ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মদিনা লাইব্রেরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ- স্কুল ও লাইব্রেরির যোগসাজশে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

- Update Time : ১১:৪৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ২১৪ Time View
নতুন প্রতিদিন ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২ জুন ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মদিনা লাইব্রেরিকে ঘিরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মহলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি জোর করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নির্দিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বই কিনতে বাধ্য করছে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক ধরনের বাণিজ্যিক চাপ এবং দুর্নীতিরই নামান্তর।
ঘটনার সূত্রপাত এক অভিভাবকের সরাসরি অভিযোগ থেকে। তিনি জানান, তার সন্তানের স্কুল থেকে “Perfection in English Grammar” নামের একটি ইংরেজি ব্যাকরণ বই কেনার সুপারিশ করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বইটি মাদিনা লাইব্রেরি থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু লাইব্রেরিতে গিয়ে তিনি শুধু ওই নির্দিষ্ট বইটি কিনতে চাইলে, বিক্রেতা তাকে বলেন, ইংরেজি বইটি আলাদা বিক্রি করা যাবে না – এটি বাংলা ব্যাকরণ বইসহ সম্পূর্ণ সেট হিসেবে কিনতে হবে।
অভিভাবক সেই পরিস্থিতিতে লাইব্রেরির মালিক মো. সাবেরের কাছে সরাসরি অনুরোধ জানালে, তিনি আরও বিস্ময়কর বক্তব্য দেন – “স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের নির্দেশ অনুযায়ী, পুরো সেট না কিনলে আমরা বই বিক্রি করি না।” বহুবার অনুরোধ করার পরও মালিক কোনো নমনীয়তা দেখাননি এবং অব্যাহতভাবে অভদ্র আচরণ করতে থাকেন বলে অভিযোগকারীর দাবি।এ ধরনের অনেক অভিযোগ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল।
এই অন্যায্য পরিস্থিতিতে তিনি বাধ্য হয়ে শহরের আরেকটি লাইব্রেরি, তাজ লাইব্রেরিতে গিয়ে এক মুহূর্তেই শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ইংরেজি বইটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এ থেকেই প্রশ্ন ওঠে—যেখানে অন্য লাইব্রেরিগুলো খুচরা বই বিক্রি করছে, সেখানে মাদিনা লাইব্রেরি কেন সেট কেনাকে বাধ্যতামূলক করছে?
অভিভাবকের অভিযোগ, “মাদিনা লাইব্রেরির সঙ্গে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসাধু সম্পর্ক থাকতে পারে, যারা অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট লাইব্রেরি থেকে বই কেনার নির্দেশ দেয়। এর মাধ্যমে আর্থিক স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। এছাড়াও, অন্যান্য লাইব্রেরি যেখানে নিয়মিত ছাড় দেয়, সেখানে মাদিনা লাইব্রেরি কোনো ছাড় না দিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে।”
এমন চিত্র সামনে আসার পর অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের একচেটিয়া ব্যবসায়িক আচরণ শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করছে। অনেকেই জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে একজন সচেতন অভিভাবক নতুন প্রতিদিনকে বলেন, “আমি জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখুন—কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট লাইব্রেরির নাম করে বই কিনতে বাধ্য করছে? এটা কি বইয়ের ব্যবসায় এক ধরনের কমিশন বাণিজ্য?”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লাইব্রেরির আর্থিক সম্পর্ক তদন্ত করা হোক।
- লাইব্রেরিগুলোর পণ্য বিক্রির ধরন মনিটরিং করা হোক।
- খুচরা বিক্রির সুযোগ নিশ্চিত করা হোক, যাতে অভিভাবকরা শুধু প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারেন।
- দুর্নীতিপূর্ণ ও অভদ্র আচরণকারী বিক্রেতা ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই ঘটনাটি শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ হলেও, এর প্রভাব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর ব্যাপক। তাই শিক্ষার মান রক্ষা ও সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
Please Share This Post in Your Social Media

