সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে যে কথাগুলো বলবেন না

- Update Time : ০৬:০৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
- / ১৪১ Time View
একসঙ্গে কাজ করতে করতে অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় এই ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়ে যায় যে আমরা তাদের ব্যক্তিগত বন্ধু মনে করতে শুরু করি। কিন্তু কাজের পরিবেশ ও পেশাগত সম্পর্কের একটি সুস্পষ্ট সীমারেখা থাকে, যা মেনে চলা জরুরি। সহকর্মী যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, কিছু কথা বা তথ্য শেয়ার করা পেশাগত শালীনতার পরিপন্থী হতে পারে এবং ভবিষ্যতে তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
নিচে এমন কিছু বিষয়ের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে বলাটা উচিত নয়—
১. বেতন বা আর্থিক অবস্থা
অনেকেই সহকর্মীদের সঙ্গে নিজেদের বেতন, বোনাস বা আর্থিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। এতে হিংসা, অসন্তোষ কিংবা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। আবার আপনি হয়তো বেশি পাচ্ছেন, কিন্তু সেটা প্রকাশ পেলে অফিসে বিভাজন তৈরি হতে পারে।
২. ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা দাম্পত্য জীবন
আপনার বৈবাহিক সমস্যা, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন কিংবা পারিবারিক বিবাদের কথা সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করলে তা হয়তো গোপন থাকবে না। অফিসে গসিপের শিকার হওয়া বা কারো হাস্যরসের বিষয় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
৩.
বিশ্বাস করে কেউ কেউ সহকর্মীকে বলেন, “আমাদের বস কিছুই বোঝে না” বা “ওই ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অলস”। কিন্তু অফিস রাজনীতিতে এই কথাগুলো ঘুরে ফিরে সেই মানুষের কাছেই পৌঁছাতে পারে যাকে আপনি নিয়ে কথা বলেছিলেন। এতে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে।
৪. ভবিষ্যৎ চাকরি বা রেজিগনেশনের পরিকল্পনা
আপনি যদি অন্য কোথাও আবেদন করেছেন বা চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছেন, সেটি সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার না করাই ভালো। তিনি বিশ্বাসযোগ্য হলেও এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে আপনার এখনকার প্রতিষ্ঠানে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
৫. ধর্ম, রাজনীতি বা বিতর্কিত মতবাদ
এই ধরণের বিষয় নিয়ে কথা বললে সহকর্মীর সঙ্গে মতভেদ তৈরি হতে পারে, যা পেশাগত সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অফিস একটি পেশাদার জায়গা, এখানে মতপার্থক্যকে প্রশ্রয় দেওয়া কাজের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
৬. অন্য সহকর্মীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা
কেউ হয়তো আপনাকে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জানিয়েছে। সেটা অন্য কাউকে, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকেও বলাটা অনৈতিক। এতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাবে এবং কেউ আপনাকে আর ব্যক্তিগত কথা বলতে চাইবে না।
৭. নিজের অতীতের ভুল বা অপরাধ
আপনি হয়তো আগে কোথাও ভুল করেছেন, শাস্তি পেয়েছেন, এমনকি আইনি জটিলতায় জড়িয়েছেন। এগুলো প্রকাশ করলে তা ভবিষ্যতে আপনার পেশাগত সুনাম ও অগ্রগতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেষ কথা:
সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া দোষের কিছু নয়। বরং অফিসের কাজ সুসমন্বয়ে করতে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা জরুরি। তবে সেই সম্পর্ক কখনোই ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে যাওয়া উচিত নয়, যেখানে আপনি নিজের সবকিছু শেয়ার করতে শুরু করেন। পেশাগত পরিবেশে সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা রক্ষা করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়।
Please Share This Post in Your Social Media

সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে যে কথাগুলো বলবেন না

একসঙ্গে কাজ করতে করতে অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় এই ঘনিষ্ঠতা এতটাই বেড়ে যায় যে আমরা তাদের ব্যক্তিগত বন্ধু মনে করতে শুরু করি। কিন্তু কাজের পরিবেশ ও পেশাগত সম্পর্কের একটি সুস্পষ্ট সীমারেখা থাকে, যা মেনে চলা জরুরি। সহকর্মী যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, কিছু কথা বা তথ্য শেয়ার করা পেশাগত শালীনতার পরিপন্থী হতে পারে এবং ভবিষ্যতে তা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
নিচে এমন কিছু বিষয়ের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো সহকর্মীকে বন্ধু ভেবে বলাটা উচিত নয়—
১. বেতন বা আর্থিক অবস্থা
অনেকেই সহকর্মীদের সঙ্গে নিজেদের বেতন, বোনাস বা আর্থিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন। এতে হিংসা, অসন্তোষ কিংবা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। আবার আপনি হয়তো বেশি পাচ্ছেন, কিন্তু সেটা প্রকাশ পেলে অফিসে বিভাজন তৈরি হতে পারে।
২. ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা দাম্পত্য জীবন
আপনার বৈবাহিক সমস্যা, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন কিংবা পারিবারিক বিবাদের কথা সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার করলে তা হয়তো গোপন থাকবে না। অফিসে গসিপের শিকার হওয়া বা কারো হাস্যরসের বিষয় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
৩.
বিশ্বাস করে কেউ কেউ সহকর্মীকে বলেন, “আমাদের বস কিছুই বোঝে না” বা “ওই ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অলস”। কিন্তু অফিস রাজনীতিতে এই কথাগুলো ঘুরে ফিরে সেই মানুষের কাছেই পৌঁছাতে পারে যাকে আপনি নিয়ে কথা বলেছিলেন। এতে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে।
৪. ভবিষ্যৎ চাকরি বা রেজিগনেশনের পরিকল্পনা
আপনি যদি অন্য কোথাও আবেদন করেছেন বা চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছেন, সেটি সহকর্মীর সঙ্গে শেয়ার না করাই ভালো। তিনি বিশ্বাসযোগ্য হলেও এই তথ্য ছড়িয়ে পড়লে আপনার এখনকার প্রতিষ্ঠানে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
৫. ধর্ম, রাজনীতি বা বিতর্কিত মতবাদ
এই ধরণের বিষয় নিয়ে কথা বললে সহকর্মীর সঙ্গে মতভেদ তৈরি হতে পারে, যা পেশাগত সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অফিস একটি পেশাদার জায়গা, এখানে মতপার্থক্যকে প্রশ্রয় দেওয়া কাজের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
৬. অন্য সহকর্মীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনা
কেউ হয়তো আপনাকে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জানিয়েছে। সেটা অন্য কাউকে, এমনকি ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকেও বলাটা অনৈতিক। এতে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাবে এবং কেউ আপনাকে আর ব্যক্তিগত কথা বলতে চাইবে না।
৭. নিজের অতীতের ভুল বা অপরাধ
আপনি হয়তো আগে কোথাও ভুল করেছেন, শাস্তি পেয়েছেন, এমনকি আইনি জটিলতায় জড়িয়েছেন। এগুলো প্রকাশ করলে তা ভবিষ্যতে আপনার পেশাগত সুনাম ও অগ্রগতিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শেষ কথা:
সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া দোষের কিছু নয়। বরং অফিসের কাজ সুসমন্বয়ে করতে সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকা জরুরি। তবে সেই সম্পর্ক কখনোই ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে যাওয়া উচিত নয়, যেখানে আপনি নিজের সবকিছু শেয়ার করতে শুরু করেন। পেশাগত পরিবেশে সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা রক্ষা করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়।