শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ

- Update Time : ০৬:১৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ৯০ Time View
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গুমের শিকার নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার (৩ জুন) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এই অভিযোগে মূলত তার ২০১৫ সালের গুমের ঘটনার বিচার চাওয়া হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে।
অভিযোগ দাখিলের প্রেক্ষাপট
সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হন। তার সন্ধান পাওয়া যায় ৬২ দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে, যেখানে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় আটক করে। পরে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট’-এ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর তিনি ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে এবং ২০২৩ সালে আপিল আদালতে খালাস পান। তারপরও তাকে ভারতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়, পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারেননি।
২০২৩ সালের ৮ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন এবং ২০২3 সালের আগস্টে দেশে ফেরেন। এরপর থেকেই তিনি তার গুমের ঘটনায় বিচার দাবি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযুক্তদের তালিকা
সালাহউদ্দিনের দাখিল করা অভিযোগে যে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন:
- শেখ হাসিনা – সাবেক প্রধানমন্ত্রী
- আসাদুজ্জামান খান কামাল – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- বেনজীর আহমেদ – সাবেক আইজিপি
- এ কে এম শহিদুল হক – সাবেক আইজিপি
- আসাদুজ্জামান মিয়া – সাবেক ডিএমপি কমিশনার
- জিয়াউল আহসান – সাবেক সেনা কর্মকর্তা
- মনিরুল ইসলাম – গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক উপকমিশনার
আইনি সহায়তাকারীরা
অভিযোগ দাখিলের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইনজীবী দলের একাধিক সদস্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হলো ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ অভিযোগ গ্রহণ করেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও তাৎপর্য
সালাহউদ্দিন আহমেদের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশে গুম, নিখোঁজ ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নবিষয়ক আলোচনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিরোধীদলীয় একজন শীর্ষ নেতার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের নিঃসন্দেহে দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ঘটনা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ দাখিল নিছক একটি আইনি পদক্ষেপ নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও। এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের স্বচ্ছতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগ কীভাবে গ্রহণ করে এবং বিচার প্রক্রিয়া কোন দিকে অগ্রসর হয়।
এ ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বাড়তি মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন। গুমের মত গুরুতর অভিযোগের বিচার হলে তা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গুমের শিকার নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার (৩ জুন) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এই অভিযোগে মূলত তার ২০১৫ সালের গুমের ঘটনার বিচার চাওয়া হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে।
অভিযোগ দাখিলের প্রেক্ষাপট
সালাহউদ্দিন আহমেদ রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ নিখোঁজ হন। তার সন্ধান পাওয়া যায় ৬২ দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে, যেখানে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় আটক করে। পরে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট’-এ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর তিনি ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে এবং ২০২৩ সালে আপিল আদালতে খালাস পান। তারপরও তাকে ভারতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়, পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়ায় দেশে ফিরতে পারেননি।
২০২৩ সালের ৮ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন এবং ২০২3 সালের আগস্টে দেশে ফেরেন। এরপর থেকেই তিনি তার গুমের ঘটনায় বিচার দাবি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযুক্তদের তালিকা
সালাহউদ্দিনের দাখিল করা অভিযোগে যে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা হলেন:
- শেখ হাসিনা – সাবেক প্রধানমন্ত্রী
- আসাদুজ্জামান খান কামাল – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- বেনজীর আহমেদ – সাবেক আইজিপি
- এ কে এম শহিদুল হক – সাবেক আইজিপি
- আসাদুজ্জামান মিয়া – সাবেক ডিএমপি কমিশনার
- জিয়াউল আহসান – সাবেক সেনা কর্মকর্তা
- মনিরুল ইসলাম – গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক উপকমিশনার
আইনি সহায়তাকারীরা
অভিযোগ দাখিলের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির আইনজীবী দলের একাধিক সদস্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হলো ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ অভিযোগ গ্রহণ করেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও তাৎপর্য
সালাহউদ্দিন আহমেদের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশে গুম, নিখোঁজ ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নবিষয়ক আলোচনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিরোধীদলীয় একজন শীর্ষ নেতার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের নিঃসন্দেহে দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ঘটনা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ দাখিল নিছক একটি আইনি পদক্ষেপ নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তাও। এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের স্বচ্ছতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ অভিযোগ কীভাবে গ্রহণ করে এবং বিচার প্রক্রিয়া কোন দিকে অগ্রসর হয়।
এ ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক মহলে নয়, মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও বাড়তি মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন। গুমের মত গুরুতর অভিযোগের বিচার হলে তা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করতে পারে।