কুত্তার লেজ সোজা হয় না

- Update Time : ১২:৫৫:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
- / ১৩১ Time View
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত, কয়েকজন উপদেষ্টার অপরিণত মন্তব্য এবং নানামুখী ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হয়ে সমাজের একটি অংশের মধ্যে “আওয়ামী লীগই ভালো ছিল”এ ধরনের মন্তব্য করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে এই মন্তব্যকারীদের বিবেককে যেন এক ধাক্কা দিয়ে নতুনভাবে নাড়া দিয়েছেন ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’-তে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে ব্যবহৃত ভাষা ও বক্তব্যে ছিল সহিংসতা ও চরম অসহিষ্ণুতার ছাপ, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
তার বক্তব্যে ব্যবহৃত ভয়ভীতির সুরে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যেন তিনি এখনো হুমকি-ধমকির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চান—যা অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যও স্মরণযোগ্য, যেখানে তিনি বলেছিলেন: “আমি বাংলাদেশের ১৩৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” এই ধরনের বক্তব্য ও আচরণ রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনমনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য জনগণের মাঝে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন এই কথাবার্তাগুলো “কুত্তার লেজ সোজা হয় না” প্রবাদটির বাস্তব প্রতিফলন। হিন্দুত্ববাদী ভারতের মাটিতে পলায়নপর অবস্থায় থেকেও শেখ হাসিনা ও তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুমকি-ধমকি ও হিংস্রতার ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে “আগের আওয়ামী লীগ ভালো ছিল” বলে যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন, তারা যেন একপ্রকার চরম ধাক্কা খেয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্য তাদের বিবেককে নতুনভাবে নাড়া দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ‘আওয়ামী লীগ ভালো ছিল’ এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার আগে অনেককেই দু’বার ভাবতে হবে।
২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর যে ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, সেখানে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ, স্নাইপারের মাধ্যমে হত্যা, এবং সারাদেশের রাজপথ রক্তাক্ত করে হাজারো প্রাণহানি ঘটানো হয়—এমন অভিযোগ ঘুরেফিরে উঠে আসছে। কিন্তু এতোসব ঘটনার পরেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এখনো কোনো অনুশোচনা বা দুঃখপ্রকাশ করেননি। বরং, তারা নিজের কর্মকাণ্ডকে জাস্টিফাই করার প্রয়াসে তা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন।
দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এমন মানসিকতার প্রতি। এমনকি, কেউ কেউ বলছেন শিশুকন্যার জন্ম হলে তার নাম রাখতে ‘হাসিনা’ নামটি আজ অনেক পরিবার এড়িয়ে চলছে; একসময় যারা নেতা ছিলেন, আজ তাদের নাম উচ্চারণ করতেও অনেকে লজ্জা পান। ‘কাউয়া কাদের’ নামে কটাক্ষকৃত ওবায়দুল কাদেরও এই ঘৃণার বৃত্তে পড়েছেন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—ক্ষমতা হারানোর পরও আওয়ামী লীগ নেতাদের আচরণে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং, তারা এখনও জনতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হুমকির সুরে কথা বলছেন, যেন গণআন্দোলনের কাছে পরাজয় তাদের কিছু শেখায়নি। দেশের গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষ ও বিরোধী মতাবলম্বীদের এখনো ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ হুমকি দিচ্ছেন যে, তারা দেশে ফিরলে অন্যরা নিরাপদ থাকবে না!
এই বাস্তবতায় নেটিজেনদের প্রশ্ন—বহু দমন-পীড়ন ও বিদ্রোহের পরও কী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিবেক জাগবে না? জনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ কি তাদের হৃদয়ে সামান্য অনুশোচনার স্পন্দন তৈরি করতে পারবে না? নাকি তারা সেই বুনো প্রবৃত্তির প্রতীক হয়ে রয়ে যাবে, যাকে কোনো যুক্তি, কোনো ত্যাগ, কোনো ইতিহাসই বদলাতে পারে না?
ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কিছু নাটকীয় তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা দেশ-বিদেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’র সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী নাজমুস সাকিবের নেয়া এই সাক্ষাৎকারে কাদের জানান, অভ্যুত্থানের দিন তিনি পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। পরে কিছু আন্দোলনকারী ছাত্রনেতার সহায়তায়—যাদের হাতে মোটা অংকের টাকা তুলে দেয়া হয়েছিল বলে তিনি নিজেই জানান—তিনি নিরাপদ আশ্রয় পান এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
যদিও এই অর্থের পরিমাণ কত ছিল, কারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল বা কাদের মধ্যস্থতায় এ ব্যবস্থাপনা হয়—সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, ছাত্রনেতারা কোনো রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে নয়, বরং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেন।
এর আগে ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামনে আসে, যেখানে তিনি বলেন, “আমি কাউকে ছাড়বো না। আমার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে, সেই ১৩৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি। সময়মতো দেশে ঢুকে ওদের হত্যা করবো।” এছাড়া পলায়নপর অবস্থায় থাকা আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা দেশের অভ্যন্তরে বিএনপি, জামায়াত এবং ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত নেতাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রথমে ভারতের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়, যা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ‘নাগরিক টিভি’ তাকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয়। তবে সেই সাক্ষাৎকার চলাকালে এক পর্যায়ে প্রশ্নের মুখে বিক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন—যা পুরো ঘটনায় আরও নাটকীয়তা যোগ করে।
এই সাক্ষাৎকার ও তার ভেতরের তথ্য দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা যখন ভয় পেয়ে বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন, ছাত্রনেতাদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচান এবং পরে বিদেশে পলায়ন করেন, তখন তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও নেতৃত্বের মূল্য কতটা নির্ভরযোগ্য? পাশাপাশি, হুমকি ও প্রতিশোধপরায়ণ বক্তব্যের মাধ্যমে কি তারা এখনও সেই পুরনো সহিংস রাজনীতির ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন?
একজন সাংবাদিক নাগরিক টিভির পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন, যার মধ্যে একটি ছিল সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া তার এক ভাইরাল ইন্টারভিউ নিয়ে। প্রশ্ন রাখা হয়, ৫ আগস্টে তাকে নাকি বাথরুমে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল এবং ছাত্রদের সহায়তায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান, এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এছাড়া কি উপায় ছিল?” সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কি ছাত্ররাই তাকে রক্ষা করেছে? তিনি বলেন, “হ্যাঁ এটাও তো ঠিক।” এ সময় সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন, তখন আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ ছিল, সেই পরিস্থিতিতে ছাত্ররা তাকে রক্ষা করেছে—এটা অনেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ওরা বলছিলো, আপনার প্রতি রাগ ছিল। কিন্তু সামনে এসে আমাদের রাগ পানি হয়ে গেছে।”
পরবর্তী প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, এরপর তিনি তিন মাস দেশেই ছিলেন কিনা। তিনি জানান, “হ্যাঁ ছিলাম।” এরপর প্রশ্ন আসে, দেশ থেকে তিনি কীভাবে গেলেন, কে বা কারা তাকে সাহায্য করেছিল। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, “এটা কি বলা যায়?” তিনি বলেন, তখন ঘরে ঘরে তল্লাশি, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অভিযান চলছিল। তার শরীরও ভালো ছিল না, প্রতিদিন অনেক ওষুধ খেতে হতো। সেই অবস্থায় গ্রেপ্তার হলে ওষুধ খাওয়ানোর কেউ থাকবে না, তাই অনেক কিছু চিন্তা করে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিন মাস তিনি দেশে ছিলেন, এই সময়ে নিশ্চয় বুঝেছেন মানুষ আওয়ামী লীগ নিয়ে কতটা ক্ষুব্ধ ছিল। এই ক্ষোভ কি যৌক্তিক ছিল না? উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাড়ে ১৫ বছরে আমরা পদ্মা সেতু করেছি, মেট্রোরেল করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করেছি।” এরপর প্রশ্ন আসে, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন কি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না? কাদের বলেন, “এগুলো আলোচনার বিষয়। আমাদেরও একটা দৃষ্টিকোণ আছে। বেশিরভাগ মানুষ চায় শেখ হাসিনা আবার আসুক। ইলেকশন হলে বুঝবেন।”
সাংবাদিক বলেন, জনগণের ভাবনা হচ্ছে, শেখ হাসিনা যদি সত্যিই সাহসী নেত্রী হতেন, তাহলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন না। এটা কি তার রাজনৈতিক জীবনে লজ্জাজনক অধ্যায় নয়? কাদের জবাবে বলেন, “না, আমি তা মনে করি না। তখন তার বেঁচে থাকা দরকার ছিল। তাদের পরিকল্পনাই ছিল তাকে খুন করা।” প্রশ্ন আসে, বেগম খালেদা জিয়াও তো অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তিনি তো কোনো আপস করেননি। কাদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো আপস করে যাননি, তিনি বাঁচার প্রয়োজনেই গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে কাদের বলেন, এখন বাংলাদেশে মতামত জরিপ করলে দেখা যাবে মানুষ কাকে চায়। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি তো আওয়ামী লীগের লোক, আপনি ভাববেন শেখ হাসিনাই জনপ্রিয়। কাদের বলেন, তিনি কেন ভাববেন, সাংবাদিক নিজেই তো পক্ষপাতদুষ্ট। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আপনি বায়াসড। যখন একজন জার্নালিস্ট পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তখন সেটা জার্নালিজম হয় না।”
সাংবাদিক জানতে চান, আওয়ামী লীগের কি কোনো অনুশোচনা বা আত্মোপলব্ধি আছে, যে তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? কাদের বলেন, তাদের আত্মসমালোচনা থাকবে, দেশে ফিরে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে এবং যদি ভুল হয়ে থাকে সেটা স্বীকার করবে। দেশের বাইরে বসে নয়। প্রশ্ন রাখা হয়, দেশে ফিরে যাওয়ার মতো বাস্তবতা কি আদৌ আছে? বেশিরভাগ নেতাকর্মীই তো পলাতক। কাদের বলেন, “দি সান রাইজেস… বাট ডিনাই… বিফোর।” তিনি ব্যাখ্যা না করলেও বুঝাতে চেয়েছেন, এই অন্ধকার থেকেও বেরিয়ে আসা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে উঠেও আসতে পারি।
সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, এই ‘গ্যাটার’-এ তারা কেন পড়লেন? কাদের বলেন, এমনকি যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারাও এখন মনে করছে তারা ভুল করেছে। এরপর আবার প্রশ্ন আসে, মানুষ যদি আপনাদের পক্ষে থাকে, তাহলে দেশে আসছেন না কেন? কাদের বলেন, সময় হলে দেখা যাবে। সাংবাদিক বলেন, অনেক আওয়ামী লীগ-সমর্থিত দুর্বৃত্ত তো এখন মিডিয়া ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করছে। কাদের রাগান্বিত হয়ে বলেন, “আপনার এই চেহারাটা, বক্তব্যটা কোথায় যাবে যদি আমরা ফিরে যাই, তখন তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।” সাংবাদিক তখন বলেন, আপনি কি প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চান? কাদের বলেন, “হয়তো আপনি রিসেন্ট একটা রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশ করছেন।” সাংবাদিক ব্যাখ্যা করেন, তিনি শুধু প্রশ্ন করছেন। কাদের বলেন, “আপনি জার্নালিস্ট না, আপনি পক্ষপাতদুষ্ট। আপনার প্রশ্নে পক্ষপাত প্রকাশ পাচ্ছে। আপনি একটা রাজনৈতিক ক্যাম্পের সাথে জড়িত। একজন নিরপেক্ষ সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করে না।”
সাংবাদিক আবার প্রশ্ন রাখেন, আওয়ামী লীগ কি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে না তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য? কাদের বলেন, “আমি আগেই বলেছি। আমরা যা করবো দেশে গিয়ে করবো।” সাংবাদিক বিদায় জানালে কাদের বলেন, “তখন আপনাদের দেখা যাবে না। আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। দেশে গেলে আমাদের একেবারে শেষ করে দেবেন।”
১৯৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি রাজনীতিতে এসেছি পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে।” সময়ের পরিক্রমায় দেখা গেছে, তিনি কার্যত সেই প্রতিশোধ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব ও ‘চানক্যনীতি’কে পুঁজি করে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে মিথ্যাচার, ভয়ভীতি, অপপ্রচার ও সাংবিধানিক অপকৌশলের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রেখেছেন। এ সময় তিনি বিরোধী মত ও পথের মানুষদের ওপর চালিয়েছেন দমন-পীড়নের নির্মম নিদর্শন। বাকস্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগের রাজনৈতিক ব্যবহার, গুম-খুন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল তার শাসনকালকে সংজ্ঞায়িত করার প্রধান উপাদান।
এই দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশে এক ধরনের সর্বগ্রাসী অরাজকতা ও দুঃশাসনের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। যখন ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনে সরকার পতনের মুখে পড়ে, তখন হাসিনা ভারত অভিমুখে পাড়ি জমান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অতীতের অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি।
বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে তারা আরও বেপরোয়া, আগ্রাসী এবং হিংস্র আচরণ প্রদর্শন করছে। তাদের বক্তব্য ও আচরণে স্পষ্ট, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংগ্রামে তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিকে আরও তীব্র ও নির্মম করে তুলতে চায়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য এক চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃইনকিলাব
Please Share This Post in Your Social Media

কুত্তার লেজ সোজা হয় না

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত, কয়েকজন উপদেষ্টার অপরিণত মন্তব্য এবং নানামুখী ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হয়ে সমাজের একটি অংশের মধ্যে “আওয়ামী লীগই ভালো ছিল”এ ধরনের মন্তব্য করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে এই মন্তব্যকারীদের বিবেককে যেন এক ধাক্কা দিয়ে নতুনভাবে নাড়া দিয়েছেন ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেওয়া ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’-তে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে ব্যবহৃত ভাষা ও বক্তব্যে ছিল সহিংসতা ও চরম অসহিষ্ণুতার ছাপ, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
তার বক্তব্যে ব্যবহৃত ভয়ভীতির সুরে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যেন তিনি এখনো হুমকি-ধমকির মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চান—যা অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যও স্মরণযোগ্য, যেখানে তিনি বলেছিলেন: “আমি বাংলাদেশের ১৩৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” এই ধরনের বক্তব্য ও আচরণ রাজনৈতিক পরিবেশে অস্থিরতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনমনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য জনগণের মাঝে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন এই কথাবার্তাগুলো “কুত্তার লেজ সোজা হয় না” প্রবাদটির বাস্তব প্রতিফলন। হিন্দুত্ববাদী ভারতের মাটিতে পলায়নপর অবস্থায় থেকেও শেখ হাসিনা ও তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ওবায়দুল কাদের যেভাবে হুমকি-ধমকি ও হিংস্রতার ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে “আগের আওয়ামী লীগ ভালো ছিল” বলে যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন, তারা যেন একপ্রকার চরম ধাক্কা খেয়েছেন। এ ধরনের বক্তব্য তাদের বিবেককে নতুনভাবে নাড়া দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ‘আওয়ামী লীগ ভালো ছিল’ এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার আগে অনেককেই দু’বার ভাবতে হবে।
২০২৫ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর যে ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, সেখানে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি বর্ষণ, স্নাইপারের মাধ্যমে হত্যা, এবং সারাদেশের রাজপথ রক্তাক্ত করে হাজারো প্রাণহানি ঘটানো হয়—এমন অভিযোগ ঘুরেফিরে উঠে আসছে। কিন্তু এতোসব ঘটনার পরেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এখনো কোনো অনুশোচনা বা দুঃখপ্রকাশ করেননি। বরং, তারা নিজের কর্মকাণ্ডকে জাস্টিফাই করার প্রয়াসে তা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন।
দেশের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এমন মানসিকতার প্রতি। এমনকি, কেউ কেউ বলছেন শিশুকন্যার জন্ম হলে তার নাম রাখতে ‘হাসিনা’ নামটি আজ অনেক পরিবার এড়িয়ে চলছে; একসময় যারা নেতা ছিলেন, আজ তাদের নাম উচ্চারণ করতেও অনেকে লজ্জা পান। ‘কাউয়া কাদের’ নামে কটাক্ষকৃত ওবায়দুল কাদেরও এই ঘৃণার বৃত্তে পড়েছেন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—ক্ষমতা হারানোর পরও আওয়ামী লীগ নেতাদের আচরণে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং, তারা এখনও জনতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হুমকির সুরে কথা বলছেন, যেন গণআন্দোলনের কাছে পরাজয় তাদের কিছু শেখায়নি। দেশের গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষ ও বিরোধী মতাবলম্বীদের এখনো ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে থাকা অবস্থায়ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ হুমকি দিচ্ছেন যে, তারা দেশে ফিরলে অন্যরা নিরাপদ থাকবে না!
এই বাস্তবতায় নেটিজেনদের প্রশ্ন—বহু দমন-পীড়ন ও বিদ্রোহের পরও কী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিবেক জাগবে না? জনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ কি তাদের হৃদয়ে সামান্য অনুশোচনার স্পন্দন তৈরি করতে পারবে না? নাকি তারা সেই বুনো প্রবৃত্তির প্রতীক হয়ে রয়ে যাবে, যাকে কোনো যুক্তি, কোনো ত্যাগ, কোনো ইতিহাসই বদলাতে পারে না?
ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নিজের পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যের কিছু নাটকীয় তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা দেশ-বিদেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’র সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী নাজমুস সাকিবের নেয়া এই সাক্ষাৎকারে কাদের জানান, অভ্যুত্থানের দিন তিনি পাঁচ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। পরে কিছু আন্দোলনকারী ছাত্রনেতার সহায়তায়—যাদের হাতে মোটা অংকের টাকা তুলে দেয়া হয়েছিল বলে তিনি নিজেই জানান—তিনি নিরাপদ আশ্রয় পান এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
যদিও এই অর্থের পরিমাণ কত ছিল, কারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল বা কাদের মধ্যস্থতায় এ ব্যবস্থাপনা হয়—সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, ছাত্রনেতারা কোনো রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে নয়, বরং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেন।
এর আগে ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামনে আসে, যেখানে তিনি বলেন, “আমি কাউকে ছাড়বো না। আমার বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে, সেই ১৩৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি। সময়মতো দেশে ঢুকে ওদের হত্যা করবো।” এছাড়া পলায়নপর অবস্থায় থাকা আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা দেশের অভ্যন্তরে বিএনপি, জামায়াত এবং ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত নেতাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রথমে ভারতের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়, যা দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ‘নাগরিক টিভি’ তাকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয়। তবে সেই সাক্ষাৎকার চলাকালে এক পর্যায়ে প্রশ্নের মুখে বিক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন—যা পুরো ঘটনায় আরও নাটকীয়তা যোগ করে।
এই সাক্ষাৎকার ও তার ভেতরের তথ্য দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা যখন ভয় পেয়ে বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন, ছাত্রনেতাদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে প্রাণ বাঁচান এবং পরে বিদেশে পলায়ন করেন, তখন তাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও নেতৃত্বের মূল্য কতটা নির্ভরযোগ্য? পাশাপাশি, হুমকি ও প্রতিশোধপরায়ণ বক্তব্যের মাধ্যমে কি তারা এখনও সেই পুরনো সহিংস রাজনীতির ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন?
