সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সব মামলায় খালাস পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম: ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটসহ বিশ্লেষণ

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০২:৫৫:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ১১১ Time View

ATM AZHAR(1)

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
ATM AZHAR(1)
 

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ২০২৫ সালের ২৭ মে (মঙ্গলবার) দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচারে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) কর্তৃক দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করা হয়।

মামলার ইতিহাস বিচার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা

এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তিনি সে সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী আল-বদর বাহিনীর রংপুর জেলার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজারের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আজহারুল ইসলাম রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহারুল ইসলাম এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়, যেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে তিনি ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন, যা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধ মামলায় পূর্ণাঙ্গ রিভিউ শুনানির মাধ্যমে নতুন করে আপিল শুনানির অনুমতি পায়।

২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে নতুন করে আপিল শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে সেই শুনানির ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ইতিহাসে গুরুত্ব

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত কয়েকজন জামায়াত ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে।

তবে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলাটি প্রথম, যেখানে রায় রিভিউ পর্যায়ে পৌঁছে পুনরায় আপিল শুনানি হয়েছে এবং সব অভিযোগ থেকে খালাস মিলেছে।

এটিএম আজহারুল ইসলামের সব মামলায় খালাস পাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের আইনি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই রায় কেবল একজন ব্যক্তির মুক্তি নয়, বরং আইনি পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্নও নতুন করে সামনে এনেছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সব মামলায় খালাস পেলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম: ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটসহ বিশ্লেষণ

Update Time : ০২:৫৫:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
ATM AZHAR(1)
 

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম অবশেষে সব মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। ২০২৫ সালের ২৭ মে (মঙ্গলবার) দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচারে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) কর্তৃক দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করা হয়।

মামলার ইতিহাস বিচার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা

এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তিনি সে সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী আল-বদর বাহিনীর রংপুর জেলার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার মগবাজারের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আজহারুল ইসলাম রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজহারুল ইসলাম এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়, যেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে তিনি ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন, যা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো যুদ্ধাপরাধ মামলায় পূর্ণাঙ্গ রিভিউ শুনানির মাধ্যমে নতুন করে আপিল শুনানির অনুমতি পায়।

২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে নতুন করে আপিল শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে সেই শুনানির ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ইতিহাসে গুরুত্ব

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত কয়েকজন জামায়াত ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে।

তবে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলাটি প্রথম, যেখানে রায় রিভিউ পর্যায়ে পৌঁছে পুনরায় আপিল শুনানি হয়েছে এবং সব অভিযোগ থেকে খালাস মিলেছে।

এটিএম আজহারুল ইসলামের সব মামলায় খালাস পাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের আইনি ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই রায় কেবল একজন ব্যক্তির মুক্তি নয়, বরং আইনি পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার প্রশ্নও নতুন করে সামনে এনেছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share