ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হলে পুরো অঞ্চলেই নেমে আসবে নরক: ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী

- Update Time : ০২:৫৮:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / ১৩৩ Time View
বিবিসিকে সাক্ষাৎকার
ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি অংশ নেয়, তাহলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যেই নেমে আসবে নরক—এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে নিজেকে জড়ান, তাহলে ইতিহাসে তাকে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবেই স্মরণ করা হবে, যিনি এমন একটি সংঘাতে অংশ নিয়েছিলেন, যা তার নিজ দেশের যুদ্ধ ছিল না।”
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা হবে একটি জটিল ফাঁদ
খতিবজাদে আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে তা শুধু যুদ্ধকেই দীর্ঘায়িত করবে না, বরং পুরো অঞ্চলকে একটি জটিল ও বিপজ্জনক ফাঁদের দিকে ঠেলে দেবে। এতে মানবিক বিপর্যয় বাড়বে, নির্যাতন ও আগ্রাসনের অবসান আরও বিলম্বিত হবে।”
তিনি বলেন, “ইরান এখনও কূটনৈতিক সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোলা রেখেছি। কিন্তু বোমাবর্ষণের মধ্যে কোনো অর্থবহ আলোচনা সম্ভব নয়।”
ইরানের পাল্টা হামলা: আত্মরক্ষার অধিকার দাবি
বিবিসি সাক্ষাৎকারে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলেন, “ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের জবাবে আমরা যে পাল্টা হামলা করেছি, তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবেই বিবেচিত।”
তিনি জানান, গত ১৩ জুন যখন সংঘাত নাটকীয়ভাবে বাড়ে, তখনও ইরান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিল এবং আলোচনা ও সমাধানের পথ খুঁজছিল। কিন্তু গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালায়, যাতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জেনারেল ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এই হামলার জবাবেই ইরান প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে। এরপর থেকেই টানা এক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চলছে।
সোরোকা হাসপাতালে হামলার অভিযোগ ও পাল্টা ব্যাখ্যা
ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে আঘাত হানায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় ৭১ জন আহত হয়েছেন।
তবে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সোরোকা হাসপাতাল ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু ছিল না। বরং লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশে অবস্থিত একটি সামরিক স্থাপনা। ইরানের সরকারি গণমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা ও পারমাণবিক স্থাপনা টার্গেট
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নিষ্ক্রিয়’ আরাক ভারী পানি চুল্লি এবং নাতাঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা। তবে ইরানে এই হামলায় ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি তেহরান।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে অংশগ্রহণ করবে কি না। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, তাহলে তা পুরো অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খতিবজাদে বলেন, “আমরা এমন এক ধ্বংসাত্মক অবস্থায় পৌঁছাতে চাই না, যেখানে পুরো অঞ্চলই যুদ্ধের আগুনে পুড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের এখনো সময় আছে কূটনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার, আগ্রাসনের পথ থেকে ফিরে আসার।”
এই সাক্ষাৎকারটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল ও ইরান মুখোমুখি অবস্থানে এবং যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা তৃতীয় কোনো দেশকেও টেনে আনতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।
Please Share This Post in Your Social Media

ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হলে পুরো অঞ্চলেই নেমে আসবে নরক: ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিবিসিকে সাক্ষাৎকার
ইসরায়েল-ইরান চলমান সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি অংশ নেয়, তাহলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যেই নেমে আসবে নরক—এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার ভাষায়, “এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে নিজেকে জড়ান, তাহলে ইতিহাসে তাকে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবেই স্মরণ করা হবে, যিনি এমন একটি সংঘাতে অংশ নিয়েছিলেন, যা তার নিজ দেশের যুদ্ধ ছিল না।”
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা হবে একটি জটিল ফাঁদ
খতিবজাদে আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে তা শুধু যুদ্ধকেই দীর্ঘায়িত করবে না, বরং পুরো অঞ্চলকে একটি জটিল ও বিপজ্জনক ফাঁদের দিকে ঠেলে দেবে। এতে মানবিক বিপর্যয় বাড়বে, নির্যাতন ও আগ্রাসনের অবসান আরও বিলম্বিত হবে।”
তিনি বলেন, “ইরান এখনও কূটনৈতিক সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোলা রেখেছি। কিন্তু বোমাবর্ষণের মধ্যে কোনো অর্থবহ আলোচনা সম্ভব নয়।”
ইরানের পাল্টা হামলা: আত্মরক্ষার অধিকার দাবি
বিবিসি সাক্ষাৎকারে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলেন, “ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের জবাবে আমরা যে পাল্টা হামলা করেছি, তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবেই বিবেচিত।”
তিনি জানান, গত ১৩ জুন যখন সংঘাত নাটকীয়ভাবে বাড়ে, তখনও ইরান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ছিল এবং আলোচনা ও সমাধানের পথ খুঁজছিল। কিন্তু গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে নজিরবিহীন হামলা চালায়, যাতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জেনারেল ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এই হামলার জবাবেই ইরান প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে। এরপর থেকেই টানা এক সপ্তাহ ধরে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চলছে।
সোরোকা হাসপাতালে হামলার অভিযোগ ও পাল্টা ব্যাখ্যা
ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে আঘাত হানায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলায় ৭১ জন আহত হয়েছেন।
তবে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সোরোকা হাসপাতাল ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু ছিল না। বরং লক্ষ্য ছিল হাসপাতালের পাশে অবস্থিত একটি সামরিক স্থাপনা। ইরানের সরকারি গণমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের পাল্টা হামলা ও পারমাণবিক স্থাপনা টার্গেট
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘নিষ্ক্রিয়’ আরাক ভারী পানি চুল্লি এবং নাতাঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা। তবে ইরানে এই হামলায় ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি তেহরান।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেবেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে অংশগ্রহণ করবে কি না। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, তাহলে তা পুরো অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী খতিবজাদে বলেন, “আমরা এমন এক ধ্বংসাত্মক অবস্থায় পৌঁছাতে চাই না, যেখানে পুরো অঞ্চলই যুদ্ধের আগুনে পুড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের এখনো সময় আছে কূটনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার, আগ্রাসনের পথ থেকে ফিরে আসার।”
এই সাক্ষাৎকারটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল ও ইরান মুখোমুখি অবস্থানে এবং যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা তৃতীয় কোনো দেশকেও টেনে আনতে পারে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ।