করলার বীজ খেলে কী ক্ষতি হতে পারে? সতর্ক থাকুন এই তেতো সবজির একটি অংশ নিয়ে

- Update Time : ১২:০৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / ১২৮ Time View
করলা, এক অতি পরিচিত এবং তেতো স্বাদের সবজি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ব্যাপকভাবে প্রমাণিত। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বাড়ানো, চর্বি কমানো—এই সব কিছুতেই করলার কার্যকারিতা রয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, এই উপকারি সবজিটির বীজ খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যেসব ব্যক্তি করলার বীজ রান্নার সময় ফেলে না দিয়ে খেয়ে ফেলেন।
আমাদের দেশে করলা সাধারণত ভাজি, ভর্তা বা তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কুচি করার সময় বীজগুলোও অনেক সময় সবজির সঙ্গে থেকেই যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, করলার বীজে থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপাদান অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, করলার বীজ খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী:
হজমে সমস্যা ও পরিপাকতন্ত্রের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
করলার বীজে রয়েছে লেকটিন (Lectin) নামক একধরনের প্রোটিন, যা শরীরের জন্য সব সময় উপকারী নয়। এই প্রোটিন সাধারণত উদ্ভিদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করে থাকে। যখন করলার বীজ সরাসরি পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তখন অতিরিক্ত পরিমাণে লেকটিন হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হলো:
- পেটব্যথা বা ক্র্যাম্প
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
- বমি বমি ভাব বা বমি
- গ্যাস বা পেট ফাঁপা
এই লক্ষণগুলো সাধারণত করলার বীজ অনেক বেশি খেলে তীব্রভাবে দেখা দেয়। অতএব, যারা আগে থেকেই হজমে সমস্যা অনুভব করেন, তাদের করলার বীজ এড়িয়ে চলা উচিত।
অ্যালার্জি এবং সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া
করলার বীজে ভিসিন (Vicine) নামের এক উপাদান রয়েছে, যা কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের পূর্বে খাবারের অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, তারা করলার বীজ খেলে কিছু গুরুতর উপসর্গের মুখোমুখি হতে পারেন।
প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে:
- ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি
- চোখ ও মুখে ফোলাভাব
- শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন হাঁচি
- হঠাৎ করে রক্তচাপ হ্রাস বা অ্যানাফাইল্যাকটিক শক (চরম ক্ষেত্রে)
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি খাবার খুব সচেতনভাবে গ্রহণ করা জরুরি। করলার বীজ গর্ভবতী নারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বলে বিবেচিত। করলার বীজে কিছু প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। এতে সময়ের আগেই গর্ভপাত, রক্তপাত অথবা প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- গর্ভাবস্থায় করলা খেতে হলে বীজ সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রান্না করুন।
- যাদের অতীতে গর্ভপাত বা প্রেগন্যান্সি জটিলতা ছিল, তারা করলা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
ওষুধের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে
যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড বা হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের জন্য করলার বীজ ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। করলার স্বাভাবিকভাবেই রক্তে গ্লুকোজ কমায়। কিন্তু করলার বীজ খেলে শরীরে এই প্রভাব অতিরিক্ত হতে পারে, ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক হ্রাস) হতে পারে।
বিশেষ ঝুঁকিতে যারা:
- ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন বা ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি
- যাদের শরীরে ইতিমধ্যেই শর্করার মাত্রা কমে যায়
- শিশু বা দুর্বল রোগী যারা নিয়মিত ওষুধে নির্ভরশীল
এছাড়াও, করলার বীজ কিছু হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়।
কী করবেন? স্বাস্থ্যকর উপায়ে করলা খাওয়ার টিপস
- করলা কাটার সময় বীজগুলো আলাদা করে ফেলুন।
- বেশি পরিমাণ তেতো খাওয়া এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে শিশুরা যেন সরাসরি করলার বীজ না খায়।
- গর্ভবতী বা ওষুধসেবনকারী ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করলা খাওয়ার আগে ভাবুন।
- করলার উপকারিতা পেতে হলে পরিমাণ বুঝে নিয়মিত খান, কিন্তু কখনোই বীজসহ নয়।
করলা উপকারী, কিন্তু সতর্কতা জরুরি
করলা undoubtedly স্বাস্থ্যকর ও উপকারী সবজি। তবে যেভাবে ঔষধের একটি মাত্রা নির্ধারিত থাকে, তেমনি করলার উপকারিতা পেতে হলে এর ব্যবহারে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। করলার বীজ একটি ছোট উপাদান হলেও এর প্রভাব হতে পারে বৃহৎ, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে। তাই করলা রান্না বা খাওয়ার আগে অবশ্যই বীজ ফেলে দেওয়া উচিত।
Please Share This Post in Your Social Media

