সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ও সচিবালয় আমলাদের প্রতিবাদ: একটি আইনের বিপক্ষে আমলাতন্ত্রের প্রতিরোধ

- Update Time : ০৩:২১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
- / ১২৪ Time View

বাংলাদেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমলাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরেই এক নিরঙ্কুশ শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু বর্তমান ইউনূস সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে—“সরকারি চাকরিবিধি আইন ” নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন চাকরিচ্যুতিকরে, যা সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়। এই আইনের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি সেবাকে দুর্নীতিমুক্ত ও কর্মক্ষম করে তোলা। অথচ এই আইনের বিরুদ্ধেই এখন সচিবালয়ের আমলারা আন্দোলনে নেমেছেন, রাস্তাঘাট অবরোধ করছেন, এমনকি সরকারের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করছেন। প্রশ্ন হলো, আইন যদি থাকে, তাহলে সরকারি কর্মচারীরা কীভাবে এই আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন?
কী আছে “সরকারি চাকরিবিধি আইন“-এ?
এই আইন অনুযায়ী—
- কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন,
- নিয়মিত অফিস না করেন,
- অথবা ঘুষ/দুর্নীতিতে জড়ান,
তবে তাদের বেতন কর্তন, পদাবনতি এমনকি চাকরিচ্যুতি পর্যন্ত হতে পারে। পূর্বে যেখানে বদলি বা হালকা শাস্তিই ছিল প্রচলিত ব্যবস্থা, সেখানে এখন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
কেন এই আইন? ইতিহাসের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আমলের বহু আমলাকে রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন। এটি ছিল এক রাজনৈতিক ভুল, যেটির খেসারত দেশ বহু বছর ধরে দিয়েছে। পাকিস্তানি আমলারা যেমন ছিলেন জবাবদিহিতাহীন, ঠিক তেমনই বাংলাদেশের আমলারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন।
প্রতিটি সাধারণ মানুষ যারা কোনো সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গেছেন, তারা এক অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারেন—”কাজ হবে না” বলা, ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা, আবার পেছনে টাকা দিলে হুট করেই কাজ হয়ে যাওয়া। এসবই আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির অভিজ্ঞতা।
সচিবালয়ের প্রতিরোধ: আইন না নিজের সুবিধা রক্ষার চেষ্টা?
ড. ইউনূস সরকারের এই নতুন আইনের ঘোষণার পরপরই সচিবালয়ের আমলারা—
- আন্দোলনে নেমেছেন,
- অফিস বন্ধের হুমকি দিয়েছেন,
- সচিবালয়ের চারপাশ অবরুদ্ধ করেছেন,
- এমনকি সরকারের কাজেও বাধা সৃষ্টি করছেন।
এই প্রতিরোধ আইনবিরুদ্ধ নয় কি? যদি আইনসংগতভাবে কেউ অসন্তুষ্ট হন, তবে তা নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আলোচনা বা আপিলের মাধ্যমে করা যেতে পারে। কিন্তু সচিবালয়ে আগুন লাগানো, রাস্তা অবরোধ করা, এসব সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজের আওতায় পড়ে।
কেন এই ভয় আমলাদের?