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মদিনা লাইব্রেরির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ- স্কুল ও লাইব্রেরির যোগসাজশে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা

নতুন প্রতিদিন ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২ জুন ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মদিনা লাইব্রেরিকে ঘিরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মহলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি জোর করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নির্দিষ্ট বইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বই কিনতে বাধ্য করছে, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক ধরনের বাণিজ্যিক চাপ এবং দুর্নীতিরই নামান্তর।
ঘটনার সূত্রপাত এক অভিভাবকের সরাসরি অভিযোগ থেকে। তিনি জানান, তার সন্তানের স্কুল থেকে “Perfection in English Grammar” নামের একটি ইংরেজি ব্যাকরণ বই কেনার সুপারিশ করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বইটি মাদিনা লাইব্রেরি থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু লাইব্রেরিতে গিয়ে তিনি শুধু ওই নির্দিষ্ট বইটি কিনতে চাইলে, বিক্রেতা তাকে বলেন, ইংরেজি বইটি আলাদা বিক্রি করা যাবে না – এটি বাংলা ব্যাকরণ বইসহ সম্পূর্ণ সেট হিসেবে কিনতে হবে।
অভিভাবক সেই পরিস্থিতিতে লাইব্রেরির মালিক মো. সাবেরের কাছে সরাসরি অনুরোধ জানালে, তিনি আরও বিস্ময়কর বক্তব্য দেন – “স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের নির্দেশ অনুযায়ী, পুরো সেট না কিনলে আমরা বই বিক্রি করি না।” বহুবার অনুরোধ করার পরও মালিক কোনো নমনীয়তা দেখাননি এবং অব্যাহতভাবে অভদ্র আচরণ করতে থাকেন বলে অভিযোগকারীর দাবি।এ ধরনের অনেক অভিযোগ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল।
এই অন্যায্য পরিস্থিতিতে তিনি বাধ্য হয়ে শহরের আরেকটি লাইব্রেরি, তাজ লাইব্রেরিতে গিয়ে এক মুহূর্তেই শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ইংরেজি বইটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এ থেকেই প্রশ্ন ওঠে—যেখানে অন্য লাইব্রেরিগুলো খুচরা বই বিক্রি করছে, সেখানে মাদিনা লাইব্রেরি কেন সেট কেনাকে বাধ্যতামূলক করছে?
অভিভাবকের অভিযোগ, “মাদিনা লাইব্রেরির সঙ্গে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসাধু সম্পর্ক থাকতে পারে, যারা অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট লাইব্রেরি থেকে বই কেনার নির্দেশ দেয়। এর মাধ্যমে আর্থিক স্বার্থ হাসিল করা হচ্ছে। এছাড়াও, অন্যান্য লাইব্রেরি যেখানে নিয়মিত ছাড় দেয়, সেখানে মাদিনা লাইব্রেরি কোনো ছাড় না দিয়ে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে।”
এমন চিত্র সামনে আসার পর অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের একচেটিয়া ব্যবসায়িক আচরণ শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করছে। অনেকেই জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে একজন সচেতন অভিভাবক নতুন প্রতিদিনকে বলেন, “আমি জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখুন—কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট লাইব্রেরির নাম করে বই কিনতে বাধ্য করছে? এটা কি বইয়ের ব্যবসায় এক ধরনের কমিশন বাণিজ্য?”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লাইব্রেরির আর্থিক সম্পর্ক তদন্ত করা হোক।
- লাইব্রেরিগুলোর পণ্য বিক্রির ধরন মনিটরিং করা হোক।
- খুচরা বিক্রির সুযোগ নিশ্চিত করা হোক, যাতে অভিভাবকরা শুধু প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারেন।
- দুর্নীতিপূর্ণ ও অভদ্র আচরণকারী বিক্রেতা ও মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই ঘটনাটি শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ হলেও, এর প্রভাব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর ব্যাপক। তাই শিক্ষার মান রক্ষা ও সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।