মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার পর রুদ্ধশ্বাস মধ্যরাতে যা যা ঘটলো

- Update Time : ১১:২২:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- / ১২৩ Time View
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনার আবহে সোমবার রাতের দিকে এক নাটকীয় মোড় নেয় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্থিরতা। ভোররাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ, প্রতিক্রিয়ামূলক সামরিক প্রস্তুতি, রাষ্ট্রীয় বার্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি চলতে থাকে শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে। এই টানটান উত্তেজনার মধ্যেই হঠাৎই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যদিও এই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
যুদ্ধের সূত্রপাত: পারমাণবিক ইস্যু ও আঘাতের পাল্টা আঘাত
এই সংঘাতের শুরু হয়েছিল ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আকস্মিক হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা, যেটি তারা মনে করে দ্রুত বোমা তৈরির পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, ইরান যদি এই কর্মসূচি শেষ করতে পারে, তবে এটি শুধু ইসরায়েল নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
ইরান এই হামলার জবাবে ‘ট্রু প্রমিস’ নামে পাল্টা অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে শত শত রকেট, ক্রুজ মিসাইল এবং সশস্ত্র ড্রোন ছোড়ে। এ সময় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এতে অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানি এবং বহু সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও কাতারে ইরানি প্রতিক্রিয়া
সোমবার (২৩ জুন) রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এসব স্থাপনাকে “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করা হয়েছে। এই হামলাকে ইরানের জন্য ‘গভীর বার্তা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর জবাবে রাতেই ইরান কাতারের ‘আল উদেইদ’ মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। উল্লেখ্য, এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি, যেখানে মার্কিন সেন্টকম (সেন্ট্রাল কমান্ড)-এর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কাতার সরকার জানায়, আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কোনো হতাহত হয়নি। দোহার আকাশে একাধিক বিকট বিস্ফোরণ এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আলোয় ভরে যায় রাতের অন্ধকার।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা: শান্তির আশা, নাকি কৌশল?
ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি একে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করে জানান, ছয় ঘণ্টার মধ্যে উভয় পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে যাবে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারতো, কিন্তু আমরা একে থামিয়ে দিয়েছি।”
ট্রাম্প আরও বলেন, এই সংঘাত এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারত। তার মতে, এই চুক্তির ফলে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে তিনি ইরান ও ইসরায়েল উভয়কে শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
সন্দেহ ও প্রতিক্রিয়া: ইরানের সন্দেহ, মিডিয়ার দ্বিধা
যদিও ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা যায়, ইরানের পক্ষ থেকে তৎক্ষণাৎ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি পরে জানান, “ভোর চারটার পর যদি ইসরায়েল আর কোনো আগ্রাসন না চালায়, তবে ইরানও প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।” তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তাদের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তবে এ বক্তব্য আসার আগ পর্যন্ত ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। ফার্স নিউজ এজেন্সি, যেটি ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডসের ঘনিষ্ঠ, জানায়—এটি একটি “মিথ্যা প্রচারণা”, এবং “ইরান কোনো আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি”। এমনকি তারা দাবি করে, এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে ইরানের হামলায় নিজেদের অপমান ঢাকতে।
শান্তির বার্তা: কাতারের মধ্যস্থতা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং আল-জাজিরার সূত্রে জানা যায়, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি একাধিকবার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। কাতার ইতিপূর্বে আফগান তালেবান-মার্কিন আলোচনা এবং হামাস-ইসরায়েল আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। এবারও তারা তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির খসড়া প্রস্তাব দেয়। যদিও এটি কতটা কার্যকর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের বার্তা ও প্রতিক্রিয়া
যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলও কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও, পরবর্তীতে জানা যায় তারা আরব প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে যে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। কারণ, ১১ দিনের সংঘাতে ইরানের শতাধিক রকেট ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এই বাস্তবতা ইসরায়েলকে শান্তি আলোচনার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির নাটকীয় মোড়
ওয়াশিংটন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি ধারাবাহিকতার বদলে পরিস্থিতিনির্ভর। যেখানে তিনি একদিন ইরানে ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন’ দাবি করেন, পরদিন আবার শান্তির বার্তা দেন। বিশ্লেষক বার্ন্ড ডেবসামেন জুনিয়র বলেন, “ট্রাম্পের কৌশল দ্রুত পাল্টে ফেলা এবং তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে বেশি মনোযোগী। এ কারণেই পররাষ্ট্রনীতিতে তার বক্তব্যে ধারাবাহিকতা অনুপস্থিত।”
সামনে কী?
এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ও কৌতূহল বিরাজ করছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পরও যদি ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালায় কিংবা ইরান পাল্টা জবাব দেয়, তবে এই সংঘাত আরও ভয়াবহ মোড় নিতে পারে। অন্যদিকে, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক উদ্যোগ সফল হলে হয়তো এই উত্তেজনা কিছুটা কমে আসবে।
তবে এই ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল, একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ আর নিছক সামরিক সংঘাত নয়—এটি এখন কূটনৈতিক, তথ্যযুদ্ধ ও গ্লোবাল জ্বালানী বাজারে প্রভাব ফেলার এক প্রকৃত হাতিয়ার।
সূত্র: বিবিসি পার্সিয়ান, আল–জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, ফার্স নিউজ এজেন্সি, ওয়াশিংটন পোস্ট
Please Share This Post in Your Social Media

মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার পর রুদ্ধশ্বাস মধ্যরাতে যা যা ঘটলো

