সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

৭৬ বছর পর যেই পথ দিয়ে এসেছিল, সেই পথেই পালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলিরা!

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / ৮৫ Time View

aa 20250620163519

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

aa 20250620163519

aa 20250620163519
aa 20250620163519

ইতিহাসের চাকা ঘুরছেদখলদারিত্বের শেষপ্রান্তে ইসরায়েল?

‘ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে’—কার্ল মার্ক্সের এই বিখ্যাত উক্তি যেন আবারও বাস্তব হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে। ১৯৪৮ সালে ইউরোপ, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনে পাড়ি জমিয়ে সেখানে এক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গড়ে ওঠা সেই ইসরায়েল এখন নিজেই অস্তিত্ব সংকটে। ৭৬ বছর পর, আরেকটি বড় মোড় নিতে যাচ্ছে ইতিহাস।

সংঘাতের পটভূমি: ইরানইসরায়েল টানাপড়েন নতুন চূড়ায়

২০২৫ সালে এসে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। সিরিয়া ও গাজা থেকে শুরু করে ইয়েমেন ও লেবানন পর্যন্ত ইরান-সমর্থিত শক্তিগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ইসরায়েলের ভেতরে নজিরবিহীনভাবে প্রাণহানি ঘটিয়েছে।

বিশ্ব গণমাধ্যম আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ইরানের সরাসরি বা পরোক্ষ হামলায় ইসরায়েলে ১২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ হাজারের বেশি আহত। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সামরিক স্থাপনা ও বন্দরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পালানোর পথ খুঁজছে ইসরায়েলিরা: নৌপথে সাইপ্রাস অভিমুখে

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক চরমে। আশদোড ও হাইফা সমুদ্রবন্দর থেকে বহু মানুষ বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ ও ছোট ছোট নৌকায় করে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রধান গন্তব্য সাইপ্রাস—ইসরায়েল থেকে যার দূরত্ব মাত্র ২৭০ কিমি।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের কিছু নাগরিক ইতিমধ্যে সাইপ্রাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করেছেন। গোপনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি এমন যে, যেই সমুদ্রপথ দিয়ে একসময় দখলদাররা এসেছিল, সেই পথেই আজ তারা দেশ ছাড়ছে।

ইতিহাসের ছায়া: ৮০ বছরের চক্র?

ইতিহাসবিদদের মতে, ইহুদি জাতির রাষ্ট্রীয় প্রভাবশালী অবস্থানের পতন ইতিহাসে প্রতি ৮০ বছর অন্তর ঘটেছে—বাবিলন, রোম, স্পেন এবং জার্মানিতে এমন নজির আছে। আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর ইতোমধ্যে কেটেছে ৭৬ বছর। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সময় ফুরিয়ে এসেছে, ইতিহাস হয়তো আবারও নিজের গতিতে চলতে শুরু করেছে।

মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গাজা, রাফাহ ও খান ইউনিসে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধের’ পর্যায়ে ফেলেছে।

তবে ইরানের পাল্টা প্রতিরোধ ও ক্ষেপণাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল এখন চাপে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ, বিশেষ করে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইসরায়েলের পাশে থাকলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতায় নীরব চাপের মধ্যেই রয়েছে।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পরিণতি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। যুদ্ধের মধ্যেও দুর্নীতির মামলা ও অপশাসনের অভিযোগে তিনি সমালোচনার মুখে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই সংঘাতের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বাস্তবতা বলছে—এই যুদ্ধ হয়তো তাঁর সরকারের শেষ অধ্যায় ডেকে আনছে।

শেষ কথা

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দখলদারদের সময় শেষ হয়—এ সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আজ যখন ইসরায়েলিরা নৌকায় পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে, তখন ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ এখনো মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে। এক সময় যারা ভূমির মালিক ছিল, তাদের আজকের দৃঢ়তা ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে বাধ্য করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন আসন্ন, এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব এবার শুধু গাজা নয়—আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাও দিতে শুরু করেছে।

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

৭৬ বছর পর যেই পথ দিয়ে এসেছিল, সেই পথেই পালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলিরা!

