সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না ইরান: আয়াতুল্লাহ খামেনির হুঁশিয়ারি

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • / ১৬১ Time View

1750239796 22166c445cedd060e68c4c0dcdb545af

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1750239796 22166c445cedd060e68c4c0dcdb545af

বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপটসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন

তেহরান, ১৮ জুন ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় ইরানের বিরুদ্ধে আবারও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানকে এবার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হবে, নয়তো ভয়াবহ পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।” ট্রাম্পের এই বক্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কঠোর ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে খামেনি বলেন, “ইরান কখনোই কোনো হুমকির সামনে নত হয় না। এই জাতি যুদ্ধ দেখেছে, রক্ত দিয়েছে, কিন্তু আত্মসমর্পণ করেনি। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ যেমন ইরানের জাতিগত মর্যাদার বিরুদ্ধে, তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তিও অপমানজনক। আমরা এমন কোনো চুক্তি বা সমাধান মানব না, যেখানে আমাদের স্বার্থ, সম্মান ও স্বাধীনতা খর্ব হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প এবং তাঁর সমমনা নেতারা ভুল করছেন যদি তারা মনে করেন ইরানিরা ভয় পাবে। হুমকি-ধামকি আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতিতে নতুন কিছু নয়। ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হওয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধেই আমরা প্রমাণ করেছি— ইরানি জাতিকে হারানো যায় না।”

খামেনির বার্তায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটে

ওঠে:

. আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আপসহীনতা:
খামেনি বলেন, “ইরানি জাতির আত্মমর্যাদা কোনো কূটনৈতিক দরকষাকষির বস্তু নয়। আমরা অর্থনৈতিক অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা, চাপ— এসবের মুখোমুখি হয়েছি বহুবার, কিন্তু কখনোই নিজের সম্মান বিসর্জন দিইনি।”

. সামরিক হস্তক্ষেপের ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি:
তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “কোনো সামরিক আগ্রাসন শুরু করা সহজ, কিন্তু তার পরিণতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যারা মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা বোঝে না, তাদের উচিত ঐতিহাসিক শিক্ষা গ্রহণ করা।”

. কূটনৈতিক সমাধানের দরজা খোলা:
যদিও খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তবুও তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সেটা হতে হবে সম্মানের ভিত্তিতে। যারা মনে করে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি আসবে, তারা আসলে শত্রুতার আগুনে ঘি ঢালছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

খামেনির বক্তব্যের পরপরই আল-জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এটি প্রধান শিরোনাম হয়। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. রেহাম খান বলেন, “খামেনির বক্তব্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মতো আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও উদ্দেশ করে বলা হয়েছে। ইরান এখন আর প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে নেই, তারা কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে।”

ট্রাম্পের বক্তব্য কোথা থেকে এল?

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাচনী প্রচারণায় বলেন, “আমার প্রেসিডেন্সিতে ইরান হাঁটু গেড়ে বসেছিল। এবার ক্ষমতায় ফিরলে আমি তাদের এমন শর্ত দেব যে তারা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।” তাঁর এই মন্তব্য অনেকের কাছে যুদ্ধোন্মাদতা এবং আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ইরানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের (IRGC) মুখপাত্র জেনারেল রামেজান শরিফ জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত। আমাদের ড্রোন প্রযুক্তি, ব্যালিস্টিক মিসাইল, সাইবার ইউনিটসহ প্রতিরক্ষা খাত সম্পূর্ণ সচল রয়েছে।” এদিকে পারস্য উপসাগরে ইরানের নৌবাহিনীর সক্রিয়তা বাড়তে দেখা গেছে, যা যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব

বিশ্বব্যাপী অনেক রাষ্ট্র এই উত্তেজনাকে ঘিরে উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়া ট্রাম্পের বক্তব্যকে উসকানিমূলক ও আগ্রাসী বলে নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনার জেরে তেলবাজারে অস্থিরতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খামেনির শক্ত অবস্থান এই বার্তা দেয় যে, ইরান নিজের নীতি ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন। ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ নীতিকে তারা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি এই বার্তা বুঝবে? নাকি আবারও সংঘাতের পথে হাঁটবে? সময়ই বলবে শেষ সত্য।

সূত্র: তাসনিম নিউজ, আল-জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না ইরান: আয়াতুল্লাহ খামেনির হুঁশিয়ারি

Update Time : ০৬:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1750239796 22166c445cedd060e68c4c0dcdb545af

বিশ্লেষণ প্রেক্ষাপটসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন

তেহরান, ১৮ জুন ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় ইরানের বিরুদ্ধে আবারও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইরানকে এবার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হবে, নয়তো ভয়াবহ পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।” ট্রাম্পের এই বক্তব্য ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কঠোর ভাষায় এর জবাব দিয়েছেন।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে খামেনি বলেন, “ইরান কখনোই কোনো হুমকির সামনে নত হয় না। এই জাতি যুদ্ধ দেখেছে, রক্ত দিয়েছে, কিন্তু আত্মসমর্পণ করেনি। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ যেমন ইরানের জাতিগত মর্যাদার বিরুদ্ধে, তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তিও অপমানজনক। আমরা এমন কোনো চুক্তি বা সমাধান মানব না, যেখানে আমাদের স্বার্থ, সম্মান ও স্বাধীনতা খর্ব হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প এবং তাঁর সমমনা নেতারা ভুল করছেন যদি তারা মনে করেন ইরানিরা ভয় পাবে। হুমকি-ধামকি আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতিতে নতুন কিছু নয়। ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হওয়া ইরান-ইরাক যুদ্ধেই আমরা প্রমাণ করেছি— ইরানি জাতিকে হারানো যায় না।”

খামেনির বার্তায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

ফুটে ওঠে:

. আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আপসহীনতা:
খামেনি বলেন, “ইরানি জাতির আত্মমর্যাদা কোনো কূটনৈতিক দরকষাকষির বস্তু নয়। আমরা অর্থনৈতিক অবরোধ, নিষেধাজ্ঞা, চাপ— এসবের মুখোমুখি হয়েছি বহুবার, কিন্তু কখনোই নিজের সম্মান বিসর্জন দিইনি।”

. সামরিক হস্তক্ষেপের ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি:
তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “কোনো সামরিক আগ্রাসন শুরু করা সহজ, কিন্তু তার পরিণতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যারা মধ্যপ্রাচ্যের বাস্তবতা বোঝে না, তাদের উচিত ঐতিহাসিক শিক্ষা গ্রহণ করা।”

. কূটনৈতিক সমাধানের দরজা খোলা:
যদিও খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তবুও তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু সেটা হতে হবে সম্মানের ভিত্তিতে। যারা মনে করে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি আসবে, তারা আসলে শত্রুতার আগুনে ঘি ঢালছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

খামেনির বক্তব্যের পরপরই আল-জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এটি প্রধান শিরোনাম হয়। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ড. রেহাম খান বলেন, “খামেনির বক্তব্য শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মতো আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদেরও উদ্দেশ করে বলা হয়েছে। ইরান এখন আর প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানে নেই, তারা কৌশলগতভাবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে।”

ট্রাম্পের বক্তব্য কোথা থেকে এল?

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাচনী প্রচারণায় বলেন, “আমার প্রেসিডেন্সিতে ইরান হাঁটু গেড়ে বসেছিল। এবার ক্ষমতায় ফিরলে আমি তাদের এমন শর্ত দেব যে তারা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।” তাঁর এই মন্তব্য অনেকের কাছে যুদ্ধোন্মাদতা এবং আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ইরানের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের (IRGC) মুখপাত্র জেনারেল রামেজান শরিফ জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত। আমাদের ড্রোন প্রযুক্তি, ব্যালিস্টিক মিসাইল, সাইবার ইউনিটসহ প্রতিরক্ষা খাত সম্পূর্ণ সচল রয়েছে।” এদিকে পারস্য উপসাগরে ইরানের নৌবাহিনীর সক্রিয়তা বাড়তে দেখা গেছে, যা যুদ্ধাবস্থার প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব

বিশ্বব্যাপী অনেক রাষ্ট্র এই উত্তেজনাকে ঘিরে উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়া ট্রাম্পের বক্তব্যকে উসকানিমূলক ও আগ্রাসী বলে নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনার জেরে তেলবাজারে অস্থিরতা এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খামেনির শক্ত অবস্থান এই বার্তা দেয় যে, ইরান নিজের নীতি ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন। ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ নীতিকে তারা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি এই বার্তা বুঝবে? নাকি আবারও সংঘাতের পথে হাঁটবে? সময়ই বলবে শেষ সত্য।

সূত্র: তাসনিম নিউজ, আল-জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share