সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইউনূস-তারেক বৈঠক আয়োজনের নেপথ্যে কে!

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:৫৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • / ১০৯ Time View

1749580570 2138bf7d74a5c8e4a4fa1e23eb9ea2d1

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1749580570 2138bf7d74a5c8e4a4fa1e23eb9ea2d1

ঈদের ছুটির আমেজের মধ্যেই দেশের রাজনীতির পটভূমিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আসন্ন শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি—যেখানে মুখোমুখি হবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বৈঠকটি শুধু দুজন রাজনৈতিক নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রোডম্যাপ, ও বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও রোডম্যাপ নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে এ বৈঠকের তাৎপর্য আরও গভীর হয়ে উঠেছে। বিশেষত, এপ্রিলের প্রথম ভাগে নির্বাচন আয়োজনের সরকারের ঘোষণার পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এর আগে সরকার ও বিএনপির মধ্যে কোনো উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন নিয়ে নানা জটিলতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল।

বিভিন্ন দফায় সরকারি ও কূটনৈতিক চ্যানেল থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি অবশেষে বৈঠকে সম্মতি জানায়। নির্ধারিত হয়েছে, লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে হাইড পার্ক সংলগ্ন ডরচেস্টার হোটেলে দুই শীর্ষনেতার মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চার দিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে পৌঁছেছেন এবং ঐ হোটেলেই অবস্থান করছেন।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে হারমোনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের উপলক্ষে ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের ঘোষণার পরই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা গতি পায়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেও, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে এখনো সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি প্রধান উপদেষ্টার। এ কারণেই প্রথম বিদেশ সফরে এ সাক্ষাতের সম্ভাবনা ঘিরে রাজনীতি ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

সরকারের তরফে তারেক রহমানকে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাতের প্রস্তাব পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত ১৩ জুন শুক্রবার সকালেই এই বৈঠক নির্ধারণ হয় এবং কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই চ্যানেলেই এটি নিশ্চিত করা হয়। বিএনপি সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টাদের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই এই বৈঠকের আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।

তবে শুরুতে বিএনপি এই বৈঠকে অংশ নিতে অনাগ্রহী ছিল। কারণ, নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সরকারের কিছু কার্যক্রম দলটির মধ্যে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। তদুপরি, সরকার বিএনপির অপছন্দের একজন উপদেষ্টাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব দিলে বৈঠকটি আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতায় বিএনপি ওই উপদেষ্টার উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছিল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠলেও, শেষমেশ বিএনপি মহাসচিব ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বৈঠকের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়।

ঈদের ছুটিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক মহলে এই বৈঠকের আয়োজন নিয়ে তৎপরতা চালু ছিল। রবিবার ও সোমবার সম্ভাব্য বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় ড. ইউনূস লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির তরফে আনুষ্ঠানিক সম্মতির ঘোষণা আসেনি।

পরে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং দলের নেতাদের মতামত জানতে চান। বিস্তৃত আলোচনার পর নির্বাচনের সময়সূচি ও অন্যান্য স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সরাসরি সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন বিবেচনায় তাকে বৈঠকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে দলের পক্ষে সব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়।

গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বৈঠক সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, বর্তমান সরকারপ্রধান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সরকারের প্রধানের মধ্যে এই আলোচনা হতে পারে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের মোড় ঘোরানো একটি টার্নিং পয়েন্ট। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আলোচনা থেকেই উদ্ভব হবে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই বৈঠক একদিকে যেমন দুই পক্ষের মতামত ও অবস্থান জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, অন্যদিকে তা আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা, সময়সূচি, ও অংশগ্রহণমূলকতা নিয়েও একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বৈঠকে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ইউনূস-তারেক বৈঠক আয়োজনের নেপথ্যে কে!

Update Time : ১২:৫৬:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

1749580570 2138bf7d74a5c8e4a4fa1e23eb9ea2d1

ঈদের ছুটির আমেজের মধ্যেই দেশের রাজনীতির পটভূমিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আসন্ন শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি—যেখানে মুখোমুখি হবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বৈঠকটি শুধু দুজন রাজনৈতিক নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রোডম্যাপ, ও বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ও রোডম্যাপ নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে এ বৈঠকের তাৎপর্য আরও গভীর হয়ে উঠেছে। বিশেষত, এপ্রিলের প্রথম ভাগে নির্বাচন আয়োজনের সরকারের ঘোষণার পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এর আগে সরকার ও বিএনপির মধ্যে কোনো উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন নিয়ে নানা জটিলতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল।

বিভিন্ন দফায় সরকারি ও কূটনৈতিক চ্যানেল থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি অবশেষে বৈঠকে সম্মতি জানায়। নির্ধারিত হয়েছে, লন্ডনের স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে হাইড পার্ক সংলগ্ন ডরচেস্টার হোটেলে দুই শীর্ষনেতার মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে চার দিনের সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস লন্ডনে পৌঁছেছেন এবং ঐ হোটেলেই অবস্থান করছেন।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে হারমোনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের উপলক্ষে ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের ঘোষণার পরই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা গতি পায়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেও, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে এখনো সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি প্রধান উপদেষ্টার। এ কারণেই প্রথম বিদেশ সফরে এ সাক্ষাতের সম্ভাবনা ঘিরে রাজনীতি ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

সরকারের তরফে তারেক রহমানকে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাতের প্রস্তাব পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত ১৩ জুন শুক্রবার সকালেই এই বৈঠক নির্ধারণ হয় এবং কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক দুই চ্যানেলেই এটি নিশ্চিত করা হয়। বিএনপি সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টাদের সক্রিয় ভূমিকার কারণেই এই বৈঠকের আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।

তবে শুরুতে বিএনপি এই বৈঠকে অংশ নিতে অনাগ্রহী ছিল। কারণ, নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সরকারের কিছু কার্যক্রম দলটির মধ্যে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। তদুপরি, সরকার বিএনপির অপছন্দের একজন উপদেষ্টাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব দিলে বৈঠকটি আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতায় বিএনপি ওই উপদেষ্টার উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছিল। পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠলেও, শেষমেশ বিএনপি মহাসচিব ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বৈঠকের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়।

ঈদের ছুটিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক মহলে এই বৈঠকের আয়োজন নিয়ে তৎপরতা চালু ছিল। রবিবার ও সোমবার সম্ভাব্য বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় ড. ইউনূস লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির তরফে আনুষ্ঠানিক সম্মতির ঘোষণা আসেনি।

পরে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং দলের নেতাদের মতামত জানতে চান। বিস্তৃত আলোচনার পর নির্বাচনের সময়সূচি ও অন্যান্য স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সরাসরি সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন বিবেচনায় তাকে বৈঠকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে দলের পক্ষে সব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়।

গতকাল গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বৈঠক সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, বর্তমান সরকারপ্রধান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সরকারের প্রধানের মধ্যে এই আলোচনা হতে পারে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের মোড় ঘোরানো একটি টার্নিং পয়েন্ট। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আলোচনা থেকেই উদ্ভব হবে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই বৈঠক একদিকে যেমন দুই পক্ষের মতামত ও অবস্থান জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, অন্যদিকে তা আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা, সময়সূচি, ও অংশগ্রহণমূলকতা নিয়েও একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বৈঠকে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share