সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

‘ভয়ে’ এক রাতে ৫ বার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:০৯:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
  • / ৫৭ Time View

1749880635 f3ccdd27d2000e3f9255a7e3e2c48800

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

1749880635 f3ccdd27d2000e3f9255a7e3e2c48800
 মাইক হাকাবি

 

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরানের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলায় পুরো ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক রাতে পাঁচবার বাংকার বা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ঘটনা শুধু হামলার ভয়াবহতা নয়, বরং ওই অঞ্চলে কূটনৈতিক মহলে বিরাজমান উদ্বেগের একটি প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরে। কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর নিশ্চিত করেছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে হাকাবি লিখেছেন, “এখন শাব্বাত চলছে। এটি সাধারণত শান্তি ও প্রার্থনার সময়, কিন্তু এবার ভিন্ন এক বাস্তবতায় আমাদের দিন কাটছে। পুরো জাতিকে বলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকতে, কেননা যেকোনো মুহূর্তে আবারও হামলা শুরু হতে পারে।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মিত্রদের অন্যতম দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কতটা বাস্তব হয়ে উঠেছে। হাকাবির এই পাঁচবার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ব কূটনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইরানইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

গত কয়েক মাস ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠছিল। ইসরায়েলের একাধিক অভিযানে সিরিয়া ও ইরাকে ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনী এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ঘোষণা দেয় যে, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি সামরিক জবাব দেওয়া হবে। অবশেষে শুক্রবার রাতে ইরান একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল ইরানে হামলা করবে না

পোস্টে হাকাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের দৃঢ়তা ও গভীরতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি মনে করি না যে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া ইরানে হামলা চালাবে। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় যে, এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের মিত্রতা আছে, তবে সত্যিকারের অংশীদারত্ব কেবল একটি দেশের সঙ্গেই—ইসরায়েল। কারণ আমাদের মধ্যকার গোয়েন্দা তথ্য, সামরিক কৌশল, অস্ত্র প্রযুক্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গির যে বিনিময় হয়, তা একমাত্র ইসরায়েলের সঙ্গেই হয়। আমরা একই মূল্যবোধের, একই সভ্যতার উত্তরসূরি।”

প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক রাতে বারবার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা ও তাৎপর্য আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কূটনীতিক—কারও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, এমন সংকটময় অবস্থা বিরাজ করছে এখন ইসরায়েলে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইরানের প্রত্যক্ষ হামলা, যা কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম, নতুন করে এক অচেনা যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং আরব লিগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ মধ্যস্থতার আহ্বান জানালেও, কেউ কেউ সতর্ক করে দিয়েছে, এই সংঘাত যদি পুরোপুরি যুদ্ধের রূপ নেয়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্ব অর্থনীতি ও নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

মাইক হাকাবির পাঁচবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুধু একটি কূটনীতিকের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নয়—এটি এক ভয়াবহ সংকেত। এটি প্রমাণ করে যে, যুদ্ধের সম্ভাবনা এখন আর দূরের কোনো ভয় নয়, বরং বাস্তবতার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে—এই উত্তেজনা কি শান্তিপূর্ণ আলোচনায় রূপ নেবে, নাকি একটি বৃহৎ সংঘাতের মুখোমুখি হবে বিশ্ব।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

‘ভয়ে’ এক রাতে ৫ বার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত

Update Time : ১২:০৯:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

1749880635 f3ccdd27d2000e3f9255a7e3e2c48800
 মাইক হাকাবি

 

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরানের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলায় পুরো ইসরায়েলজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সংকটময় মুহূর্তে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এক রাতে পাঁচবার বাংকার বা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ ঘটনা শুধু হামলার ভয়াবহতা নয়, বরং ওই অঞ্চলে কূটনৈতিক মহলে বিরাজমান উদ্বেগের একটি প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরে। কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর নিশ্চিত করেছে।

এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে হাকাবি লিখেছেন, “এখন শাব্বাত চলছে। এটি সাধারণত শান্তি ও প্রার্থনার সময়, কিন্তু এবার ভিন্ন এক বাস্তবতায় আমাদের দিন কাটছে। পুরো জাতিকে বলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে থাকতে, কেননা যেকোনো মুহূর্তে আবারও হামলা শুরু হতে পারে।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক মিত্রদের অন্যতম দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কতটা বাস্তব হয়ে উঠেছে। হাকাবির এই পাঁচবার আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ব কূটনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ইরানইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

গত কয়েক মাস ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠছিল। ইসরায়েলের একাধিক অভিযানে সিরিয়া ও ইরাকে ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনী এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ঘোষণা দেয় যে, ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি সামরিক জবাব দেওয়া হবে। অবশেষে শুক্রবার রাতে ইরান একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া ইসরায়েল ইরানে হামলা করবে না

পোস্টে হাকাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের দৃঢ়তা ও গভীরতার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, “আমি মনে করি না যে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া ইরানে হামলা চালাবে। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় যে, এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের মিত্রতা আছে, তবে সত্যিকারের অংশীদারত্ব কেবল একটি দেশের সঙ্গেই—ইসরায়েল। কারণ আমাদের মধ্যকার গোয়েন্দা তথ্য, সামরিক কৌশল, অস্ত্র প্রযুক্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গির যে বিনিময় হয়, তা একমাত্র ইসরায়েলের সঙ্গেই হয়। আমরা একই মূল্যবোধের, একই সভ্যতার উত্তরসূরি।”

প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক রাতে বারবার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের তীব্রতা ও তাৎপর্য আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কূটনীতিক—কারও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়, এমন সংকটময় অবস্থা বিরাজ করছে এখন ইসরায়েলে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইরানের প্রত্যক্ষ হামলা, যা কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম, নতুন করে এক অচেনা যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই হামলার পর জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং আরব লিগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ মধ্যস্থতার আহ্বান জানালেও, কেউ কেউ সতর্ক করে দিয়েছে, এই সংঘাত যদি পুরোপুরি যুদ্ধের রূপ নেয়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং গোটা বিশ্ব অর্থনীতি ও নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

মাইক হাকাবির পাঁচবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুধু একটি কূটনীতিকের নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা নয়—এটি এক ভয়াবহ সংকেত। এটি প্রমাণ করে যে, যুদ্ধের সম্ভাবনা এখন আর দূরের কোনো ভয় নয়, বরং বাস্তবতার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে—এই উত্তেজনা কি শান্তিপূর্ণ আলোচনায় রূপ নেবে, নাকি একটি বৃহৎ সংঘাতের মুখোমুখি হবে বিশ্ব।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share