সৌদি আরবকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করলো অস্ট্রেলিয়া

- Update Time : ০৬:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / ১১৮ Time View
অস্ট্রেলিয়া আবারও প্রমাণ করলো তারা এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনের এক দুর্দান্ত শক্তি। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে সৌদি আরবকে ২-১ গোলে হারিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে ‘সকারুজ’ খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দল। এই জয়ের মাধ্যমে তারা ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো।
নাটকীয় লড়াইয়ে সৌদি আরবকে হতাশ করলো ‘সকারুজ’
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে সৌদি আরবের জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটির আল ইনমা ব্যাংক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রতীক্ষিত এই ম্যাচ। যেখানে সৌদি আরবের সামনে ছিল কঠিন সমীকরণ—বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়াকে অন্তত পাঁচ গোলের ব্যবধানে হারাতে হতো। কিন্তু ম্যাচের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। মাঠে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথমার্ধের ১৯তম মিনিটে স্বাগতিক সৌদি আরব এগিয়ে যায় আব্দুলরহমান আল-ওবুদের দুর্দান্ত গোলে। তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো সৌদিরা ইতিহাস গড়তে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়া দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে কনর মেটকাফের গোল দলকে সমতায় ফেরায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মার্টিন বয়েলের ক্রস থেকে হেডে গোল করে মিচেল ডিউক অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে দেন ২-১ ব্যবধানে। এরপর সৌদি আরব একাধিকবার আক্রমণ চালালেও গোল আদায় করে নিতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে ৮৪তম মিনিটে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করে সৌদি। কারণ, গোলরক্ষক ম্যাটি রায়ান অসাধারণ দক্ষতায় বল ঠেকিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন।
অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপে জায়গা, প্রশংসায় ভাসছে কোচ পোপোভিচ
অস্ট্রেলিয়ার কোচ টনি পোপোভিচ, যিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার অধীনে দলটি বাছাইপর্বে একটিও ম্যাচ হারেনি। এই ধারাবাহিকতা এবং পরিপক্ব খেলার জন্য কোচের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সাবেক খেলোয়াড় ও বিশ্লেষকরা।
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার লুক উইকশায়ার এই জয়কে একটি ‘পেশাদার পারফরম্যান্স’ বলে অভিহিত করেন এবং পোপোভিচের কৌশলগত দূরদর্শিতাকে ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন।
বাকি পাঁচ দলও প্রস্তুত, পূর্ণ হলো এশিয়ার কোটা
এই জয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য এশিয়া থেকে নির্ধারিত ছয়টি দলের তালিকা পূর্ণ হলো। আগেই জায়গা নিশ্চিত করেছিল পাঁচটি দেশ: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, কাতার ও ওমান।
সর্বশেষ এই ষষ্ঠ স্থানটি ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। শেষ হাসি হাসলো অস্ট্রেলিয়াই।
অন্যান্য ম্যাচের ফলাফলও নজরকাড়া
এদিন এশিয়ার আরও কিছু ম্যাচেও দেখা যায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল।
- জাপান ৬-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ইন্দোনেশিয়াকে, যেখানে দাইচি কামাদা করেন জোড়া গোল।
- দক্ষিণ কোরিয়া কুয়েতকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে।
- ওমান ১-১ গোলে ড্র করে প্যালেস্টাইনের সঙ্গে, যা তাদের পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়ার টানা বিশ্বকাপ যাত্রার ধারা অব্যাহত
২০০৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া টানা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে। ২০২৬ বিশ্বকাপে যোগদানের মাধ্যমে তারা সেই ধারাকে অব্যাহত রাখলো। প্রতিবারের মতো এবারও তারা ফুটবলবিশ্বে নিজেদের প্রতিভা ও প্রস্তুতির জানান দিলো।
এই জয় অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফুটবল বিশ্বে তাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করলো এই অর্জন। এখন দেখার বিষয়, আসন্ন বিশ্বকাপে তারা কতদূর যেতে পারে এবং বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোর সঙ্গে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়।
ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এটা শুধু একটা ম্যাচ নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার গল্প—সাহস, কৌশল আর নির্ভুল পরিকল্পনার জয়।
Please Share This Post in Your Social Media

সৌদি আরবকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করলো অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া আবারও প্রমাণ করলো তারা এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনের এক দুর্দান্ত শক্তি। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বে সৌদি আরবকে ২-১ গোলে হারিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে ‘সকারুজ’ খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দল। এই জয়ের মাধ্যমে তারা ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো।
নাটকীয় লড়াইয়ে সৌদি আরবকে হতাশ করলো ‘সকারুজ’
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাতে সৌদি আরবের জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটির আল ইনমা ব্যাংক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রতীক্ষিত এই ম্যাচ। যেখানে সৌদি আরবের সামনে ছিল কঠিন সমীকরণ—বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়াকে অন্তত পাঁচ গোলের ব্যবধানে হারাতে হতো। কিন্তু ম্যাচের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। মাঠে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথমার্ধের ১৯তম মিনিটে স্বাগতিক সৌদি আরব এগিয়ে যায় আব্দুলরহমান আল-ওবুদের দুর্দান্ত গোলে। তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো সৌদিরা ইতিহাস গড়তে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়া দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে কনর মেটকাফের গোল দলকে সমতায় ফেরায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মার্টিন বয়েলের ক্রস থেকে হেডে গোল করে মিচেল ডিউক অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে দেন ২-১ ব্যবধানে। এরপর সৌদি আরব একাধিকবার আক্রমণ চালালেও গোল আদায় করে নিতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে ৮৪তম মিনিটে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করে সৌদি। কারণ, গোলরক্ষক ম্যাটি রায়ান অসাধারণ দক্ষতায় বল ঠেকিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন।
অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপে জায়গা, প্রশংসায় ভাসছে কোচ পোপোভিচ
অস্ট্রেলিয়ার কোচ টনি পোপোভিচ, যিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার অধীনে দলটি বাছাইপর্বে একটিও ম্যাচ হারেনি। এই ধারাবাহিকতা এবং পরিপক্ব খেলার জন্য কোচের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সাবেক খেলোয়াড় ও বিশ্লেষকরা।
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্ডার লুক উইকশায়ার এই জয়কে একটি ‘পেশাদার পারফরম্যান্স’ বলে অভিহিত করেন এবং পোপোভিচের কৌশলগত দূরদর্শিতাকে ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন।
বাকি পাঁচ দলও প্রস্তুত, পূর্ণ হলো এশিয়ার কোটা
এই জয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য এশিয়া থেকে নির্ধারিত ছয়টি দলের তালিকা পূর্ণ হলো। আগেই জায়গা নিশ্চিত করেছিল পাঁচটি দেশ: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, কাতার ও ওমান।
সর্বশেষ এই ষষ্ঠ স্থানটি ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। শেষ হাসি হাসলো অস্ট্রেলিয়াই।
অন্যান্য ম্যাচের ফলাফলও নজরকাড়া
এদিন এশিয়ার আরও কিছু ম্যাচেও দেখা যায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল।
- জাপান ৬-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ইন্দোনেশিয়াকে, যেখানে দাইচি কামাদা করেন জোড়া গোল।
- দক্ষিণ কোরিয়া কুয়েতকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে।
- ওমান ১-১ গোলে ড্র করে প্যালেস্টাইনের সঙ্গে, যা তাদের পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করে দেয়।
অস্ট্রেলিয়ার টানা বিশ্বকাপ যাত্রার ধারা অব্যাহত
২০০৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া টানা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে। ২০২৬ বিশ্বকাপে যোগদানের মাধ্যমে তারা সেই ধারাকে অব্যাহত রাখলো। প্রতিবারের মতো এবারও তারা ফুটবলবিশ্বে নিজেদের প্রতিভা ও প্রস্তুতির জানান দিলো।
এই জয় অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফুটবল বিশ্বে তাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করলো এই অর্জন। এখন দেখার বিষয়, আসন্ন বিশ্বকাপে তারা কতদূর যেতে পারে এবং বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোর সঙ্গে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়।
ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এটা শুধু একটা ম্যাচ নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার গল্প—সাহস, কৌশল আর নির্ভুল পরিকল্পনার জয়।