এই আইনের মাধ্যমে তারা জানেন—
- ঘুষ খাওয়া আর আগের মতো সহজ হবে না।
- জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
- একবার যদি এই আইন পাস হয়ে যায়, তাহলে “লাঞ্চের পর আসেন” বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
তাদের একমাত্র ভয়—দুর্নীতির উন্মুক্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারণেই তারা ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত।
ড. ইউনূসের সংস্কার উদ্যোগ: নাগরিকদের জন্য সরকারি সেবা
ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি ঘোষণাই আমলাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে “আমলারা জনগণের কর্মচারী, তাই তাদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করার দরকার নেই।” এই একটি বার্তাই ক্ষমতার অহঙ্কারে থাকা অনেককে আহত করেছে।
এছাড়া—
- সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে,
- কার্যক্ষমতা মূল্যায়নের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এই সব পদক্ষেপই জনগণের পক্ষে, কিন্তু আমলাদের বিরুদ্ধের এক প্রচলিত ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে।
জনগণের ভূমিকা: এই আইনের পাশে দাঁড়ানো সময় এসেছে
আমরা যদি এই আইনের পক্ষে না দাঁড়াই, তবে ভবিষ্যতে যখনই আমরা
- জন্ম নিবন্ধনের কাজ করতে যাবো,
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে চাইবো,
- কোনো সরকারি সেবার জন্য অফিসে যাবো,
তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখার পর ঘুষ ছাড়া কিছুই হবে না। কাজ পেতে বারবার তোষামোদ, ঘুষ আর অনুরোধ করতে হবে।
আইন মানতে হবে, সবাইকে
সরকারি চাকরি কোনো রাজত্ব নয়। এটি একটি জনসেবা, যেখানে দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিকতা থাকা আবশ্যক। যারা রাষ্ট্রের বেতন খাচ্ছেন, তারা যদি জনগণের কাজ না করেন, তাহলে তাদের সেই পদে থাকার অধিকার নেই।
এই আইন কোনো রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিকতার আইন।
সুতরাং, সচিবালয়ের যেসব কর্মকর্তা এই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা আসলে আইন নয়, বরং নিজেদের দুর্নীতিপূর্ণ স্বার্থ রক্ষার জন্য জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আজকে সময় এসেছে—
- জনগণকে এক হয়ে ইউনূস সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
- দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।
- রাষ্ট্র যেন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবায় ফিরে আসে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নয়তো কাল আপনারই সন্তান ঘুষ না দিলে সরকারি চাকরির সুযোগ পাবে না, আপনার মা হাসপাতালের বেড পাবে না।
👉 আজ সিদ্ধান্ত নিন—আপনি আইনের পক্ষে, নাকি দুর্নীতির পক্ষে?
@billal
Please Share This Post in Your Social Media

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ও সচিবালয় আমলাদের প্রতিবাদ: একটি আইনের বিপক্ষে আমলাতন্ত্রের প্রতিরোধ


বাংলাদেশের সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমলাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরেই এক নিরঙ্কুশ শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু বর্তমান ইউনূস সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে—“সরকারি চাকরিবিধি আইন ” নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন চাকরিচ্যুতিকরে, যা সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়। এই আইনের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি সেবাকে দুর্নীতিমুক্ত ও কর্মক্ষম করে তোলা। অথচ এই আইনের বিরুদ্ধেই এখন সচিবালয়ের আমলারা আন্দোলনে নেমেছেন, রাস্তাঘাট অবরোধ করছেন, এমনকি সরকারের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করছেন। প্রশ্ন হলো, আইন যদি থাকে, তাহলে সরকারি কর্মচারীরা কীভাবে এই আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন?
কী আছে “সরকারি চাকরিবিধি আইন“-এ?
এই আইন অনুযায়ী—
- কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন,
- নিয়মিত অফিস না করেন,
- অথবা ঘুষ/দুর্নীতিতে জড়ান,
তবে তাদের বেতন কর্তন, পদাবনতি এমনকি চাকরিচ্যুতি পর্যন্ত হতে পারে। পূর্বে যেখানে বদলি বা হালকা শাস্তিই ছিল প্রচলিত ব্যবস্থা, সেখানে এখন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
কেন এই আইন? ইতিহাসের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আমলের বহু আমলাকে রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন। এটি ছিল এক রাজনৈতিক ভুল, যেটির খেসারত দেশ বহু বছর ধরে দিয়েছে। পাকিস্তানি আমলারা যেমন ছিলেন জবাবদিহিতাহীন, ঠিক তেমনই বাংলাদেশের আমলারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন।
প্রতিটি সাধারণ মানুষ যারা কোনো সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গেছেন, তারা এক অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে পারেন—”কাজ হবে না” বলা, ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা, আবার পেছনে টাকা দিলে হুট করেই কাজ হয়ে যাওয়া। এসবই আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির অভিজ্ঞতা।
সচিবালয়ের প্রতিরোধ: আইন না নিজের সুবিধা রক্ষার চেষ্টা?
ড. ইউনূস সরকারের এই নতুন আইনের ঘোষণার পরপরই সচিবালয়ের আমলারা—
- আন্দোলনে নেমেছেন,
- অফিস বন্ধের হুমকি দিয়েছেন,
- সচিবালয়ের চারপাশ অবরুদ্ধ করেছেন,
- এমনকি সরকারের কাজেও বাধা সৃষ্টি করছেন।
এই প্রতিরোধ আইনবিরুদ্ধ নয় কি? যদি আইনসংগতভাবে কেউ অসন্তুষ্ট হন, তবে তা নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আলোচনা বা আপিলের মাধ্যমে করা যেতে পারে। কিন্তু সচিবালয়ে আগুন লাগানো, রাস্তা অবরোধ করা, এসব সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজের আওতায় পড়ে।
কেন এই ভয় আমলাদের?
এই আইনের মাধ্যমে তারা জানেন—
- ঘুষ খাওয়া আর আগের মতো সহজ হবে না।
- জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
- একবার যদি এই আইন পাস হয়ে যায়, তাহলে “লাঞ্চের পর আসেন” বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
তাদের একমাত্র ভয়—দুর্নীতির উন্মুক্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারণেই তারা ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত।
ড. ইউনূসের সংস্কার উদ্যোগ: নাগরিকদের জন্য সরকারি সেবা
ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি ঘোষণাই আমলাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে “আমলারা জনগণের কর্মচারী, তাই তাদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করার দরকার নেই।” এই একটি বার্তাই ক্ষমতার অহঙ্কারে থাকা অনেককে আহত করেছে।
এছাড়া—
- সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে,
- কার্যক্ষমতা মূল্যায়নের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এই সব পদক্ষেপই জনগণের পক্ষে, কিন্তু আমলাদের বিরুদ্ধের এক প্রচলিত ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে।
জনগণের ভূমিকা: এই আইনের পাশে দাঁড়ানো সময় এসেছে
আমরা যদি এই আইনের পক্ষে না দাঁড়াই, তবে ভবিষ্যতে যখনই আমরা
- জন্ম নিবন্ধনের কাজ করতে যাবো,
- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে চাইবো,
- কোনো সরকারি সেবার জন্য অফিসে যাবো,
তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখার পর ঘুষ ছাড়া কিছুই হবে না। কাজ পেতে বারবার তোষামোদ, ঘুষ আর অনুরোধ করতে হবে।
আইন মানতে হবে, সবাইকে
সরকারি চাকরি কোনো রাজত্ব নয়। এটি একটি জনসেবা, যেখানে দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিকতা থাকা আবশ্যক। যারা রাষ্ট্রের বেতন খাচ্ছেন, তারা যদি জনগণের কাজ না করেন, তাহলে তাদের সেই পদে থাকার অধিকার নেই।
এই আইন কোনো রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিকতার আইন।
সুতরাং, সচিবালয়ের যেসব কর্মকর্তা এই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তারা আসলে আইন নয়, বরং নিজেদের দুর্নীতিপূর্ণ স্বার্থ রক্ষার জন্য জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
আজকে সময় এসেছে—
- জনগণকে এক হয়ে ইউনূস সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
- দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।
- রাষ্ট্র যেন রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবায় ফিরে আসে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নয়তো কাল আপনারই সন্তান ঘুষ না দিলে সরকারি চাকরির সুযোগ পাবে না, আপনার মা হাসপাতালের বেড পাবে না।
👉 আজ সিদ্ধান্ত নিন—আপনি আইনের পক্ষে, নাকি দুর্নীতির পক্ষে?
@billal