ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা ন্যায়বিচার হতে পারে না

- Update Time : ০৬:২৫:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
- / ১১৩ Time View
ধর্ষণের মামলার বাদী ইডেন মহিলা কলেজের সেই ছাত্রীকে কারাগারেই বিয়ে করেছেন আলোচিত ও বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল।
ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই মামলার বাদী ওই শিক্ষার্থীকে কারাগারে বসেই বিয়ে করেছেন নোবেল। ঘটনাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ ও শিল্পীসমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে একে বিচারব্যবস্থার এক ভয়াবহ ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
কারাগারে বিতর্কিত বিয়ে: ঘটনা বিস্তারিত
গত ২০ মে, ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হন গায়ক নোবেল। অভিযোগে বলা হয়, নোবেল ওই নারীকে সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন। মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর মামলার বিচারাধীন অবস্থায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার এক আশ্চর্যজনক নির্দেশ দেন—সেই ধর্ষণের শিকার নারী ও অভিযুক্ত গায়ক নোবেলকে বিয়ে করতে হবে। আদালতের এই রায়ের পর বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটি সম্পন্ন হয়।
নোবেলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইলা মণি জানান, উভয় পক্ষের সম্মতিতেই এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে এবং দেনমোহর ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সদস্য, যাদের মধ্যে ছিলেন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান ও সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া।
পারশা মাহজাবীন পূর্ণির তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন পূর্ণি। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীকে কারাগারে বিয়ে দেওয়ার সংবাদসংবলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে তিনি লিখেন:
“ধর্ষণের শিকার নারীকে তার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করা কখনোই ন্যায়বিচার হতে পারে না! এটি প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতার নগ্ন উদাহরণ। এমন রায় কোনো আদালতের রায় হতে পারে না—এটি আইন ও নৈতিকতার সম্পূর্ণ ভগ্নদশার প্রতিচ্ছবি।”
তিনি আরও বলেন, “একজন বেঁচে থাকা নারীর মানসিক সুস্থতা বা জীবনের পুনর্গঠন কখনোই তার নির্যাতকের সঙ্গে তথাকথিত ‘পারস্পরিক সম্মতির’ ভিত্তিতে বিয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এ ধরনের রায় আমাদের বিচারব্যবস্থার পিতৃতান্ত্রিক ও দুর্নীতিপূর্ণ প্রকৃতিকে নগ্ন করে তোলে। এখানে শাস্তির বদলে অপরাধীর জন্য রক্ষাকবচ খোঁজা হয়, আর ভুক্তভোগীর ট্রমাকে সামাজিক ঐতিহ্যের আড়ালে ঢেকে ফেলা হয়।”
পারশার বক্তব্যে উঠে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক: “এই রায় শুধু একজন নারীকে ব্যর্থ করে না, বরং সব ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য ভয়াবহ বার্তা দেয়—তাদের কষ্ট ও যন্ত্রণাকে যেন একটা দরকষাকষির বস্তুতে পরিণত করা যায়!”
তিনি শেষ করেন, “ন্যায়বিচার তখনই সত্যিকার অর্থে হয়, যখন তা একজন মানুষের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত হয়—সহিংসতার সঙ্গে আপস করে নয়।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ, ও ব্লাস্ট-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অভিযুক্তের সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে চাপিয়ে দেওয়া একটি ভয়ানক নজির। এটি ধর্ষণকে বৈধতা দেওয়ার নামান্তর, যা ভবিষ্যতে ভিকটিমদের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে।
আসকের নির্বাহী পরিচালক একটি বিবৃতিতে বলেন, “বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হলে তা একদিকে বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে, অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি অবিচার করে।”
বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও নারীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একজন অভিযুক্ত ধর্ষক ও ভুক্তভোগীর ‘পারস্পরিক সম্মতি’ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই। আদালতের এমন রায় কি আদৌ একজন ধর্ষিত নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে? নাকি সমাজের সম্মান রক্ষার নামে ভিকটিমকে আবারও শাস্তি দেওয়া হয়?
সমাজে কী বার্তা দিচ্ছে এই ঘটনা?
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় সমাজে একটি ভয়ংকর বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণকারীদের জন্য যেন একটি নতুন পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে—ভিকটিমকে বিয়ে করে আইনি দায় এড়ানো যাবে। এতে করে ভবিষ্যতে ধর্ষণ মামলায় ভিকটিমরা চাপে পড়ে গিয়ে আদালতের বাইরে মীমাংসা বা এমন ‘বিয়ের প্রস্তাব’ মেনে নিতে বাধ্য হতে পারেন।
গায়ক নোবেলের মতো একজন আলোচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর তার কারাগারে বসে সেই ভিকটিমকেই বিয়ে করা নিছক এক সামাজিক নাটক নয়, এটি একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বা আইনি ইস্যু নয়, এটি বিচারব্যবস্থা, নৈতিকতা, নারী অধিকার এবং সামাজিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর জন্য ‘বিয়ে’ কোনো বিচার হতে পারে না—বরং সেটি আরেক দফা নিপীড়ন।
এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, কতটা গভীরভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কতটা সহানুভূতির অভাব রয়েছে বিচারব্যবস্থায়। তাই এখন সময়—আইনের পেছনে লুকিয়ে থাকা এই অবিচারকে সামনে নিয়ে আসার, প্রশ্ন তোলার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দাবি করার।
Please Share This Post in Your Social Media

ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়েতে বাধ্য করা ন্যায়বিচার হতে পারে না

