ফের করোনার ছায়া, নতুন ভ্যারিয়েন্টের হুমকিতে বাংলাদেশ—সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ কড়া নির্দেশনা

- Update Time : ০৫:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / ৯৯ Time View
বিশ্বজুড়ে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। শনাক্ত হচ্ছে ভাইরাসটির একের পর এক নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি থেকে বাদ যাচ্ছে না বাংলাদেশও। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক যাত্রীর মাধ্যমে ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে আগেভাগেই সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অতীতের মতো আবারও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ। তাই বন্দরগুলোতে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ৭টি জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা জানান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। ইতোমধ্যে একাধিক নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এসব ভ্যারিয়েন্ট দেশের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন সম্ভাবনায় আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছি।”
দেশের প্রতিটি স্থলবন্দর, বিমানবন্দর এবং নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (IHR) মেনে পরিচালিত ডেস্কগুলোকে বাড়তি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই ডেস্কগুলোর মাধ্যমে বিদেশফেরত যাত্রীদের শারীরিক লক্ষণ পরীক্ষা, স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্যপরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ দিকনির্দেশনা
সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৭টি স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা মেনে চললেই সংক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। নির্দেশনাগুলো হলো:
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন।
২. নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় কনুই বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে কাশুন।
4. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
৫. সাবান ও পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
টেস্ট, চিকিৎসা ও হাসপাতাল প্রস্তুতির সার্বিক পরিকল্পনা
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশে আবারও আরটি–পিসিআর এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সকল কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- প্রয়োজনীয় টিকা মজুদ,
- ওষুধ ও অক্সিজেন সরবরাহ
- হাই–ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর,
- আইসিইউ ও এইচডিইউ বেডের প্রাপ্যতা
সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের জন্য সরবরাহ করা হবে কেএন–৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রস্তুতি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি
স্বাস্থ্য অধিদফতর সতর্ক করে বলেছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর মাধ্যমেই দেশে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য বন্দরগুলোতে আইএইচআর ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং, ট্রেসিং এবং আইসোলেশনের বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অতীত অভিজ্ঞতা যেন ভবিষ্যতের শিক্ষা হয়
২০২০ থেকে ২০২2 সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। হাসপাতালের শয্যাভর্তি, অক্সিজেন সংকট, প্রিয়জন হারানো—এই স্মৃতিগুলো যেন আর ফিরতে না আসে। তাই এইবার শুরুতেই সক্রিয় হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র। তবে শুধু সরকারি প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।
করোনা এখন আর অতীত নয়, এটি একটি চলমান হুমকি। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো অজানা এবং অনেক সময় আগের টিকার প্রতিও প্রতিরোধক্ষম। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এবং অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
সতর্ক থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন—নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান।
Please Share This Post in Your Social Media

ফের করোনার ছায়া, নতুন ভ্যারিয়েন্টের হুমকিতে বাংলাদেশ—সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ কড়া নির্দেশনা

বিশ্বজুড়ে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে করোনাভাইরাস। শনাক্ত হচ্ছে ভাইরাসটির একের পর এক নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি থেকে বাদ যাচ্ছে না বাংলাদেশও। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক যাত্রীর মাধ্যমে ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে আগেভাগেই সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অতীতের মতো আবারও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে দেশ। তাই বন্দরগুলোতে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ৭টি জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা জানান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। ইতোমধ্যে একাধিক নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে এসব ভ্যারিয়েন্ট দেশের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে—এমন সম্ভাবনায় আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছি।”
দেশের প্রতিটি স্থলবন্দর, বিমানবন্দর এবং নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (IHR) মেনে পরিচালিত ডেস্কগুলোকে বাড়তি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই ডেস্কগুলোর মাধ্যমে বিদেশফেরত যাত্রীদের শারীরিক লক্ষণ পরীক্ষা, স্ক্রিনিং এবং স্বাস্থ্যপরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ দিকনির্দেশনা
সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৭টি স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা মেনে চললেই সংক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। নির্দেশনাগুলো হলো:
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন।
২. নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় কনুই বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে কাশুন।
4. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
৫. সাবান ও পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. করোনায় আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
টেস্ট, চিকিৎসা ও হাসপাতাল প্রস্তুতির সার্বিক পরিকল্পনা
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশে আবারও আরটি–পিসিআর এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সকল কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- প্রয়োজনীয় টিকা মজুদ,
- ওষুধ ও অক্সিজেন সরবরাহ
- হাই–ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর,
- আইসিইউ ও এইচডিইউ বেডের প্রাপ্যতা
সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদের জন্য সরবরাহ করা হবে কেএন–৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রস্তুতি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকি
স্বাস্থ্য অধিদফতর সতর্ক করে বলেছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর মাধ্যমেই দেশে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য বন্দরগুলোতে আইএইচআর ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং, ট্রেসিং এবং আইসোলেশনের বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অতীত অভিজ্ঞতা যেন ভবিষ্যতের শিক্ষা হয়
২০২০ থেকে ২০২2 সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। হাসপাতালের শয্যাভর্তি, অক্সিজেন সংকট, প্রিয়জন হারানো—এই স্মৃতিগুলো যেন আর ফিরতে না আসে। তাই এইবার শুরুতেই সক্রিয় হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র। তবে শুধু সরকারি প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়, প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতাই হতে পারে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।
করোনা এখন আর অতীত নয়, এটি একটি চলমান হুমকি। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো অজানা এবং অনেক সময় আগের টিকার প্রতিও প্রতিরোধক্ষম। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এবং অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
সতর্ক থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন—নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান।