সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন শিখর

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • / ১৩৬ Time View

1749780145 72088171239bbc03c467883bfa12d9ee

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
1749780145 72088171239bbc03c467883bfa12d9ee
 আইআরজিসি কমান্ডার হোসেইন সালামি

 

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বার্তা সংস্থাগুলোর বরাতে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। হামলায় সালামির সঙ্গে আরও এক শীর্ষ আইআরজিসি কর্মকর্তা এবং দুজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলের পিরুজি সড়কে অবস্থিত আইআরজিসি সদরদপ্তরে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম প্রেস টিভি বিস্ফোরণের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়—সামরিক ভবনটিতে ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইরানের জন্য এক বড় ধরনের কৌশলগত ক্ষতি। আইআরজিসি শুধু ইরানের সামরিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং এটি রাজনৈতিক, গোয়েন্দা ও আঞ্চলিক নীতিনির্ধারণে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই বাহিনী ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বিভিন্ন প্রভাব বিস্তারের কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত।

লক্ষ্যবস্তু ছিল উচ্চপর্যায়ের সামরিক পারমাণবিক অবকাঠামো

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Axios জানায়, ইসরায়েলের এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক সদরদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া, ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, হামলা শুধু সামরিক স্থাপনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না—তেহরানের একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়া: “ফল ভোগ করার পালা এখন শুরু”

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ইরান এই আগ্রাসনের যথাযথ ও কঠোর জবাব দেবে। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলকে অবশ্যই এর ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” ইরান সরাসরি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, “এখন ফল ভোগ করার পালা।”

এমন একটি সময়ে এই হামলা ঘটল, যখন মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চলমান উত্তেজনা ও গাজা যুদ্ধের অভিঘাতে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত জটিল হয়ে উঠছে। গত মাসেই আইআরজিসি দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছিল, যার জবাবে ইসরায়েল এই সামরিক অভিযান শুরু করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উত্তরাধিকার প্রতিশোধ: কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?

বিশ্লেষকরা বলছেন, হোসেইন সালামির মতো একজন প্রভাবশালী সামরিক নেতার মৃত্যুর পর ইরান কেবল প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতিই নেবে না, বরং আঞ্চলিক মিত্রদের (যেমন হিজবুল্লাহ, হুতি, এবং ইরাকের শিয়া মিলিশিয়ারা) মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা করবে। এ ঘটনার জেরে ইসরায়েল, মার্কিন ঘাঁটি ও উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থাপনাগুলোতে হামলার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, এই ঘটনাই হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতের সূচনা করে দিতে পারে।

পরিশেষে, হোসেইন সালামির মৃত্যু শুধু ইরানের জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্যই এক নতুন অনিশ্চয়তার দিক উন্মোচন করেছে। সময়ই বলে দেবে—এই আঘাতের প্রতিশোধ কেমন হয় এবং তা বিশ্বশান্তির ওপর কতটা প্রভাব ফেলে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন শিখর

Update Time : ১০:৪৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
1749780145 72088171239bbc03c467883bfa12d9ee
 আইআরজিসি কমান্ডার হোসেইন সালামি

 

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বার্তা সংস্থাগুলোর বরাতে এই তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। হামলায় সালামির সঙ্গে আরও এক শীর্ষ আইআরজিসি কর্মকর্তা এবং দুজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলের পিরুজি সড়কে অবস্থিত আইআরজিসি সদরদপ্তরে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম প্রেস টিভি বিস্ফোরণের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়—সামরিক ভবনটিতে ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইরানের জন্য এক বড় ধরনের কৌশলগত ক্ষতি। আইআরজিসি শুধু ইরানের সামরিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু নয়, বরং এটি রাজনৈতিক, গোয়েন্দা ও আঞ্চলিক নীতিনির্ধারণে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই বাহিনী ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বিভিন্ন প্রভাব বিস্তারের কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত।

লক্ষ্যবস্তু ছিল উচ্চপর্যায়ের সামরিক পারমাণবিক অবকাঠামো

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Axios

জানায়, ইসরায়েলের এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক সদরদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া, ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, হামলা শুধু সামরিক স্থাপনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না—তেহরানের একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শোক ও ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ইরানের কড়া প্রতিক্রিয়া: “ফল ভোগ করার পালা এখন শুরু”

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ইরান এই আগ্রাসনের যথাযথ ও কঠোর জবাব দেবে। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলকে অবশ্যই এর ভয়াবহ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” ইরান সরাসরি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, “এখন ফল ভোগ করার পালা।”

এমন একটি সময়ে এই হামলা ঘটল, যখন মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে চলমান উত্তেজনা ও গাজা যুদ্ধের অভিঘাতে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত জটিল হয়ে উঠছে। গত মাসেই আইআরজিসি দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছিল, যার জবাবে ইসরায়েল এই সামরিক অভিযান শুরু করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উত্তরাধিকার প্রতিশোধ: কী হতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ?

বিশ্লেষকরা বলছেন, হোসেইন সালামির মতো একজন প্রভাবশালী সামরিক নেতার মৃত্যুর পর ইরান কেবল প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতিই নেবে না, বরং আঞ্চলিক মিত্রদের (যেমন হিজবুল্লাহ, হুতি, এবং ইরাকের শিয়া মিলিশিয়ারা) মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পরিকল্পনা করবে। এ ঘটনার জেরে ইসরায়েল, মার্কিন ঘাঁটি ও উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থাপনাগুলোতে হামলার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে উদ্বেগও বাড়ছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, এই ঘটনাই হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতের সূচনা করে দিতে পারে।

পরিশেষে, হোসেইন সালামির মৃত্যু শুধু ইরানের জন্য নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্যই এক নতুন অনিশ্চয়তার দিক উন্মোচন করেছে। সময়ই বলে দেবে—এই আঘাতের প্রতিশোধ কেমন হয় এবং তা বিশ্বশান্তির ওপর কতটা প্রভাব ফেলে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share