একজন সাংবাদিক নাগরিক টিভির পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন, যার মধ্যে একটি ছিল সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া তার এক ভাইরাল ইন্টারভিউ নিয়ে। প্রশ্ন রাখা হয়, ৫ আগস্টে তাকে নাকি বাথরুমে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল এবং ছাত্রদের সহায়তায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান, এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এছাড়া কি উপায় ছিল?” সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কি ছাত্ররাই তাকে রক্ষা করেছে? তিনি বলেন, “হ্যাঁ এটাও তো ঠিক।” এ সময় সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন, তখন আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ ছিল, সেই পরিস্থিতিতে ছাত্ররা তাকে রক্ষা করেছে—এটা অনেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ওরা বলছিলো, আপনার প্রতি রাগ ছিল। কিন্তু সামনে এসে আমাদের রাগ পানি হয়ে গেছে।”
পরবর্তী প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, এরপর তিনি তিন মাস দেশেই ছিলেন কিনা। তিনি জানান, “হ্যাঁ ছিলাম।” এরপর প্রশ্ন আসে, দেশ থেকে তিনি কীভাবে গেলেন, কে বা কারা তাকে সাহায্য করেছিল। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, “এটা কি বলা যায়?” তিনি বলেন, তখন ঘরে ঘরে তল্লাশি, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অভিযান চলছিল। তার শরীরও ভালো ছিল না, প্রতিদিন অনেক ওষুধ খেতে হতো। সেই অবস্থায় গ্রেপ্তার হলে ওষুধ খাওয়ানোর কেউ থাকবে না, তাই অনেক কিছু চিন্তা করে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিন মাস তিনি দেশে ছিলেন, এই সময়ে নিশ্চয় বুঝেছেন মানুষ আওয়ামী লীগ নিয়ে কতটা ক্ষুব্ধ ছিল। এই ক্ষোভ কি যৌক্তিক ছিল না? উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাড়ে ১৫ বছরে আমরা পদ্মা সেতু করেছি, মেট্রোরেল করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করেছি।” এরপর প্রশ্ন আসে, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন কি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না? কাদের বলেন, “এগুলো আলোচনার বিষয়। আমাদেরও একটা দৃষ্টিকোণ আছে। বেশিরভাগ মানুষ চায় শেখ হাসিনা আবার আসুক। ইলেকশন হলে বুঝবেন।”
সাংবাদিক বলেন, জনগণের ভাবনা হচ্ছে, শেখ হাসিনা যদি সত্যিই সাহসী নেত্রী হতেন, তাহলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন না। এটা কি তার রাজনৈতিক জীবনে লজ্জাজনক অধ্যায় নয়? কাদের জবাবে বলেন, “না, আমি তা মনে করি না। তখন তার বেঁচে থাকা দরকার ছিল। তাদের পরিকল্পনাই ছিল তাকে খুন করা।” প্রশ্ন আসে, বেগম খালেদা জিয়াও তো অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু তিনি তো কোনো আপস করেননি। কাদের বলেন, শেখ হাসিনা কোনো আপস করে যাননি, তিনি বাঁচার প্রয়োজনেই গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে কাদের বলেন, এখন বাংলাদেশে মতামত জরিপ করলে দেখা যাবে মানুষ কাকে চায়। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি তো আওয়ামী লীগের লোক, আপনি ভাববেন শেখ হাসিনাই জনপ্রিয়। কাদের বলেন, তিনি কেন ভাববেন, সাংবাদিক নিজেই তো পক্ষপাতদুষ্ট। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আপনি বায়াসড। যখন একজন জার্নালিস্ট পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তখন সেটা জার্নালিজম হয় না।”
সাংবাদিক জানতে চান, আওয়ামী লীগের কি কোনো অনুশোচনা বা আত্মোপলব্ধি আছে, যে তাদের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? কাদের বলেন, তাদের আত্মসমালোচনা থাকবে, দেশে ফিরে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে এবং যদি ভুল হয়ে থাকে সেটা স্বীকার করবে। দেশের বাইরে বসে নয়। প্রশ্ন রাখা হয়, দেশে ফিরে যাওয়ার মতো বাস্তবতা কি আদৌ আছে? বেশিরভাগ নেতাকর্মীই তো পলাতক। কাদের বলেন, “দি সান রাইজেস… বাট ডিনাই… বিফোর।” তিনি ব্যাখ্যা না করলেও বুঝাতে চেয়েছেন, এই অন্ধকার থেকেও বেরিয়ে আসা সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে উঠেও আসতে পারি।
সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, এই ‘গ্যাটার’-এ তারা কেন পড়লেন? কাদের বলেন, এমনকি যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারাও এখন মনে করছে তারা ভুল করেছে। এরপর আবার প্রশ্ন আসে, মানুষ যদি আপনাদের পক্ষে থাকে, তাহলে দেশে আসছেন না কেন? কাদের বলেন, সময় হলে দেখা যাবে। সাংবাদিক বলেন, অনেক আওয়ামী লীগ-সমর্থিত দুর্বৃত্ত তো এখন মিডিয়া ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করছে। কাদের রাগান্বিত হয়ে বলেন, “আপনার এই চেহারাটা, বক্তব্যটা কোথায় যাবে যদি আমরা ফিরে যাই, তখন তো আপনাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।” সাংবাদিক তখন বলেন, আপনি কি প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চান? কাদের বলেন, “হয়তো আপনি রিসেন্ট একটা রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশ করছেন।” সাংবাদিক ব্যাখ্যা করেন, তিনি শুধু প্রশ্ন করছেন। কাদের বলেন, “আপনি জার্নালিস্ট না, আপনি পক্ষপাতদুষ্ট। আপনার প্রশ্নে পক্ষপাত প্রকাশ পাচ্ছে। আপনি একটা রাজনৈতিক ক্যাম্পের সাথে জড়িত। একজন নিরপেক্ষ সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করে না।”
সাংবাদিক আবার প্রশ্ন রাখেন, আওয়ামী লীগ কি জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবে না তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য? কাদের বলেন, “আমি আগেই বলেছি। আমরা যা করবো দেশে গিয়ে করবো।” সাংবাদিক বিদায় জানালে কাদের বলেন, “তখন আপনাদের দেখা যাবে না। আপনারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। দেশে গেলে আমাদের একেবারে শেষ করে দেবেন।”
১৯৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি রাজনীতিতে এসেছি পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে।” সময়ের পরিক্রমায় দেখা গেছে, তিনি কার্যত সেই প্রতিশোধ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভারতের কূটনৈতিক প্রভাব ও ‘চানক্যনীতি’কে পুঁজি করে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে মিথ্যাচার, ভয়ভীতি, অপপ্রচার ও সাংবিধানিক অপকৌশলের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রেখেছেন। এ সময় তিনি বিরোধী মত ও পথের মানুষদের ওপর চালিয়েছেন দমন-পীড়নের নির্মম নিদর্শন। বাকস্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগের রাজনৈতিক ব্যবহার, গুম-খুন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল তার শাসনকালকে সংজ্ঞায়িত করার প্রধান উপাদান।
এই দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশে এক ধরনের সর্বগ্রাসী অরাজকতা ও দুঃশাসনের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। যখন ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনে সরকার পতনের মুখে পড়ে, তখন হাসিনা ভারত অভিমুখে পাড়ি জমান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অতীতের অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি।
বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে তারা আরও বেপরোয়া, আগ্রাসী এবং হিংস্র আচরণ প্রদর্শন করছে। তাদের বক্তব্য ও আচরণে স্পষ্ট, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংগ্রামে তারা প্রতিহিংসার রাজনীতিকে আরও তীব্র ও নির্মম করে তুলতে চায়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জাতীয় স্বার্থের জন্য এক চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃইনকিলাব