মার্কিন আদালতের আদেশে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত

- Update Time : ১২:২২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ১১০ Time View
৭,০০০–এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে—আদালতের স্থগিতাদেশে সাময়িক স্বস্তি হার্ভার্ডে
এক ঐতিহাসিক আইনগত সিদ্ধান্তে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জারি করা এক কঠোর এবং বিতর্কিত আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) যৌথভাবে আদালতের দ্বারস্থ হলে, বিচারপতির রায়ে শিক্ষার্থীরা আপাতত স্বস্তি পেলেও ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
এই আদেশ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যারা শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলেন, সেইসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়। এর ফলে হার্ভার্ডের প্রায় ৭,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা, বসবাস এবং ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
পটভূমি: কোভিড–১৯ ও অভিবাসন নীতির সংঘাত
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সম্পূর্ণভাবে অনলাইন পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক এমন সময়েই ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ এক নির্বাহী আদেশ জারি করে জানায়—যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র অনলাইন কোর্সে নাম লেখাবে, তারা আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার যোগ্য নয়।
এই নির্দেশিকায় বলা হয়, তাদের হয় সশরীরে ক্লাস নিচ্ছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে অথবা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন (দেশছাড়া) প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিল বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। তারা এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যেখানে না ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল, না থাকার অধিকার।
হার্ভার্ড ও MIT-এর আইনি চ্যালেঞ্জ
হার্ভার্ড ও MIT যুক্তভাবে এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলায় যুক্তি দেওয়া হয়—
- এটি আইনবিরোধী ও সংবিধান লঙ্ঘনকারী: শিক্ষার্থীদের বৈধ অবস্থানকে হঠাৎ অবৈধ ঘোষণা করে, মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
- নির্যাতনমূলক ও প্রতিশোধপরায়ণ: কোভিড-১৯-এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
- ব্যবহারিকভাবে অসম্ভব ও বিপজ্জনক: সীমান্ত বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল এবং অনেক দেশে কোয়ারেন্টাইনের নিয়মের কারণে দেশে ফিরে যাওয়া অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব।
বিচারপতি অ্যালিসন বোরোঘস মামলার শুনানিতে বলেন, “এই নির্দেশনা যুক্তিহীন, মনগড়া এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচারপূর্ণ।” তিনি আদেশ স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি ব্যাখ্যার নির্দেশ দেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তেজনা ও উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
চীন, ভারত, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং প্রভৃতি দেশগুলোর সরকার ও শিক্ষাবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে “অমানবিক ও বৈদেশিক শিক্ষানীতিতে একধরনের আগ্রাসন” হিসেবে আখ্যা দেয়। ভারতের শিক্ষার্থীরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্নে এক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। জার্মানির শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন, “শিক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা কখনোই কূটনৈতিক অস্ত্র হতে পারে না।”
শুধু কূটনৈতিক মহল নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কাও প্রবল ছিল। একজন ভারতীয় শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যে দেশটিকে আমাদের একাডেমিক নিরাপত্তার আশ্রয় হিসেবে দেখতাম, সেই দেশই আজ আমাদের ত্যাগ করতে বলছে।”
হোয়াইট হাউসের জবাব: জাতীয় নিরাপত্তা বনাম শিক্ষার স্বাধীনতা
হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডের মামলাকে “অপ্রাসঙ্গিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিহিত করে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা একটি বিশেষাধিকার, অধিকার নয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরা জাতীয় নিরাপত্তার নামে ছাড় পেতে পারে না।”
প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় মহামারিকে ‘অজুহাত’ হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিকে পাশ কাটানোর জন্য। প্রেস সেক্রেটারি এই নির্দেশনাকে “সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর” বলেও অভিহিত করেন।
শিক্ষা খাতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরণের অভিবাসন নীতি শুধু মানবিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর মার্কিন অর্থনীতিতে আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখেন।
তাঁরা গবেষণা, ল্যাব, প্রযুক্তি এবং স্টেম (STEM) ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের নেতৃত্বে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিহার্য।
সহযোগিতা ও সংহতি: বৃহত্তর একাডেমিক ফ্রন্ট
হার্ভার্ড ও MIT-এর এই আইনি লড়াইয়ে শীঘ্রই যুক্ত হয় অন্যান্য প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন—স্ট্যানফোর্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সিস্টেম ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান amicus brief (বন্ধুপ্রতিম আদালতীয় বিবৃতি) জমা দিয়ে জানায়, এই নীতি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-অবকাঠামো এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
সাময়িক স্বস্তি, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ
আদালতের এই অস্থায়ী স্থগিতাদেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে এলেও, এটি চূড়ান্ত সমাধান নয়।
আইনি লড়াই চলবে এবং প্রশাসনের পক্ষে সিদ্ধান্ত এলেই ফের জারি হতে পারে নিষেধাজ্ঞা।
তবে এটি স্পষ্ট যে, উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক বৈচিত্র্যের পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই মামলার রায় শুধু একটি শিক্ষাগত সমস্যার সমাধান নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার মৌলিক মূল্যবোধ ও মানবিক নীতিমালার পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচিত হবে।
সাময়িকভাবে হার্ভার্ডের ৭,০০০ শিক্ষার্থী তাদের ক্লাস, গবেষণা ও স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যেতে পারছেন। তবে সেই স্বপ্ন নিরাপদ কিনা—তা নির্ভর করছে পরবর্তী বিচারিক ধাপ ও প্রশাসনিক অবস্থানের ওপর।
Please Share This Post in Your Social Media