ধর্ষণের মামলার বাদী ইডেন মহিলা কলেজের সেই ছাত্রীকে কারাগারেই বিয়ে করেছেন আলোচিত ও বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল।
ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই মামলার বাদী ওই শিক্ষার্থীকে কারাগারে বসেই বিয়ে করেছেন নোবেল। ঘটনাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ ও শিল্পীসমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে একে বিচারব্যবস্থার এক ভয়াবহ ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
কারাগারে বিতর্কিত বিয়ে: ঘটনা বিস্তারিত
গত ২০ মে, ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হন গায়ক নোবেল। অভিযোগে বলা হয়, নোবেল ওই নারীকে সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন করেন। মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর মামলার বিচারাধীন অবস্থায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার এক আশ্চর্যজনক নির্দেশ দেন—সেই ধর্ষণের শিকার নারী ও অভিযুক্ত গায়ক নোবেলকে বিয়ে করতে হবে। আদালতের এই রায়ের পর বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়েটি সম্পন্ন হয়।
নোবেলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইলা মণি জানান, উভয় পক্ষের সম্মতিতেই এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে এবং দেনমোহর ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সদস্য, যাদের মধ্যে ছিলেন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান ও সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া।
পারশা মাহজাবীন পূর্ণির তীব্র প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন পূর্ণি। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীকে কারাগারে বিয়ে দেওয়ার সংবাদসংবলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে তিনি লিখেন:
“ধর্ষণের শিকার নারীকে তার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে করতে বাধ্য করা কখনোই ন্যায়বিচার হতে পারে না! এটি প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতার নগ্ন উদাহরণ। এমন রায় কোনো আদালতের রায় হতে পারে না—এটি আইন ও নৈতিকতার সম্পূর্ণ ভগ্নদশার প্রতিচ্ছবি।”
তিনি আরও বলেন, “একজন বেঁচে থাকা নারীর মানসিক সুস্থতা বা জীবনের পুনর্গঠন কখনোই তার নির্যাতকের সঙ্গে তথাকথিত ‘পারস্পরিক সম্মতির’ ভিত্তিতে বিয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এ ধরনের রায় আমাদের বিচারব্যবস্থার পিতৃতান্ত্রিক ও দুর্নীতিপূর্ণ প্রকৃতিকে নগ্ন করে তোলে। এখানে শাস্তির বদলে অপরাধীর জন্য রক্ষাকবচ খোঁজা হয়, আর ভুক্তভোগীর ট্রমাকে সামাজিক ঐতিহ্যের আড়ালে ঢেকে ফেলা হয়।”
পারশার বক্তব্যে উঠে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক: “এই রায় শুধু একজন নারীকে ব্যর্থ করে না, বরং সব ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার নারীদের জন্য ভয়াবহ বার্তা দেয়—তাদের কষ্ট ও যন্ত্রণাকে যেন একটা দরকষাকষির বস্তুতে পরিণত করা যায়!”
তিনি শেষ করেন, “ন্যায়বিচার তখনই সত্যিকার অর্থে হয়, যখন তা একজন মানুষের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত হয়—সহিংসতার সঙ্গে আপস করে নয়।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ, ও ব্লাস্ট-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অভিযুক্তের সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে চাপিয়ে দেওয়া একটি ভয়ানক নজির। এটি ধর্ষণকে বৈধতা দেওয়ার নামান্তর, যা ভবিষ্যতে ভিকটিমদের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে।
আসকের নির্বাহী পরিচালক একটি বিবৃতিতে বলেন, “বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হলে তা একদিকে বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে, অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার নারীদের প্রতি অবিচার করে।”
বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও নারীবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একজন অভিযুক্ত ধর্ষক ও ভুক্তভোগীর ‘পারস্পরিক সম্মতি’ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই। আদালতের এমন রায় কি আদৌ একজন ধর্ষিত নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে? নাকি সমাজের সম্মান রক্ষার নামে ভিকটিমকে আবারও শাস্তি দেওয়া হয়?
সমাজে কী বার্তা দিচ্ছে এই ঘটনা?
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় সমাজে একটি ভয়ংকর বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। ধর্ষণকারীদের জন্য যেন একটি নতুন পথ খুলে দেওয়া হচ্ছে—ভিকটিমকে বিয়ে করে আইনি দায় এড়ানো যাবে। এতে করে ভবিষ্যতে ধর্ষণ মামলায় ভিকটিমরা চাপে পড়ে গিয়ে আদালতের বাইরে মীমাংসা বা এমন ‘বিয়ের প্রস্তাব’ মেনে নিতে বাধ্য হতে পারেন।
গায়ক নোবেলের মতো একজন আলোচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর তার কারাগারে বসে সেই ভিকটিমকেই বিয়ে করা নিছক এক সামাজিক নাটক নয়, এটি একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বা আইনি ইস্যু নয়, এটি বিচারব্যবস্থা, নৈতিকতা, নারী অধিকার এবং সামাজিক মূল্যবোধকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর জন্য ‘বিয়ে’ কোনো বিচার হতে পারে না—বরং সেটি আরেক দফা নিপীড়ন।
এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, কতটা গভীরভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কতটা সহানুভূতির অভাব রয়েছে বিচারব্যবস্থায়। তাই এখন সময়—আইনের পেছনে লুকিয়ে থাকা এই অবিচারকে সামনে নিয়ে আসার, প্রশ্ন তোলার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দাবি করার।