ট্রাইব্যুনালে শহীদ আনাসের শেষ চিঠি,আবেগে কাঁদলেন প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম

- Update Time : ০৩:৪০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ১২৯ Time View

গত ৫ আগস্ট, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার সময় পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাসসহ অন্তত পাঁচজন। ওই দিন সকালেই ঘর ছাড়ার আগে, আনাস একটি চিঠি লিখে যান তার মাকে উদ্দেশ্য করে, যা হয়ে ওঠে তাঁর শেষ বার্তা।
রবিবার (২৫ মে) এই ঘটনার প্রেক্ষিতে করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অভিযোগ গৃহীত হওয়ার শুনানির সময় সেই চিঠিটি আদালতে পড়ে শোনান প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আবেগময় এই মুহূর্তে তিনি বারবার চোখ মুছছিলেন।
চিঠিতে আনাস লেখেন,
হৃদয়স্পর্শী সে চিঠিতে আনাস লেখেন…
‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম।
স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয় সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।’
আনাসের এই চিঠি পাঠের সময় ট্রাইব্যুনালে এক হৃদয়গ্রাহী নীরবতা নেমে আসে। তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তখন উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য সদস্যরাও।
শুনানি শেষে আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন ৩ জুন।
এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আটজনকে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে ২১ এপ্রিল, যা পর্যালোচনা শেষে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন:
- হাবিবুর রহমান (সাবেক ডিএমপি কমিশনার)
- সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (সাবেক যুগ্ম কমিশনার)
- শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম (সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার, রমনা)
- মোহাম্মদ ইমরুল (সাবেক সহকারী কমিশনার, রমনা)
- মো. আরশাদ হোসেন (সাবেক পরিদর্শক, শাহবাগ থানা)
- মো. সুজন হোসেন (কনস্টেবল)
- ইমাজ হোসেন
- মো. নাসিরুল ইসলাম
এই আটজনের মধ্যে চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, বাকিরা পলাতক। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন: পরিদর্শক আরশাদ, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
Please Share This Post in Your Social Media

ট্রাইব্যুনালে শহীদ আনাসের শেষ চিঠি,আবেগে কাঁদলেন প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম


গত ৫ আগস্ট, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সহিংসতার সময় পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারান দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাসসহ অন্তত পাঁচজন। ওই দিন সকালেই ঘর ছাড়ার আগে, আনাস একটি চিঠি লিখে যান তার মাকে উদ্দেশ্য করে, যা হয়ে ওঠে তাঁর শেষ বার্তা।
রবিবার (২৫ মে) এই ঘটনার প্রেক্ষিতে করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অভিযোগ গৃহীত হওয়ার শুনানির সময় সেই চিঠিটি আদালতে পড়ে শোনান প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আবেগময় এই মুহূর্তে তিনি বারবার চোখ মুছছিলেন।
চিঠিতে আনাস লেখেন,
হৃদয়স্পর্শী সে চিঠিতে আনাস লেখেন…
‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম।
স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংড়া মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব ঘরে। একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় করে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয় সে-ই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।’
আনাসের এই চিঠি পাঠের সময় ট্রাইব্যুনালে এক হৃদয়গ্রাহী নীরবতা নেমে আসে। তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তখন উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য সদস্যরাও।
শুনানি শেষে আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আমলে নিয়ে আদেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন ৩ জুন।
এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ মোট আটজনকে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে চিফ প্রসিকিউটরের দপ্তরে ২১ এপ্রিল, যা পর্যালোচনা শেষে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন:
- হাবিবুর রহমান (সাবেক ডিএমপি কমিশনার)
- সুদীপ কুমার চক্রবর্তী (সাবেক যুগ্ম কমিশনার)
- শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম (সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার, রমনা)
- মোহাম্মদ ইমরুল (সাবেক সহকারী কমিশনার, রমনা)
- মো. আরশাদ হোসেন (সাবেক পরিদর্শক, শাহবাগ থানা)
- মো. সুজন হোসেন (কনস্টেবল)
- ইমাজ হোসেন
- মো. নাসিরুল ইসলাম
এই আটজনের মধ্যে চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, বাকিরা পলাতক। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন: পরিদর্শক আরশাদ, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।