সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

২ হাজার কোটি টাকা পাচার কাণ্ড: সাবেক হাইকমিশনার মুনা ও তার স্বামী দুদকের নজরদারিতে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:১২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / ৩৯০ Time View

2ad464f622c3e85bb2c9d13c0a80ba3a 684ff9409a6a7

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
2ad464f622c3e85bb2c9d13c0a80ba3a 684ff9409a6a7
 সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা ও তার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী

 

হাজার কোটি টাকা পাচার কাণ্ড: সাবেক হাইকমিশনার মুনা তার স্বামী দুদকের নজরদারিতে
১২টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ পাচারের অভিযোগ; জড়িত ব্যাংক একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবার নজর দিয়েছে বহুল আলোচিত একটি সম্ভাব্য অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দিকে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম এবং তাঁর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তৌহিদুল ইসলাম ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত।

সোমবার (১৬ জুন) রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, মুনা ও তাঁর স্বামী পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সহায়তায় ১২টি ভুয়া বা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেন, যার মোট পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

অভিযোগের কেন্দ্রে

যে প্রতিষ্ঠানগুলো

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে—

  • ইউসিবিএল (UCBL)
  • ব্যাংক এশিয়া
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL)
  • সিটি ব্যাংক
  • ব্র্যাক ব্যাংক
  • ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (NBL)
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • সাউথইস্ট ব্যাংক
  • এবি ব্যাংক

প্রতিটি ব্যাংক থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে ভুয়া কাগজপত্র ও প্রজেক্টের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করেন। সেই টাকা পরে বিভিন্ন পন্থায় দেশ থেকে পাচার করা হয়। দুদকের দাবি, এসব টাকার একটি বড় অংশ বিদেশি একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরানো হয়েছে।

হাইকমিশনার পদে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার?

সাঈদা মুনা তাসনিম যখন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময়েই এই অর্থ লেনদেন ও পাচারের বড় একটি অংশ সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ের একটি দায়িত্বে থেকে তাঁর এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার আশঙ্কা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ

দুদক জানিয়েছে, এই অনুসন্ধান এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স ফাইলিং, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও ব্যাংক হিসাব যাচাই করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে এবং প্রয়োজন হলে ইন্টারন্যাশনাল সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টাও করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে জনমত

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এমন অপরাধে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, বরং সিস্টেমিক দুর্বলতারও প্রতিফলন। যদি এই মামলার সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হবে দেশের ইতিহাসে কূটনৈতিক পর্যায়ের অন্যতম বড় মানিলন্ডারিং কেলেঙ্কারি।

বর্তমানে বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এই নীতির আলোকে সাঈদা মুনা তাসনিম ও তাঁর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও যদি আইনের ঊর্ধ্বে থেকে কার্যক্রম চালান, তাহলে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা গভীর সংকটে পড়বে। এখন দেখার বিষয়—এই অনুসন্ধান শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

২ হাজার কোটি টাকা পাচার কাণ্ড: সাবেক হাইকমিশনার মুনা ও তার স্বামী দুদকের নজরদারিতে

Update Time : ০৬:১২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
2ad464f622c3e85bb2c9d13c0a80ba3a 684ff9409a6a7
 সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা ও তার স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী

 

হাজার কোটি টাকা পাচার কাণ্ড: সাবেক হাইকমিশনার মুনা তার স্বামী দুদকের নজরদারিতে
১২টি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ পাচারের অভিযোগ; জড়িত ব্যাংক একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবার নজর দিয়েছে বহুল আলোচিত একটি সম্ভাব্য অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দিকে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম এবং তাঁর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তৌহিদুল ইসলাম ‘জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত।

সোমবার (১৬ জুন) রাজধানীর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, মুনা ও তাঁর স্বামী পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সহায়তায় ১২টি ভুয়া বা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেন, যার মোট পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

অভিযোগের

কেন্দ্রে যে প্রতিষ্ঠানগুলো

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে—

  • ইউসিবিএল (UCBL)
  • ব্যাংক এশিয়া
  • ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL)
  • সিটি ব্যাংক
  • ব্র্যাক ব্যাংক
  • ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (NBL)
  • ট্রাস্ট ব্যাংক
  • সাউথইস্ট ব্যাংক
  • এবি ব্যাংক

প্রতিটি ব্যাংক থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে ভুয়া কাগজপত্র ও প্রজেক্টের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করেন। সেই টাকা পরে বিভিন্ন পন্থায় দেশ থেকে পাচার করা হয়। দুদকের দাবি, এসব টাকার একটি বড় অংশ বিদেশি একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরানো হয়েছে।

হাইকমিশনার পদে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার?

সাঈদা মুনা তাসনিম যখন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেই সময়েই এই অর্থ লেনদেন ও পাচারের বড় একটি অংশ সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ের একটি দায়িত্বে থেকে তাঁর এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার আশঙ্কা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ

দুদক জানিয়েছে, এই অনুসন্ধান এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স ফাইলিং, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও ব্যাংক হিসাব যাচাই করা হচ্ছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে এবং প্রয়োজন হলে ইন্টারন্যাশনাল সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টাও করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে জনমত

রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এমন অপরাধে যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের নয়, বরং সিস্টেমিক দুর্বলতারও প্রতিফলন। যদি এই মামলার সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি হবে দেশের ইতিহাসে কূটনৈতিক পর্যায়ের অন্যতম বড় মানিলন্ডারিং কেলেঙ্কারি।

বর্তমানে বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এই নীতির আলোকে সাঈদা মুনা তাসনিম ও তাঁর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও যদি আইনের ঊর্ধ্বে থেকে কার্যক্রম চালান, তাহলে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা গভীর সংকটে পড়বে। এখন দেখার বিষয়—এই অনুসন্ধান শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share