সময়: মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

এক মাসে ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিল জনগণ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:২৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • / ১০০ Time View

Bangladesh bank01

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Bangladesh bank01

২০২৫ সালের মার্চ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মাসে ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা প্রায় ২৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। যার ফলে মার্চ শেষে হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।

এই অস্বাভাবিক প্রবণতার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। মার্চে পালিত হয়েছে পবিত্র রমজান ঈদুল ফিতর। ফলে সাধারণতই ওই সময়ে মানুষের মধ্যে কেনাকাটা ও দান-সদকার জন্য নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এই বছর একটি বাড়তি চাপ তৈরি করে কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন গুজব। বিশেষ করে কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আলোচনায় আসে, যা গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়ায়। অনেকে নিরাপদ রাখতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটিতে। কিন্তু মার্চে তা হঠাৎ বেড়ে যায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটিতে। একই সঙ্গে মার্চে বাজারে

প্রচলিত মুদ্রা (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন)ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) উভয়ই বেড়ে যায়। ছাপানো টাকা দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটিতে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের নগদ টাকার প্রবাহ অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যদি তা আতঙ্ক-প্রসূত হয়। বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ব্যাংক টিকে থাকে আস্থার ওপর। আতঙ্কিত হয়ে হঠাৎ করে আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনা অর্থনীতির জন্য ভালো সংকেত নয়।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাংক খাতের আস্থা সংকট

গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত হাতে নগদ টাকার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছিল। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে অনিয়ম লুটপাট ব্যাপক আকারে হয়েছিল। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদার–এর মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল। অনেক আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ওই সময় ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেন বা অনিয়মে জড়িত ছিলেন।

ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ব্যাংককে রক্ষায় টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করে, যার প্রভাব পড়ে বাজারে মুদ্রাস্ফীতিতে। সরকার পরিবর্তনের পর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

নতুন উদ্যোগ: পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে এক

আর্থিক দুর্বলতায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক

এই ব্যাংকগুলোর মালিকানায় রয়েছে এস আলম গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদার। নতুন ব্যাংকের মূলধন দেবে সরকার এবং তা এসএমই খাতে অর্থায়ন করবে বলে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না এবং ব্যাংকারদের চাকরি প্রাথমিকভাবে বহাল থাকবে।

 

বিশ্লেষণ:
এই ধরনের নগদ টাকার হঠাৎ প্রবাহ, ব্যাংক খাতে একীভূতকরণ এবং অতীতে অনিয়ম-দুর্নীতির ইতিহাস প্রমাণ করে, ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা এখনো পুরোপুরি ফিরেনি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুদের হার নীতিমালা এবং সুশাসনের মাধ্যমে কেবল এই খাত পুনরুদ্ধার সম্ভব

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

এক মাসে ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিল জনগণ

Update Time : ১১:২৪:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Bangladesh bank01

২০২৫ সালের মার্চ মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মাসে ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা প্রায় ২৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। যার ফলে মার্চ শেষে হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।

এই অস্বাভাবিক প্রবণতার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। মার্চে পালিত হয়েছে পবিত্র রমজান ঈদুল ফিতর। ফলে সাধারণতই ওই সময়ে মানুষের মধ্যে কেনাকাটা ও দান-সদকার জন্য নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এই বছর একটি বাড়তি চাপ তৈরি করে কিছু ব্যাংক বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন গুজব। বিশেষ করে কয়েকটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত আলোচনায় আসে, যা গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়ায়। অনেকে নিরাপদ রাখতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটিতে। কিন্তু মার্চে তা হঠাৎ বেড়ে যায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটিতে। একই সঙ্গে মার্চে বাজারে

প্রচলিত মুদ্রা (কারেন্সি ইন সার্কুলেশন)ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) উভয়ই বেড়ে যায়। ছাপানো টাকা দাঁড়ায় ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটিতে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের নগদ টাকার প্রবাহ অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যদি তা আতঙ্ক-প্রসূত হয়। বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ব্যাংক টিকে থাকে আস্থার ওপর। আতঙ্কিত হয়ে হঠাৎ করে আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনা অর্থনীতির জন্য ভালো সংকেত নয়।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ব্যাংক খাতের আস্থা সংকট

গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত হাতে নগদ টাকার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছিল। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতে অনিয়ম লুটপাট ব্যাপক আকারে হয়েছিল। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদার–এর মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল। অনেক আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ওই সময় ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেন বা অনিয়মে জড়িত ছিলেন।

ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক ব্যাংককে রক্ষায় টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করে, যার প্রভাব পড়ে বাজারে মুদ্রাস্ফীতিতে। সরকার পরিবর্তনের পর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

নতুন উদ্যোগ: পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে এক

আর্থিক দুর্বলতায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ইসলামি ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে:

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
  • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ইউনিয়ন ব্যাংক
  • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
  • এক্সিম ব্যাংক

এই ব্যাংকগুলোর মালিকানায় রয়েছে এস আলম গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদার। নতুন ব্যাংকের মূলধন দেবে সরকার এবং তা এসএমই খাতে অর্থায়ন করবে বলে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গ্রাহকদের লেনদেনে কোনো সমস্যা হবে না এবং ব্যাংকারদের চাকরি প্রাথমিকভাবে বহাল থাকবে।

 

বিশ্লেষণ:
এই ধরনের নগদ টাকার হঠাৎ প্রবাহ, ব্যাংক খাতে একীভূতকরণ এবং অতীতে অনিয়ম-দুর্নীতির ইতিহাস প্রমাণ করে, ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা এখনো পুরোপুরি ফিরেনি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুদের হার নীতিমালা এবং সুশাসনের মাধ্যমে কেবল এই খাত পুনরুদ্ধার সম্ভব

শেয়ার করুনঃ
Pin Share