করলার বীজ খেলে কী ক্ষতি হতে পারে? সতর্ক থাকুন এই তেতো সবজির একটি অংশ নিয়ে

করলা, এক অতি পরিচিত এবং তেতো স্বাদের সবজি হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ব্যাপকভাবে প্রমাণিত। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বাড়ানো, চর্বি কমানো—এই সব কিছুতেই করলার কার্যকারিতা রয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, এই উপকারি সবজিটির বীজ খেলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যেসব ব্যক্তি করলার বীজ রান্নার সময় ফেলে না দিয়ে খেয়ে ফেলেন।
আমাদের দেশে করলা সাধারণত ভাজি, ভর্তা বা তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কুচি করার সময় বীজগুলোও অনেক সময় সবজির সঙ্গে থেকেই যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, করলার বীজে থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপাদান অতিরিক্ত খাওয়া হলে তা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, করলার বীজ খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী:
হজমে সমস্যা ও পরিপাকতন্ত্রের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
করলার বীজে রয়েছে লেকটিন (Lectin) নামক একধরনের প্রোটিন, যা শরীরের জন্য সব সময় উপকারী নয়। এই প্রোটিন সাধারণত উদ্ভিদ নিজেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করে থাকে। যখন করলার বীজ সরাসরি পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তখন অতিরিক্ত পরিমাণে লেকটিন হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হলো:
- পেটব্যথা বা ক্র্যাম্প
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
- বমি বমি ভাব বা বমি
- গ্যাস বা পেট ফাঁপা
এই লক্ষণগুলো সাধারণত করলার বীজ অনেক বেশি খেলে তীব্রভাবে দেখা দেয়। অতএব, যারা আগে থেকেই হজমে সমস্যা অনুভব করেন, তাদের করলার বীজ এড়িয়ে চলা উচিত।
অ্যালার্জি এবং সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া
করলার বীজে ভিসিন (Vicine) নামের এক উপাদান রয়েছে, যা কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের পূর্বে খাবারের অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে, তারা করলার বীজ খেলে কিছু গুরুতর উপসর্গের মুখোমুখি হতে পারেন।
প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে:
- ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি
- চোখ ও মুখে ফোলাভাব
- শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন হাঁচি
- হঠাৎ করে রক্তচাপ হ্রাস বা অ্যানাফাইল্যাকটিক শক (চরম ক্ষেত্রে)
এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি খাবার খুব সচেতনভাবে গ্রহণ করা জরুরি। করলার বীজ গর্ভবতী নারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বলে বিবেচিত। করলার বীজে কিছু প্রাকৃতিক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। এতে সময়ের আগেই গর্ভপাত, রক্তপাত অথবা প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- গর্ভাবস্থায় করলা খেতে হলে বীজ সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে রান্না করুন।
- যাদের অতীতে গর্ভপাত বা প্রেগন্যান্সি জটিলতা ছিল, তারা করলা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
ওষুধের কার্যকারিতা ব্যাহত হতে পারে
যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, থাইরয়েড বা হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছেন, তাদের জন্য করলার বীজ ওষুধের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। করলার স্বাভাবিকভাবেই রক্তে গ্লুকোজ কমায়। কিন্তু করলার বীজ খেলে শরীরে এই প্রভাব অতিরিক্ত হতে পারে, ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক হ্রাস) হতে পারে।
বিশেষ ঝুঁকিতে যারা:
- ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন বা ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি
- যাদের শরীরে ইতিমধ্যেই শর্করার মাত্রা কমে যায়
- শিশু বা দুর্বল রোগী যারা নিয়মিত ওষুধে নির্ভরশীল
এছাড়াও, করলার বীজ কিছু হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়।
কী করবেন? স্বাস্থ্যকর উপায়ে করলা খাওয়ার টিপস
- করলা কাটার সময় বীজগুলো আলাদা করে ফেলুন।
- বেশি পরিমাণ তেতো খাওয়া এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে শিশুরা যেন সরাসরি করলার বীজ না খায়।
- গর্ভবতী বা ওষুধসেবনকারী ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করলা খাওয়ার আগে ভাবুন।
- করলার উপকারিতা পেতে হলে পরিমাণ বুঝে নিয়মিত খান, কিন্তু কখনোই বীজসহ নয়।
করলা উপকারী, কিন্তু সতর্কতা জরুরি
করলা undoubtedly স্বাস্থ্যকর ও উপকারী সবজি। তবে যেভাবে ঔষধের একটি মাত্রা নির্ধারিত থাকে, তেমনি করলার উপকারিতা পেতে হলে এর ব্যবহারে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। করলার বীজ একটি ছোট উপাদান হলেও এর প্রভাব হতে পারে বৃহৎ, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে। তাই করলা রান্না বা খাওয়ার আগে অবশ্যই বীজ ফেলে দেওয়া উচিত।