সময়: রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়: বিভ্রান্তি ও আইনি জটিলতার নতুন অধ্যায়

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০২:৪৫:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / ১০০ Time View

image 200312 1751092654

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

image 200312 1751092654

 

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত রায় দিয়েছে, যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বিষয়ক দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদিও আদালত সরাসরি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করেনি কিংবা এ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি, তবে রায়ের ভাষ্য এবং তার প্রয়োগব্যবস্থাকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সতর্কতা উচ্চারণ করেছে।

রায়ের সারমর্ম

শুক্রবার, ২৭ জুন, এক ভোটের অল্প ব্যবধানে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ভবিষ্যতে আর সারাদেশব্যাপী কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো একটি মামলার রায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট পক্ষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে; সেটি পুরো দেশজুড়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে না।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পটভূমি

এই রায়ের পটভূমিতে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে প্রণীত এক বিতর্কিত নীতি, যার আওতায় নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও শিশুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে (14th Amendment) বলা হয়েছে, “যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেবে এবং এখানকার আইনগত অধীন থাকবে, সে মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে”—তবু সাম্প্রতিক এই রায়ের ফলে সে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা কার্যত রাজ্যভেদে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন বাস্তবতা

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে। তবে বাকি ২৮টি রাজ্যে এই অধিকার এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর মানে—একটি রাজ্যে জন্মানো শিশু হয়তো নাগরিকত্ব পাবে, কিন্তু অন্য রাজ্যে একই পরিস্থিতিতে জন্মেও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ফেডারেল কাঠামোর দেশে আইনগত ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

বিচারকদের প্রতিক্রিয়া

রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের লিবারাল বিচারপতিরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,

“এই রায় ভবিষ্যতে বিচার বিভাগের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মতো মৌলিক অধিকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।”

এমন মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় আইনব্যবস্থায় অস্পষ্টতা এবং দ্বৈত মানদণ্ড সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা

আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় সরাসরি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল না করলেও, এটি আইনি লড়াইকে বহুগুণ কঠিন করে তুলেছে। এর আগে একটি মামলার রায়ের পর তা পুরো দেশেই প্রযোজ্য হতো, কিন্তু এখন থেকে প্রতিটি রাজ্যে আলাদাভাবে মামলা করতে হবে, আলাদা রায় পেতে হবে। এতে সময়, অর্থ এবং রাজনৈতিক চাপ—সবই বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা আরও আশঙ্কা করছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা এখন থেকে রাজ্যভেদে ব্যাখ্যা করা শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার ও অভিবাসন নীতিতে একটি বড় সংকট দেখা দেবে। এতে শুধু অভিবাসী পরিবার নয়, বরং দেশের দীর্ঘস্থায়ী আইনি ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সাম্প্রতিক রায় যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি নতুন দ্বিধার দ্বার খুলে দিয়েছে। যদিও সংবিধান এখনো এ অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু এই রায়ের পর তা আর সর্বজনীন নয়—বরং রাজ্যভেদে পরিবর্তনশীল হয়ে উঠতে পারে। এতে করে নাগরিকত্ব প্রশ্নে সমতা ও সুবিচারের নীতিতে এক ধরণের ফাটল তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী এবং গবেষকরা। ভবিষ্যতে এই ইস্যু আরও জটিল এবং রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠবে, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়: বিভ্রান্তি ও আইনি জটিলতার নতুন অধ্যায়

Update Time : ০২:৪৫:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

image 200312 1751092654

 

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত রায় দিয়েছে, যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বিষয়ক দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যদিও আদালত সরাসরি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করেনি কিংবা এ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি, তবে রায়ের ভাষ্য এবং তার প্রয়োগব্যবস্থাকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সতর্কতা উচ্চারণ করেছে।

রায়ের সারমর্ম

শুক্রবার, ২৭ জুন, এক ভোটের অল্প ব্যবধানে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ভবিষ্যতে আর সারাদেশব্যাপী কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে না। অর্থাৎ, কোনো একটি মামলার রায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট পক্ষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে; সেটি পুরো দেশজুড়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে না।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির পটভূমি

এই রায়ের পটভূমিতে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে প্রণীত এক বিতর্কিত নীতি, যার আওতায় নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেও শিশুরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে (14th Amendment) বলা হয়েছে, “যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেবে এবং এখানকার আইনগত অধীন থাকবে, সে মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে”—তবু সাম্প্রতিক এই রায়ের ফলে সে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা কার্যত রাজ্যভেদে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন বাস্তবতা

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২২টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে। তবে বাকি ২৮টি রাজ্যে এই অধিকার এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর মানে—একটি রাজ্যে জন্মানো শিশু হয়তো নাগরিকত্ব পাবে, কিন্তু অন্য রাজ্যে একই পরিস্থিতিতে জন্মেও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ফেডারেল কাঠামোর দেশে আইনগত ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

বিচারকদের প্রতিক্রিয়া

রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের লিবারাল বিচারপতিরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,

“এই রায় ভবিষ্যতে বিচার বিভাগের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মতো মৌলিক অধিকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।”

এমন মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় আইনব্যবস্থায় অস্পষ্টতা এবং দ্বৈত মানদণ্ড সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা

আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় সরাসরি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল না করলেও, এটি আইনি লড়াইকে বহুগুণ কঠিন করে তুলেছে। এর আগে একটি মামলার রায়ের পর তা পুরো দেশেই প্রযোজ্য হতো, কিন্তু এখন থেকে প্রতিটি রাজ্যে আলাদাভাবে মামলা করতে হবে, আলাদা রায় পেতে হবে। এতে সময়, অর্থ এবং রাজনৈতিক চাপ—সবই বাড়বে।

বিশেষজ্ঞরা আরও আশঙ্কা করছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা এখন থেকে রাজ্যভেদে ব্যাখ্যা করা শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার ও অভিবাসন নীতিতে একটি বড় সংকট দেখা দেবে। এতে শুধু অভিবাসী পরিবার নয়, বরং দেশের দীর্ঘস্থায়ী আইনি ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই সাম্প্রতিক রায় যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি নতুন দ্বিধার দ্বার খুলে দিয়েছে। যদিও সংবিধান এখনো এ অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু এই রায়ের পর তা আর সর্বজনীন নয়—বরং রাজ্যভেদে পরিবর্তনশীল হয়ে উঠতে পারে। এতে করে নাগরিকত্ব প্রশ্নে সমতা ও সুবিচারের নীতিতে এক ধরণের ফাটল তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী এবং গবেষকরা। ভবিষ্যতে এই ইস্যু আরও জটিল এবং রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠবে, তা নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share