সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ট্রাম্পের হামলা ও হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / ১২৪ Time View

167232 sds

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

167232 sds

ট্রাম্পের হামলা হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসছে অনিশ্চয়তার মেঘ

সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আবারও তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষনা দিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী “পুরোপুরি ধ্বংস” করেছে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা। জবাবে তেহরান ঘোষণা করে, উপসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় পাল্টা আঘাত হানা হবে এবং প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হবে—যে জলপথ দিয়ে বিশ্ব-চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ হয়।

বিশ্ববাজার ইতোমধ্যে এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে কেঁপে উঠেছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তেলের দাম হু-হু করে বাড়তে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চড়বে এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর পরিকল্পনায় জটিলতা তৈরি হবে। বিপরীতে, সোনার মতো ‘সেফ হ্যাভেন’ সম্পদ আকর্ষণ বাড়াতে পারে, আর চীনা সম্পদ তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে ধারণা করছে বাজার।

তেলের বাজারে অস্থিরতা

চীনা ব্রোকারেজ সংস্থা ঝংতাই সিকিউরিটিজ-এর বিশ্লেষক হে জিয়াহুয়া বলেন, “দাম তীব্র পতনের সময় এই উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় প্রাথমিক ধাক্কা কিছুটা কমেছে; কিন্তু হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি বাস্তবায়িত হলে তেলের ব্যারেল-প্রতি দাম ১০০–১২০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।” সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম লাফিয়ে ৭৯.৪০ ডলার ছুঁয়েছে, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ; যদিও দিনশেষে দামে সামান্য শীতলতা এসেছে। এর আগের সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্যের সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কায় তেলের দাম ইতোমধ্যে ৩ শতাংশ বেড়েছিল।

মূল্যস্ফীতি নীতিগত চ্যালেঞ্জ

চায়না মেরচ্যান্টস সিকিউরিটিজ জানিয়েছে, “যদি আশপাশের সংঘাত তেলের দাম ও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে থাকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সুদ-নীতি ও বাণিজ্য-নীতিতে দ্রুত সমন্বয় আনতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ লাঘবে বছর শেষে সুদ কমানোর সম্ভাবনা জোরালো হতে পারে।”

অন্যদিকে সিআইটিআইসি সিকিউরিটিজ অতীতের প্রবণতা উলেখ করে বলছে, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়লেই সাধারণত সোনা ডলারের চেয়েও ভালো ফল দেয়। সোমবার সকালে স্পট গোল্ড-এর দাম ৩ ৩৯১.১৫ ডলারে পৌঁছে কিছুটা নেমে ৩ ৩৬২.৩৮ ডলারে স্থির হয়—ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা যে নিরাপদ সম্পদে ছুটছেন, তারই ইঙ্গিত।

কৌশলগত গুরুত্ব বৈশ্বিক ঝুঁকি

হরমুজ প্রণালী বহুকাল ধরেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘রেড লাইন’—এটি বন্ধ হলে কেবল জ্বালানি সরবরাহ নয়, সামরিক সংঘাতও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইরানের হুমকি, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে ওয়াশিংটনের সরাসরি জড়িয়ে পড়া এবং পশ্চিমা মিত্রদের অবস্থান মিলিয়ে বহুমুখী সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে।

এ ধরনের prolonged সংঘাত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করতে পারে, উদীয়মান বাজারে অস্থিরতা বাড়াবে এবং নীতি-নির্ধারকদের এগোতে ত্রিমুখী চাপে ফেলবে—মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাবেন, না কি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি টিকিয়ে রাখবেন?

পথখুঁজছে অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী শেয়ার, পণ্য ও মুদ্রা-বাজারে অতি-উত্তালতা স্বাভাবিক লাগবে, বলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারগুলোকে এখন থেকেই একাধিক দৃশ্যপটের প্রস্তুতি নিতে হবে—দীর্ঘ-স্থায়ী মূল্যস্ফীতির ধাক্কা থেকে শুরু করে বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ পথ গড়ার কৌশল পর্যন্ত।

মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের নড়বড়ে মঞ্চে আরও একটি বড় ঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সামরিক চালফেরার পাশাপাশি বিশ্ব আজ নজর রাখছে—তেলের দর, সুদের হার, খাদ্য-দ্রব্যের দাম, এমনকি জ্বালানি নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাস পর্যন্ত কীভাবে প্রভাবিত হয়। একটি সংকীর্ণ জলপথে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শক্তির এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কত বড় তুফানের মুখে ঠেলে দেয়, এখন সেটিই কোটি-ডলারের প্রশ্ন।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল করপোরেশন, ঝংতাই সিকিউরিটিজ, সিআইটিআইসি সিকিউরিটিজ

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ট্রাম্পের হামলা ও হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি

Update Time : ০৬:১৭:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

167232 sds

ট্রাম্পের হামলা হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসছে অনিশ্চয়তার মেঘ

সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আবারও তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষনা দিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী “পুরোপুরি ধ্বংস” করেছে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা। জবাবে তেহরান ঘোষণা করে, উপসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন ঘাঁটিগুলোয় পাল্টা আঘাত হানা হবে এবং প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হবে—যে জলপথ দিয়ে বিশ্ব-চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল সরবরাহ হয়।

বিশ্ববাজার ইতোমধ্যে এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে কেঁপে উঠেছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তেলের দাম হু-হু করে বাড়তে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চড়বে এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর পরিকল্পনায় জটিলতা তৈরি হবে। বিপরীতে, সোনার মতো ‘সেফ হ্যাভেন’ সম্পদ আকর্ষণ বাড়াতে পারে, আর চীনা সম্পদ তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে ধারণা করছে বাজার।

তেলের বাজারে অস্থিরতা

চীনা ব্রোকারেজ সংস্থা ঝংতাই সিকিউরিটিজ-এর বিশ্লেষক হে জিয়াহুয়া বলেন, “দাম তীব্র পতনের সময় এই উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় প্রাথমিক ধাক্কা কিছুটা কমেছে; কিন্তু হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি বাস্তবায়িত হলে তেলের ব্যারেল-প্রতি দাম ১০০–১২০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।” সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম লাফিয়ে ৭৯.৪০ ডলার ছুঁয়েছে, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ; যদিও দিনশেষে দামে সামান্য শীতলতা এসেছে। এর আগের সপ্তাহেই মধ্যপ্রাচ্যের সরবরাহ ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কায় তেলের দাম ইতোমধ্যে ৩ শতাংশ বেড়েছিল।

মূল্যস্ফীতি নীতিগত চ্যালেঞ্জ

চায়না মেরচ্যান্টস সিকিউরিটিজ জানিয়েছে, “যদি আশপাশের সংঘাত তেলের দাম ও মূল্যস্ফীতি বাড়াতে থাকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সুদ-নীতি ও বাণিজ্য-নীতিতে দ্রুত সমন্বয় আনতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ লাঘবে বছর শেষে সুদ কমানোর সম্ভাবনা জোরালো হতে পারে।”

অন্যদিকে সিআইটিআইসি সিকিউরিটিজ অতীতের প্রবণতা উলেখ করে বলছে, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়লেই সাধারণত সোনা ডলারের চেয়েও ভালো ফল দেয়। সোমবার সকালে স্পট গোল্ড-এর দাম ৩ ৩৯১.১৫ ডলারে পৌঁছে কিছুটা নেমে ৩ ৩৬২.৩৮ ডলারে স্থির হয়—ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা যে নিরাপদ সম্পদে ছুটছেন, তারই ইঙ্গিত।

কৌশলগত গুরুত্ব বৈশ্বিক ঝুঁকি

হরমুজ প্রণালী বহুকাল ধরেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘রেড লাইন’—এটি বন্ধ হলে কেবল জ্বালানি সরবরাহ নয়, সামরিক সংঘাতও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইরানের হুমকি, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে ওয়াশিংটনের সরাসরি জড়িয়ে পড়া এবং পশ্চিমা মিত্রদের অবস্থান মিলিয়ে বহুমুখী সংঘাতের আশঙ্কা বেড়েছে।

এ ধরনের prolonged সংঘাত বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিঘ্নিত করতে পারে, উদীয়মান বাজারে অস্থিরতা বাড়াবে এবং নীতি-নির্ধারকদের এগোতে ত্রিমুখী চাপে ফেলবে—মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাবেন, না কি অর্থনৈতিক বৃদ্ধি টিকিয়ে রাখবেন?

পথখুঁজছে অর্থনীতি

বিশ্বব্যাপী শেয়ার, পণ্য ও মুদ্রা-বাজারে অতি-উত্তালতা স্বাভাবিক লাগবে, বলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারগুলোকে এখন থেকেই একাধিক দৃশ্যপটের প্রস্তুতি নিতে হবে—দীর্ঘ-স্থায়ী মূল্যস্ফীতির ধাক্কা থেকে শুরু করে বিকল্প জ্বালানি সরবরাহ পথ গড়ার কৌশল পর্যন্ত।

মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের নড়বড়ে মঞ্চে আরও একটি বড় ঝড়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সামরিক চালফেরার পাশাপাশি বিশ্ব আজ নজর রাখছে—তেলের দর, সুদের হার, খাদ্য-দ্রব্যের দাম, এমনকি জ্বালানি নিরাপত্তা পুনর্বিন্যাস পর্যন্ত কীভাবে প্রভাবিত হয়। একটি সংকীর্ণ জলপথে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শক্তির এই কাঁদা ছোড়াছুড়ি বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কত বড় তুফানের মুখে ঠেলে দেয়, এখন সেটিই কোটি-ডলারের প্রশ্ন।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল করপোরেশন, ঝংতাই সিকিউরিটিজ, সিআইটিআইসি সিকিউরিটিজ

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share