জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায় ঘোষণা হবে রোববার

- Update Time : ১০:৫২:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ১৩৩ Time View
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল, ১ জুন (রোববার) দিন নির্ধারিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রবিবারের কার্যতালিকায় মামলাটি এক নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রায় প্রদান করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ।
এর আগে মামলাটির শুনানি শেষ হয় ১৪ মে। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত ১ জুন রায়ের দিন ধার্য করেন। জামায়াতের পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
নিবন্ধনের পেছনের ইতিহাস
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অস্থায়ী নিবন্ধন মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী বছরে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ, যেমন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী এবং জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন ব্যক্তি নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে রিট আবেদন করেন।
ওই রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, মহাসচিব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশনসহ মোট চারজনকে বিবাদী করা হয়।
২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাই হাইকোর্টে রুল জারি করেন। জামায়াত একাধিকবার তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এবং দলের নাম পরিবর্তন করে “জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ” থেকে “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী” হিসেবে নিবেদন করে।
হাইকোর্টের রায় এবং এর পরবর্তী ঘটনা
২০১৩ সালের ১ আগস্ট, হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। আদালত তাদের সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দলটিকে প্রদত্ত নিবন্ধন আইনগতভাবে বৈধ নয়।
তবে একই বছরের ৫ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী জামায়াতের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ২ নভেম্বর প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করে।
আপিল খারিজ এবং পরে পুনরুজ্জীবন
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন। রিটকারীদের পক্ষে সেদিন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান, যিনি জানান, সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতি এবং অন্যান্য কারণ দেখিয়ে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল, যা না মঞ্জুর হওয়ায় মামলাটি “ডিফল্ট”-এর কারণে খারিজ করা হয়। তবে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পুনরায় শুনানির (রিস্টোর) সুযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও মামলা পুনরায় সচল
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে। এরপর কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে, যা সরকার পতনের দাবি পর্যন্ত পৌঁছায়। ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২৮ আগস্ট সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপর দলটি পুনরায় তাদের নিবন্ধন বিষয়ে আপিল বিভাগের কাছে শুনানির আবেদন জানায়। আদালত বিলম্ব মাফ করে ২২ অক্টোবর আপিলটি পুনরুজ্জীবন করেন এবং ৩ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় শুনানি শুরু হয়, যা ১৪ মে শেষ হয়।
বর্তমানে মামলাটি রায় ঘোষণার অপেক্ষায়, যা ১ জুন, রোববার ঘোষণা করা হবে। এই রায়ের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নির্ধারণ ঘটবে।
Please Share This Post in Your Social Media

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আপিলের রায় ঘোষণা হবে রোববার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামীকাল, ১ জুন (রোববার) দিন নির্ধারিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রবিবারের কার্যতালিকায় মামলাটি এক নম্বর ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রায় প্রদান করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ।
এর আগে মামলাটির শুনানি শেষ হয় ১৪ মে। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত ১ জুন রায়ের দিন ধার্য করেন। জামায়াতের পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
নিবন্ধনের পেছনের ইতিহাস
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অস্থায়ী নিবন্ধন মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী বছরে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ, যেমন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী এবং জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন ব্যক্তি নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে রিট আবেদন করেন।
ওই রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, মহাসচিব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশনসহ মোট চারজনকে বিবাদী করা হয়।
২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাই হাইকোর্টে রুল জারি করেন। জামায়াত একাধিকবার তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এবং দলের নাম পরিবর্তন করে “জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ” থেকে “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী” হিসেবে নিবেদন করে।
হাইকোর্টের রায় এবং এর পরবর্তী ঘটনা
২০১৩ সালের ১ আগস্ট, হাইকোর্টের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। আদালত তাদের সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দলটিকে প্রদত্ত নিবন্ধন আইনগতভাবে বৈধ নয়।
তবে একই বছরের ৫ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী জামায়াতের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর ২ নভেম্বর প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করে।
আপিল খারিজ এবং পরে পুনরুজ্জীবন
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেন। রিটকারীদের পক্ষে সেদিন শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করীম। জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান, যিনি জানান, সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতি এবং অন্যান্য কারণ দেখিয়ে ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল, যা না মঞ্জুর হওয়ায় মামলাটি “ডিফল্ট”-এর কারণে খারিজ করা হয়। তবে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে পুনরায় শুনানির (রিস্টোর) সুযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও মামলা পুনরায় সচল
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসে। এরপর কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে, যা সরকার পতনের দাবি পর্যন্ত পৌঁছায়। ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২৮ আগস্ট সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপর দলটি পুনরায় তাদের নিবন্ধন বিষয়ে আপিল বিভাগের কাছে শুনানির আবেদন জানায়। আদালত বিলম্ব মাফ করে ২২ অক্টোবর আপিলটি পুনরুজ্জীবন করেন এবং ৩ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় শুনানি শুরু হয়, যা ১৪ মে শেষ হয়।
বর্তমানে মামলাটি রায় ঘোষণার অপেক্ষায়, যা ১ জুন, রোববার ঘোষণা করা হবে। এই রায়ের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নির্ধারণ ঘটবে।