Update Time : ০৬:১১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

aa 20250620163519

aa 20250620163519
aa 20250620163519

ইতিহাসের চাকা ঘুরছেদখলদারিত্বের শেষপ্রান্তে ইসরায়েল?

‘ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে’—কার্ল মার্ক্সের এই বিখ্যাত উক্তি যেন আবারও বাস্তব হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে। ১৯৪৮ সালে ইউরোপ, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনে পাড়ি জমিয়ে সেখানে এক ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল। ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গড়ে ওঠা সেই ইসরায়েল এখন নিজেই অস্তিত্ব সংকটে। ৭৬ বছর পর, আরেকটি বড় মোড় নিতে যাচ্ছে ইতিহাস।

সংঘাতের পটভূমি: ইরানইসরায়েল টানাপড়েন নতুন চূড়ায়

২০২৫ সালে এসে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। সিরিয়া ও গাজা থেকে শুরু করে ইয়েমেন ও লেবানন পর্যন্ত ইরান-সমর্থিত শক্তিগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষ দীর্ঘদিনের। তবে সাম্প্রতিক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ইসরায়েলের ভেতরে নজিরবিহীনভাবে প্রাণহানি ঘটিয়েছে।

বিশ্ব গণমাধ্যম আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ইরানের সরাসরি বা পরোক্ষ হামলায় ইসরায়েলে ১২০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ হাজারের বেশি আহত। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সামরিক স্থাপনা ও বন্দরগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পালানোর পথ খুঁজছে ইসরায়েলিরা: নৌপথে সাইপ্রাস অভিমুখে

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক চরমে। আশদোড ও হাইফা সমুদ্রবন্দর থেকে বহু মানুষ বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ ও ছোট ছোট নৌকায় করে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রধান গন্তব্য সাইপ্রাস—ইসরায়েল থেকে যার দূরত্ব মাত্র ২৭০ কিমি।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের কিছু নাগরিক ইতিমধ্যে সাইপ্রাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনও করেছেন। গোপনে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি এমন যে, যেই সমুদ্রপথ দিয়ে একসময় দখলদাররা এসেছিল, সেই পথেই আজ তারা দেশ ছাড়ছে।

ইতিহাসের ছায়া: ৮০ বছরের চক্র?

ইতিহাসবিদদের মতে, ইহুদি জাতির রাষ্ট্রীয় প্রভাবশালী অবস্থানের পতন ইতিহাসে প্রতি ৮০ বছর অন্তর ঘটেছে—বাবিলন, রোম, স্পেন এবং জার্মানিতে এমন নজির আছে। আধুনিক ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের পর ইতোমধ্যে কেটেছে ৭৬ বছর। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সময় ফুরিয়ে এসেছে, ইতিহাস হয়তো আবারও নিজের গতিতে চলতে শুরু করেছে।

মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গাজা, রাফাহ ও খান ইউনিসে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধের’ পর্যায়ে ফেলেছে।

তবে ইরানের পাল্টা প্রতিরোধ ও ক্ষেপণাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল এখন চাপে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ, বিশেষ করে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইসরায়েলের পাশে থাকলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতায় নীরব চাপের মধ্যেই রয়েছে।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পরিণতি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। যুদ্ধের মধ্যেও দুর্নীতির মামলা ও অপশাসনের অভিযোগে তিনি সমালোচনার মুখে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই সংঘাতের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বাস্তবতা বলছে—এই যুদ্ধ হয়তো তাঁর সরকারের শেষ অধ্যায় ডেকে আনছে।

শেষ কথা

ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দখলদারদের সময় শেষ হয়—এ সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আজ যখন ইসরায়েলিরা নৌকায় পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে, তখন ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ এখনো মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে। এক সময় যারা ভূমির মালিক ছিল, তাদের আজকের দৃঢ়তা ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে বাধ্য করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন আসন্ন, এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাব এবার শুধু গাজা নয়—আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাও দিতে শুরু করেছে।

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share