ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ: বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত, হতাহত শতাধিক

- Update Time : ১০:৫৯:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / ৫০ Time View
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবার সরাসরি যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শুক্রবার দিন ও রাতে একযোগে ব্যাপক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে। ইরান দাবি করছে, এটি ছিল একটি ‘ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরানি হামলায় ইসরায়েলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ইরানের ছোঁড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে বাড়িঘর ধসে পড়েছে। উদ্ধারকাজে নিযুক্ত জরুরি চিকিৎসা কর্মীদের বরাতে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অন্তত দুজন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
একইভাবে ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ জানায়, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন। হামলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে বিস্ফোরণের শব্দ রাজধানী জেরুজালেম পর্যন্ত পৌঁছায় এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি চিকিৎসা ও রক্ত পরিষেবা সংস্থা ‘মাগেন ডেভিড অ্যাডম’ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানি হামলায় হালকা থেকে মাঝারি আহত অন্তত ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় মোট আহতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, ইরানের ছোঁড়া আরও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যারেজ তারা ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বেসামরিক এলাকায়। তারা জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
এই পাল্টাপাল্টি হামলার সূচনা হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে, যখন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরান, ইসফাহান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। ইরান দাবি করেছে, ওই হামলায় তাদের অন্তত ৭৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আহত হয়েছেন আরও ৩২০ জন।
এই ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইরান থেকে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে থাকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। এমন হামলার পর ইসরায়েলে বহু মানুষ নিরাপত্তার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান, স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই সংঘর্ষে বেসামরিক মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কি সরাসরি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে? পরবর্তী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা পরিস্থিতি শান্ত করতে কতটা কার্যকর হয়, তা এখন গোটা বিশ্বের নজরকাড়া একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, হারেৎজ, আল-জাজিরা, বিবিসি
Please Share This Post in Your Social Media

ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ: বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত, হতাহত শতাধিক

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবার সরাসরি যুদ্ধের রূপ নিচ্ছে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শুক্রবার দিন ও রাতে একযোগে ব্যাপক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে। ইরান দাবি করছে, এটি ছিল একটি ‘ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরানি হামলায় ইসরায়েলে বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে শতাধিক।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ইরানের ছোঁড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে বাড়িঘর ধসে পড়েছে। উদ্ধারকাজে নিযুক্ত জরুরি চিকিৎসা কর্মীদের বরাতে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অন্তত দুজন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহতদের মধ্যে ৬০ বছর বয়সী এক নারী আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
একইভাবে ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ জানায়, ইরানের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন। হামলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে বিস্ফোরণের শব্দ রাজধানী জেরুজালেম পর্যন্ত পৌঁছায় এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি চিকিৎসা ও রক্ত পরিষেবা সংস্থা ‘মাগেন ডেভিড অ্যাডম’ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরানি হামলায় হালকা থেকে মাঝারি আহত অন্তত ১০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় মোট আহতের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়েছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, ইরানের ছোঁড়া আরও একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যারেজ তারা ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে বেসামরিক এলাকায়। তারা জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।
এই পাল্টাপাল্টি হামলার সূচনা হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে, যখন ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরান, ইসফাহান ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এবং একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। ইরান দাবি করেছে, ওই হামলায় তাদের অন্তত ৭৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আহত হয়েছেন আরও ৩২০ জন।
এই ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইরান থেকে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে থাকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে। এমন হামলার পর ইসরায়েলে বহু মানুষ নিরাপত্তার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান, স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই সংঘর্ষে বেসামরিক মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কি সরাসরি যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে? পরবর্তী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা পরিস্থিতি শান্ত করতে কতটা কার্যকর হয়, তা এখন গোটা বিশ্বের নজরকাড়া একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, হারেৎজ, আল-জাজিরা, বিবিসি