ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের

- Update Time : ০৩:৪৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
- / ৭৯ Time View
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক এক সেমিনারে দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার—এর সাংবাদিকতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই দুই পত্রিকার প্রতিবেদনে পক্ষপাত ও অপসাংবাদিকতার অভিযোগ এনে বলেন, “গণমাধ্যম যদি একচোখা হয়, তাহলে তাদের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে কীভাবে?”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. নজরুল বলেন, “১৩-১৪ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় ছাত্রদল তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। অথচ ডেইলি স্টার তাঁকে ‘ন্যাশনাল হিরো’ বানিয়ে ফেলে, এমনকি তাঁকে ‘লেকচারার’ না লিখে ‘প্রফেসর’ বলেও উল্লেখ করে। প্রতিদিন তাঁর বক্তব্য ছাপানো হতো। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে, তখন সেই সংবাদ আর প্রকাশ পায়নি।”
প্রথম আলো নিয়েও সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি নিজে প্রথম আলোতে লিখি। অথচ ওখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপিপন্থী বলা হয়। কিন্তু আনিসুজ্জামান বা মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে তাঁদের আওয়ামী লীগপন্থী বলা হয় না। এটা কী ধরনের সাংবাদিকতা? এভাবে চললে গণমাধ্যমের ওপর মানুষের বিশ্বাস থাকবে না।”
তিনি বলেন, সাংবাদিকতার একটি নৈতিকতা, আচরণবিধি ও দায়িত্ববোধ থাকে। পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করলে সাধারণ মানুষের কাছে সেই সাংবাদিকতা আর বিশ্বাসযোগ্য থাকে না।
এক পর্যায়ে তিনি আরো জানান, উল্লিখিত লেকচারার পরবর্তীতে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেন, যা এক অপসাংবাদিকতার পরিণতির নির্মম উদাহরণ।
‘সরকারে এসে নিজেকে অবরুদ্ধ মনে করছি’
সরকারে অংশগ্রহণের পর নিজের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “সরকারে আসার পর থেকে নিজেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি অসহায় ও অবরুদ্ধ মনে হচ্ছে। নানা রকম তদবির আমার কাছে আসে। আমি যখন সেগুলো গ্রহণ করি না, তখন গালি খেতে হয়। কেউ আমাকে ভারতের দালাল বলে, কেউ আবার নানা মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়। অথচ এসবের জবাব দেওয়ার সুযোগও আমার নেই।”
তিনি বলেন, “আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেক অসত্য মামলার বিষয় সামনে আসে। তবে এসব বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। বিচারকরা তাঁদের নিজস্ব বিবেচনায় জামিন দেন কিংবা না দেন। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে না।”
সাংবাদিক দম্পতি শাকিল ও ফারজানা রুপার জামিন না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কে জামিন পাবেন আর কে পাবেন না, তা নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র বিচারকদের। তাঁরা কেন জামিন দেননি, সেটাও তাঁরাই ব্যাখ্যা করতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পুলিশ যদি কোনো মিথ্যা মামলা দায়ের করে, সেটি আইন উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর পক্ষে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। আদালত অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলা বাতিলের এখতিয়ার রাখে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মিথ্যা মামলা এখন দেশের সাধারণ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ নাগরিকও এমন মামলার শিকার হচ্ছেন। এক শ্রেণির মানুষ ও আইনজীবী এসব মিথ্যা মামলা ঠেকাতে বড় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেশের গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারের ভিতরের চাপে থাকা অবস্থান—উভয়দিকের একটি বাস্তব ও বেদনাদায়ক চিত্র তুলে ধরেন।
Please Share This Post in Your Social Media

ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক এক সেমিনারে দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা—প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার—এর সাংবাদিকতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই দুই পত্রিকার প্রতিবেদনে পক্ষপাত ও অপসাংবাদিকতার অভিযোগ এনে বলেন, “গণমাধ্যম যদি একচোখা হয়, তাহলে তাদের ওপর জনগণের আস্থা থাকবে কীভাবে?”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির আইনি কাঠামোর পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. নজরুল বলেন, “১৩-১৪ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করায় ছাত্রদল তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। অথচ ডেইলি স্টার তাঁকে ‘ন্যাশনাল হিরো’ বানিয়ে ফেলে, এমনকি তাঁকে ‘লেকচারার’ না লিখে ‘প্রফেসর’ বলেও উল্লেখ করে। প্রতিদিন তাঁর বক্তব্য ছাপানো হতো। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে, তখন সেই সংবাদ আর প্রকাশ পায়নি।”
প্রথম আলো নিয়েও সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি নিজে প্রথম আলোতে লিখি। অথচ ওখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপিপন্থী বলা হয়। কিন্তু আনিসুজ্জামান বা মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে তাঁদের আওয়ামী লীগপন্থী বলা হয় না। এটা কী ধরনের সাংবাদিকতা? এভাবে চললে গণমাধ্যমের ওপর মানুষের বিশ্বাস থাকবে না।”
তিনি বলেন, সাংবাদিকতার একটি নৈতিকতা, আচরণবিধি ও দায়িত্ববোধ থাকে। পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশ করলে সাধারণ মানুষের কাছে সেই সাংবাদিকতা আর বিশ্বাসযোগ্য থাকে না।
এক পর্যায়ে তিনি আরো জানান, উল্লিখিত লেকচারার পরবর্তীতে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেন, যা এক অপসাংবাদিকতার পরিণতির নির্মম উদাহরণ।
‘সরকারে এসে নিজেকে অবরুদ্ধ মনে করছি’
সরকারে অংশগ্রহণের পর নিজের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “সরকারে আসার পর থেকে নিজেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি অসহায় ও অবরুদ্ধ মনে হচ্ছে। নানা রকম তদবির আমার কাছে আসে। আমি যখন সেগুলো গ্রহণ করি না, তখন গালি খেতে হয়। কেউ আমাকে ভারতের দালাল বলে, কেউ আবার নানা মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়। অথচ এসবের জবাব দেওয়ার সুযোগও আমার নেই।”
তিনি বলেন, “আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অনেক অসত্য মামলার বিষয় সামনে আসে। তবে এসব বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। বিচারকরা তাঁদের নিজস্ব বিবেচনায় জামিন দেন কিংবা না দেন। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে না।”
সাংবাদিক দম্পতি শাকিল ও ফারজানা রুপার জামিন না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কে জামিন পাবেন আর কে পাবেন না, তা নির্ধারণের ক্ষমতা একমাত্র বিচারকদের। তাঁরা কেন জামিন দেননি, সেটাও তাঁরাই ব্যাখ্যা করতে পারবেন।”
তিনি আরও জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দায়েরকৃত অধিকাংশ মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পুলিশ যদি কোনো মিথ্যা মামলা দায়ের করে, সেটি আইন উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর পক্ষে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। আদালত অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলা বাতিলের এখতিয়ার রাখে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “মিথ্যা মামলা এখন দেশের সাধারণ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ নাগরিকও এমন মামলার শিকার হচ্ছেন। এক শ্রেণির মানুষ ও আইনজীবী এসব মিথ্যা মামলা ঠেকাতে বড় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেশের গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি ও সরকারের ভিতরের চাপে থাকা অবস্থান—উভয়দিকের একটি বাস্তব ও বেদনাদায়ক চিত্র তুলে ধরেন।