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনার আবহে সোমবার রাতের দিকে এক নাটকীয় মোড় নেয় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অস্থিরতা। ভোররাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ, প্রতিক্রিয়ামূলক সামরিক প্রস্তুতি, রাষ্ট্রীয় বার্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি চলতে থাকে শ্বাসরুদ্ধকর গতিতে। এই টানটান উত্তেজনার মধ্যেই হঠাৎই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যদিও এই ঘোষণা পরবর্তী সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
যুদ্ধের সূত্রপাত: পারমাণবিক ইস্যু ও আঘাতের পাল্টা আঘাত
এই সংঘাতের শুরু হয়েছিল ১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আকস্মিক হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ধ্বংস করা, যেটি তারা মনে করে দ্রুত বোমা তৈরির পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানান, ইরান যদি এই কর্মসূচি শেষ করতে পারে, তবে এটি শুধু ইসরায়েল নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
ইরান এই হামলার জবাবে ‘ট্রু প্রমিস’ নামে পাল্টা অভিযান চালিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে শত শত রকেট, ক্রুজ মিসাইল এবং সশস্ত্র ড্রোন ছোড়ে। এ সময় ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও, কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এতে অন্তত ৪০ জনের প্রাণহানি এবং বহু সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও কাতারে ইরানি প্রতিক্রিয়া
সোমবার (২৩ জুন) রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এসব স্থাপনাকে “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করা হয়েছে। এই হামলাকে ইরানের জন্য ‘গভীর বার্তা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এর জবাবে রাতেই ইরান কাতারের ‘আল উদেইদ’ মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। উল্লেখ্য, এটি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি, যেখানে মার্কিন সেন্টকম (সেন্ট্রাল কমান্ড)-এর গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কাতার সরকার জানায়, আগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কোনো হতাহত হয়নি। দোহার আকাশে একাধিক বিকট বিস্ফোরণ এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আলোয় ভরে যায় রাতের অন্ধকার।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা: শান্তির আশা, নাকি কৌশল?
ইরানের হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা দেন, ইসরায়েল ও ইরান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি একে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করে জানান, ছয় ঘণ্টার মধ্যে উভয় পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে যাবে। তিনি বলেন, “এই যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারতো, কিন্তু আমরা একে থামিয়ে দিয়েছি।”
ট্রাম্প আরও বলেন, এই সংঘাত এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারত। তার মতে, এই চুক্তির ফলে এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে তিনি ইরান ও ইসরায়েল উভয়কে শান্তির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
সন্দেহ ও প্রতিক্রিয়া: ইরানের সন্দেহ, মিডিয়ার দ্বিধা
যদিও ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা যায়, ইরানের পক্ষ থেকে তৎক্ষণাৎ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাঘচি পরে জানান, “ভোর চারটার পর যদি ইসরায়েল আর কোনো আগ্রাসন না চালায়, তবে ইরানও প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।” তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তাদের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তবে এ বক্তব্য আসার আগ পর্যন্ত ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। ফার্স নিউজ এজেন্সি, যেটি ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ডসের ঘনিষ্ঠ, জানায়—এটি একটি “মিথ্যা প্রচারণা”, এবং “ইরান কোনো আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি”। এমনকি তারা দাবি করে, এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করছে ইরানের হামলায় নিজেদের অপমান ঢাকতে।
শান্তির বার্তা: কাতারের মধ্যস্থতা
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং আল-জাজিরার সূত্রে জানা যায়, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি একাধিকবার ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেন। কাতার ইতিপূর্বে আফগান তালেবান-মার্কিন আলোচনা এবং হামাস-ইসরায়েল আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। এবারও তারা তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির খসড়া প্রস্তাব দেয়। যদিও এটি কতটা কার্যকর হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের বার্তা ও প্রতিক্রিয়া
যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েলও কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও, পরবর্তীতে জানা যায় তারা আরব প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে যে, তারা যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। কারণ, ১১ দিনের সংঘাতে ইরানের শতাধিক রকেট ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। এই বাস্তবতা ইসরায়েলকে শান্তি আলোচনার পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে বলে অনেকে মনে করেন।
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির নাটকীয় মোড়
ওয়াশিংটন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি ধারাবাহিকতার বদলে পরিস্থিতিনির্ভর। যেখানে তিনি একদিন ইরানে ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন’ দাবি করেন, পরদিন আবার শান্তির বার্তা দেন। বিশ্লেষক বার্ন্ড ডেবসামেন জুনিয়র বলেন, “ট্রাম্পের কৌশল দ্রুত পাল্টে ফেলা এবং তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে বেশি মনোযোগী। এ কারণেই পররাষ্ট্রনীতিতে তার বক্তব্যে ধারাবাহিকতা অনুপস্থিত।”
সামনে কী?
এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ও কৌতূহল বিরাজ করছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পরও যদি ইসরায়েল নতুন করে হামলা চালায় কিংবা ইরান পাল্টা জবাব দেয়, তবে এই সংঘাত আরও ভয়াবহ মোড় নিতে পারে। অন্যদিকে, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক উদ্যোগ সফল হলে হয়তো এই উত্তেজনা কিছুটা কমে আসবে।
তবে এই ঘটনাপ্রবাহ বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল, একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ আর নিছক সামরিক সংঘাত নয়—এটি এখন কূটনৈতিক, তথ্যযুদ্ধ ও গ্লোবাল জ্বালানী বাজারে প্রভাব ফেলার এক প্রকৃত হাতিয়ার।
সূত্র: বিবিসি পার্সিয়ান, আল–জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, ফার্স নিউজ এজেন্সি, ওয়াশিংটন পোস্ট