায়তা মূলত দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মোকাবিলা এবং গ্রাহকের আমানত সুরক্ষার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে। সহায়তার আওতায় ১০টি ব্যাংককে ‘ডিমান্ড লোন’ হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ১৯ হাজার কোটি টাকা চাহিদা ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে ৯টি ব্যাংকের জন্য, যা ব্যাংকগুলোর নিত্যদিনের লেনদেন সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)
  • ন্যাশনাল ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
  • এবি ব্যাংক
  • বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল)
  • ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)
  • বেসিক ব্যাংক
  • পদ্মা ব্যাংক

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা পেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যার পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা পাওয়ায় ব্যাংকটি বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির আওতায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংককে খুব শিগগিরই একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, “এই ব্যাংকগুলোতে ইতোমধ্যে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান ‘অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির’ কারণে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যেই এসব ব্যাংক একীভূত হবে বলে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো সাময়িকভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পুনর্গঠনের পর তাদের শেয়ার স্থানান্তর করা হবে রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে এটি ব্যাংকিং খাতকে রক্ষার একটি কৌশলিক পদক্ষেপ হলেও, অন্যদিকে এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ও তারল্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, নতুন টাকা ছাপিয়ে তারল্য সৃষ্টির এই প্রবণতা মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যদি তা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত না হয়।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য, ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share