ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে রাজি পাকিস্তান

- Update Time : ০৬:২১:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
- / ১১৩ Time View
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, কারণ ইরানের আকাশপথ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে স্থলপথে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতিও দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
কূটনৈতিক উদ্যোগ ও পাকিস্তানের সম্মতি
বিশ্বস্ত কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইরানে বাংলাদেশের দূতাবাস একটি কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেখানে ইরান থেকে ৯০ জন বাংলাদেশিকে প্রাথমিকভাবে ফিরিয়ে আনার তালিকা প্রদান করা হয়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন খান ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে চলমান আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
ভিসা প্রক্রিয়া ও ইন্টারনেট সংকট
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরতে হলে পাকিস্তানে প্রবেশের জন্য অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে হবে। তবে ইরানে বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত সীমিত, ফলে অনলাইনে ভিসার আবেদন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বিশেষ বিবেচনায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা বা বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে।
তেহরানে বাংলাদেশিদের অবস্থা
তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে তেহরান ত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের মোট ৪০ জনকেও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তেহরানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, পেশাজীবী এবং রেডিও তেহরানে কর্মরত বাংলাদেশিরা। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশি ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা থাকলেও ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন। আরও প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও ৩০০-৫০০ জন বাংলাদেশি মানবপাচারের ট্রানজিট হিসেবে ইরানে অবস্থান করছেন। এছাড়া ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
সীমান্ত পারাপার ও সম্ভাব্য রুট
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইরান থেকে বাংলাদেশিদের প্রথমে স্থলপথে পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়া হবে। সেখান থেকে করাচি হয়ে দুবাই এবং পরে ঢাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এর জন্য বেলুচিস্তান সীমান্ত পার হতে হবে, যা বর্তমানে একটি সংবেদনশীল এলাকা। কারণ, পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ১৫ জুন ইরান-সংশ্লিষ্ট তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
পাকিস্তান সরকার নীতিগতভাবে সহযোগিতা করতে রাজি হলেও, এখনো তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বৈধ কাগজপত্র বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের আগে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বিকল্প পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
তুরস্ক হয়ে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও থাকলেও তুরস্ক সহযোগিতা করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানই এখন প্রধান বিকল্প রুট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের সীমান্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা– সবকিছুই নির্ভর করছে সেখানে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অবস্থার উপর।
বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে দেশে ফেরানো একটি মানবিক ও জরুরি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের সহযোগিতা এ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার আন্তরিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সমাধানের আশা করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার।
Please Share This Post in Your Social Media

ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে রাজি পাকিস্তান

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তেহরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, কারণ ইরানের আকাশপথ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে স্থলপথে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতিও দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
কূটনৈতিক উদ্যোগ ও পাকিস্তানের সম্মতি
বিশ্বস্ত কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইরানে বাংলাদেশের দূতাবাস একটি কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সেখানে ইরান থেকে ৯০ জন বাংলাদেশিকে প্রাথমিকভাবে ফিরিয়ে আনার তালিকা প্রদান করা হয়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন খান ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে চলমান আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
ভিসা প্রক্রিয়া ও ইন্টারনেট সংকট
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরতে হলে পাকিস্তানে প্রবেশের জন্য অনলাইনে ভিসার আবেদন করতে হবে। তবে ইরানে বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত সীমিত, ফলে অনলাইনে ভিসার আবেদন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বিশেষ বিবেচনায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা বা বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে।
তেহরানে বাংলাদেশিদের অবস্থা
তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে তেহরান ত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবারের মোট ৪০ জনকেও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তেহরানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, পেশাজীবী এবং রেডিও তেহরানে কর্মরত বাংলাদেশিরা। এ ছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশি ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা থাকলেও ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন। আরও প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ও ৩০০-৫০০ জন বাংলাদেশি মানবপাচারের ট্রানজিট হিসেবে ইরানে অবস্থান করছেন। এছাড়া ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
সীমান্ত পারাপার ও সম্ভাব্য রুট
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইরান থেকে বাংলাদেশিদের প্রথমে স্থলপথে পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়া হবে। সেখান থেকে করাচি হয়ে দুবাই এবং পরে ঢাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এর জন্য বেলুচিস্তান সীমান্ত পার হতে হবে, যা বর্তমানে একটি সংবেদনশীল এলাকা। কারণ, পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ১৫ জুন ইরান-সংশ্লিষ্ট তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
পাকিস্তান সরকার নীতিগতভাবে সহযোগিতা করতে রাজি হলেও, এখনো তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে যাদের বৈধ কাগজপত্র বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের আগে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বিকল্প পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
তুরস্ক হয়ে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও থাকলেও তুরস্ক সহযোগিতা করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানই এখন প্রধান বিকল্প রুট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের সীমান্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা– সবকিছুই নির্ভর করছে সেখানে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অবস্থার উপর।
বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে দেশে ফেরানো একটি মানবিক ও জরুরি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের সহযোগিতা এ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার আন্তরিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সমাধানের আশা করা যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার।