কৌশল পাল্টে ব্যাপক হামলা ইরানের, নিরাপত্তাহীনতায় কাঁপছে ইসরাইল

- Update Time : ০৯:২৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
- / ১১৭ Time View
দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে চালানো সাম্প্রতিক হামলায় কৌশলগতভাবে বড় পরিবর্তন এনেছে ইরান, যা ইসরায়েলকে আরও বেশি দিশেহারা করে তুলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকালে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ২১তম ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পরিচালনা করে, যা অধিকৃত অঞ্চলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এ হামলাকে বলা হচ্ছে এযাবৎকালের অন্যতম বড় সমন্বিত আঘাত।
আইআরজিসি-র পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই অভিযানে তারা প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী ড্রোনের পাশাপাশি কঠিন ও তরল জ্বালানিযুক্ত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে ব্যবহার করেছে। আগের অভিযানের তুলনায় এবার আক্রমণের পরিধি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এবার শুধু তেল আবিব বা হাইফা নয়, বরং ইসরাইলের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ইরানি বাহিনী।
প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হাইফা, উত্তর হাইফা, তেল আবিব, আশকেলন, একর, আশদোদ, সাফেদ, লাচিশ, বেইত শে’আন ও আশদোদের মতো কৌশলগত নগর ও শিল্প অঞ্চলকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। এসব জায়গায় বিস্ফোরণের পরিণতিতে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং বহু এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র এই আক্রমণকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ একটানা বিমান হামলা বলে অভিহিত করেছে। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে দেশজুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজে, যা সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও এবার ছিল নজিরবিহীন। এতে ইসরায়েলি নাগরিকদের দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে আতঙ্ক ছিল চরমে।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের একাধিক শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন (IEC) নিশ্চিত করে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি একটি “কৌশলগত অবকাঠামো স্থাপনায়” আঘাত হানে, যার ফলে আশেপাশের শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জরুরি সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
আইইসি জানিয়েছে, তাদের প্রকৌশল দলগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবকাঠামোর জরুরি মেরামতের কাজ শুরু করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করছে।
এই হামলার পর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, ইরানের কৌশলগত এই পাল্টা আঘাত কেবল প্রতিক্রিয়ামূলক নয় বরং দীর্ঘমেয়াদী ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে এর পেছনে। হামলার প্রকৃতি, বিস্তার এবং ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রকারভেদ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইরান একেবারে ভিন্ন মাত্রার সামরিক অভিযানে নামছে—যা ইসরাইলের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরানের এই নতুন কৌশলের ফলে ভবিষ্যতে আরও জোরালো এবং বহুমুখী আক্রমণের মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল। বিশেষত যদি হিজবুল্লাহ, হামাস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্ররা সমন্বিতভাবে এই আক্রমণাত্মক নীতিতে অংশগ্রহণ করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সার্বিকভাবে, ইরানের এই কৌশলগত পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যার ফলে শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে। বিশ্ব শক্তিগুলো এই উত্তেজনা প্রশমনে এখনই কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
Please Share This Post in Your Social Media

কৌশল পাল্টে ব্যাপক হামলা ইরানের, নিরাপত্তাহীনতায় কাঁপছে ইসরাইল

দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে চালানো সাম্প্রতিক হামলায় কৌশলগতভাবে বড় পরিবর্তন এনেছে ইরান, যা ইসরায়েলকে আরও বেশি দিশেহারা করে তুলেছে। সোমবার (২৩ জুন) সকালে ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ২১তম ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পরিচালনা করে, যা অধিকৃত অঞ্চলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এ হামলাকে বলা হচ্ছে এযাবৎকালের অন্যতম বড় সমন্বিত আঘাত।
আইআরজিসি-র পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই অভিযানে তারা প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী ড্রোনের পাশাপাশি কঠিন ও তরল জ্বালানিযুক্ত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র একসাথে ব্যবহার করেছে। আগের অভিযানের তুলনায় এবার আক্রমণের পরিধি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। এবার শুধু তেল আবিব বা হাইফা নয়, বরং ইসরাইলের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ইরানি বাহিনী।
প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হাইফা, উত্তর হাইফা, তেল আবিব, আশকেলন, একর, আশদোদ, সাফেদ, লাচিশ, বেইত শে’আন ও আশদোদের মতো কৌশলগত নগর ও শিল্প অঞ্চলকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। এসব জায়গায় বিস্ফোরণের পরিণতিতে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং বহু এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র এই আক্রমণকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ একটানা বিমান হামলা বলে অভিহিত করেছে। প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে দেশজুড়ে সতর্কতা সাইরেন বাজে, যা সাধারণত কয়েক মিনিট স্থায়ী হলেও এবার ছিল নজিরবিহীন। এতে ইসরায়েলি নাগরিকদের দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বাধ্য করা হয়, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে আতঙ্ক ছিল চরমে।
টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের একাধিক শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন (IEC) নিশ্চিত করে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি একটি “কৌশলগত অবকাঠামো স্থাপনায়” আঘাত হানে, যার ফলে আশেপাশের শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জরুরি সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
আইইসি জানিয়েছে, তাদের প্রকৌশল দলগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবকাঠামোর জরুরি মেরামতের কাজ শুরু করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করছে।
এই হামলার পর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, ইরানের কৌশলগত এই পাল্টা আঘাত কেবল প্রতিক্রিয়ামূলক নয় বরং দীর্ঘমেয়াদী ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে এর পেছনে। হামলার প্রকৃতি, বিস্তার এবং ব্যবহৃত অস্ত্রের প্রকারভেদ দেখে বোঝা যাচ্ছে, ইরান একেবারে ভিন্ন মাত্রার সামরিক অভিযানে নামছে—যা ইসরাইলের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ইরানের এই নতুন কৌশলের ফলে ভবিষ্যতে আরও জোরালো এবং বহুমুখী আক্রমণের মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল। বিশেষত যদি হিজবুল্লাহ, হামাস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্ররা সমন্বিতভাবে এই আক্রমণাত্মক নীতিতে অংশগ্রহণ করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
সার্বিকভাবে, ইরানের এই কৌশলগত পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যার ফলে শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই এখন অনিশ্চয়তার মুখে। বিশ্ব শক্তিগুলো এই উত্তেজনা প্রশমনে এখনই কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে—এমন সতর্কবার্তা দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।