অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টার পিএস ও এপিএস-দের দুর্নীতির অভিযোগ: একটি জাতির প্রত্যাশার বিপরীত চিত্র

- Update Time : ০৬:৩৩:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
- / ১২০ Time View
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে। এ সময় জাতি আশা করে একটি নিরপেক্ষ, সুশাসননির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো, যা আগামী দিনের জন্য একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করবে। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে—যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) এবং সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস)-দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে—তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।
এই অভিযোগ শুধু একটি সরকারের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সমগ্র জাতির আশা ও আস্থার উপর একটি বড় আঘাত হানে। যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তখন সেটির প্রতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ দৃষ্টিপাত থাকে। কারণ, এই সরকার ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও সহনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে। কিন্তু যদি এই সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন, তবে তা এই অঙ্গীকারের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা ইতোমধ্যেই দুর্নীতি, দলীয়করণ ও প্রশাসনিক পক্ষপাতদুষ্টতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করেছি। তাই একটি অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে দলনিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার প্রতীক হওয়ার কথা, সেখানে এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এক ভয়ানক বার্তা বহন করে।
একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের দাবি
যদি তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয় যে কোনো উপদেষ্টা, পিএস কিংবা এপিএস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করা উচিত। কারণ এই সময়ের সরকার একটি ‘ফ্যাক্ট-টেন্যুর’ বা নির্ধারিত সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন, যার প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে সকল পক্ষের আস্থা নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
এই ধরনের ট্রাইব্যুনাল যেন দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারে, যেন অপরাধীরা আইন থেকে পালিয়ে যেতে না পারে এবং ভবিষ্যতে কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগকে অপব্যবহার করতে না পারে। এখানে বিচার বিলম্ব মানেই জাতিকে বিভ্রান্ত করা ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
একটি আদর্শিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সময়
এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের প্রতি জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রভাবমুক্ত থেকে, নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করেন—এটাই সকলের প্রত্যাশা। দুর্নীতি, সুবিধাবাদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এই সময়ের জন্য ঘোরতর অপরাধ, যা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতাই নয়, বরং একটি নৈতিক বিপর্যয়ের দিকেও ইঙ্গিত করে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
এই সরকার যেমন দেশের জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উন্নত রাষ্ট্রগুলো ও কূটনৈতিক মহল পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা না থাকলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সংকটে পড়বে এবং উন্নয়ন সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সুতরাং, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে দুর্নীতির অভিযোগ কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এ সময়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি নিয়োগ এবং প্রতিটি কাজ হতে হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। সরকার যদি নিজেই স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তা জাতির আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একটি আশাব্যঞ্জক বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি শক্তিশালী, নৈতিক ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন—যে প্রশাসন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আইনের শাসন ও জনআস্থার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে। এখন সময় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার—কোন পথে এগোবো আমরা? দায়িত্বহীনতা, নাকি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা?
সংক্ষিপ্ত বার্তা:
একজন উপদেষ্টা, একজন পিএস, কিংবা একজন এপিএসের দুর্নীতি পুরো সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে পারে। যদি প্রমাণ হয়, তাদের বিচার হতে হবে কঠোরভাবে, যেন ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত হয়ে থাকে।
Please Share This Post in Your Social Media

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টার পিএস ও এপিএস-দের দুর্নীতির অভিযোগ: একটি জাতির প্রত্যাশার বিপরীত চিত্র

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অবস্থানে রয়েছে। এ সময় জাতি আশা করে একটি নিরপেক্ষ, সুশাসননির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো, যা আগামী দিনের জন্য একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করবে। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে—যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) এবং সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস)-দের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে—তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।
এই অভিযোগ শুধু একটি সরকারের নৈতিক ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সমগ্র জাতির আশা ও আস্থার উপর একটি বড় আঘাত হানে। যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, তখন সেটির প্রতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ দৃষ্টিপাত থাকে। কারণ, এই সরকার ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও সহনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে। কিন্তু যদি এই সরকারের ঘনিষ্ঠজনেরা দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন, তবে তা এই অঙ্গীকারের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা ইতোমধ্যেই দুর্নীতি, দলীয়করণ ও প্রশাসনিক পক্ষপাতদুষ্টতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করেছি। তাই একটি অন্তর্বর্তী সরকার যেখানে দলনিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার প্রতীক হওয়ার কথা, সেখানে এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ এক ভয়ানক বার্তা বহন করে।
একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের দাবি
যদি তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয় যে কোনো উপদেষ্টা, পিএস কিংবা এপিএস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করা উচিত। কারণ এই সময়ের সরকার একটি ‘ফ্যাক্ট-টেন্যুর’ বা নির্ধারিত সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন, যার প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে সকল পক্ষের আস্থা নিশ্চিত করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।
এই ধরনের ট্রাইব্যুনাল যেন দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারে, যেন অপরাধীরা আইন থেকে পালিয়ে যেতে না পারে এবং ভবিষ্যতে কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগকে অপব্যবহার করতে না পারে। এখানে বিচার বিলম্ব মানেই জাতিকে বিভ্রান্ত করা ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
একটি আদর্শিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠার সময়
এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের প্রতি জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রভাবমুক্ত থেকে, নিঃস্বার্থভাবে দেশের সেবা করেন—এটাই সকলের প্রত্যাশা। দুর্নীতি, সুবিধাবাদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার এই সময়ের জন্য ঘোরতর অপরাধ, যা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতাই নয়, বরং একটি নৈতিক বিপর্যয়ের দিকেও ইঙ্গিত করে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
এই সরকার যেমন দেশের জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উন্নত রাষ্ট্রগুলো ও কূটনৈতিক মহল পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা না থাকলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সংকটে পড়বে এবং উন্নয়ন সহযোগিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সুতরাং, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে দুর্নীতির অভিযোগ কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এ সময়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি নিয়োগ এবং প্রতিটি কাজ হতে হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। সরকার যদি নিজেই স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তা জাতির আস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একটি আশাব্যঞ্জক বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন একটি শক্তিশালী, নৈতিক ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন—যে প্রশাসন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আইনের শাসন ও জনআস্থার মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে। এখন সময় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার—কোন পথে এগোবো আমরা? দায়িত্বহীনতা, নাকি দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা?
সংক্ষিপ্ত বার্তা:
একজন উপদেষ্টা, একজন পিএস, কিংবা একজন এপিএসের দুর্নীতি পুরো সরকারের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে পারে। যদি প্রমাণ হয়, তাদের বিচার হতে হবে কঠোরভাবে, যেন ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত হয়ে থাকে।