মার্কিন আদালতের আদেশে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত

৭,০০০–এর বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে—আদালতের স্থগিতাদেশে সাময়িক স্বস্তি হার্ভার্ডে
এক ঐতিহাসিক আইনগত সিদ্ধান্তে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জারি করা এক কঠোর এবং বিতর্কিত আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) যৌথভাবে আদালতের দ্বারস্থ হলে, বিচারপতির রায়ে শিক্ষার্থীরা আপাতত স্বস্তি পেলেও ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
এই আদেশ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যারা শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলেন, সেইসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়। এর ফলে হার্ভার্ডের প্রায় ৭,০০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা, বসবাস এবং ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
পটভূমি: কোভিড–১৯ ও অভিবাসন নীতির সংঘাত
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সম্পূর্ণভাবে অনলাইন পাঠদানের সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক এমন সময়েই ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ এক নির্বাহী আদেশ জারি করে জানায়—যেসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র অনলাইন কোর্সে নাম লেখাবে, তারা আর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার যোগ্য নয়।
এই নির্দেশিকায় বলা হয়, তাদের হয় সশরীরে ক্লাস নিচ্ছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হতে হবে অথবা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন (দেশছাড়া) প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বহু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিল বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। তারা এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যেখানে না ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল, না থাকার অধিকার।
হার্ভার্ড ও MIT-এর আইনি চ্যালেঞ্জ
হার্ভার্ড ও MIT যুক্তভাবে এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলায় যুক্তি দেওয়া হয়—
- এটি আইনবিরোধী ও সংবিধান লঙ্ঘনকারী: শিক্ষার্থীদের বৈধ অবস্থানকে হঠাৎ অবৈধ ঘোষণা করে, মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
- নির্যাতনমূলক ও প্রতিশোধপরায়ণ: কোভিড-১৯-এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
- ব্যবহারিকভাবে অসম্ভব ও বিপজ্জনক: সীমান্ত বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল এবং অনেক দেশে কোয়ারেন্টাইনের নিয়মের কারণে দেশে ফিরে যাওয়া অনেকের জন্য ছিল অসম্ভব।
বিচারপতি অ্যালিসন বোরোঘস মামলার শুনানিতে বলেন, “এই নির্দেশনা যুক্তিহীন, মনগড়া এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচারপূর্ণ।” তিনি আদেশ স্থগিত করে ট্রাম্প প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি ব্যাখ্যার নির্দেশ দেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তেজনা ও উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
চীন, ভারত, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং প্রভৃতি দেশগুলোর সরকার ও শিক্ষাবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে “অমানবিক ও বৈদেশিক শিক্ষানীতিতে একধরনের আগ্রাসন” হিসেবে আখ্যা দেয়। ভারতের শিক্ষার্থীরা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার স্বপ্নে এক অনিশ্চয়তা নেমে এসেছে। জার্মানির শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেন, “শিক্ষাবিষয়ক সহযোগিতা কখনোই কূটনৈতিক অস্ত্র হতে পারে না।”
শুধু কূটনৈতিক মহল নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কাও প্রবল ছিল। একজন ভারতীয় শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা যে দেশটিকে আমাদের একাডেমিক নিরাপত্তার আশ্রয় হিসেবে দেখতাম, সেই দেশই আজ আমাদের ত্যাগ করতে বলছে।”
হোয়াইট হাউসের জবাব: জাতীয় নিরাপত্তা বনাম শিক্ষার স্বাধীনতা
হোয়াইট হাউস হার্ভার্ডের মামলাকে “অপ্রাসঙ্গিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে অভিহিত করে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা একটি বিশেষাধিকার, অধিকার নয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরা জাতীয় নিরাপত্তার নামে ছাড় পেতে পারে না।”
প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় মহামারিকে ‘অজুহাত’ হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিকে পাশ কাটানোর জন্য। প্রেস সেক্রেটারি এই নির্দেশনাকে “সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর” বলেও অভিহিত করেন।
শিক্ষা খাতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরণের অভিবাসন নীতি শুধু মানবিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর মার্কিন অর্থনীতিতে আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখেন।
তাঁরা গবেষণা, ল্যাব, প্রযুক্তি এবং স্টেম (STEM) ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের নেতৃত্বে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিহার্য।
সহযোগিতা ও সংহতি: বৃহত্তর একাডেমিক ফ্রন্ট
হার্ভার্ড ও MIT-এর এই আইনি লড়াইয়ে শীঘ্রই যুক্ত হয় অন্যান্য প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন—স্ট্যানফোর্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সিস্টেম ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান amicus brief (বন্ধুপ্রতিম আদালতীয় বিবৃতি) জমা দিয়ে জানায়, এই নীতি শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-অবকাঠামো এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভবিষ্যতের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
সাময়িক স্বস্তি, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ
আদালতের এই অস্থায়ী স্থগিতাদেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে এলেও, এটি চূড়ান্ত সমাধান নয়।
আইনি লড়াই চলবে এবং প্রশাসনের পক্ষে সিদ্ধান্ত এলেই ফের জারি হতে পারে নিষেধাজ্ঞা।
তবে এটি স্পষ্ট যে, উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক বৈচিত্র্যের পক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই মামলার রায় শুধু একটি শিক্ষাগত সমস্যার সমাধান নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার মৌলিক মূল্যবোধ ও মানবিক নীতিমালার পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচিত হবে।
সাময়িকভাবে হার্ভার্ডের ৭,০০০ শিক্ষার্থী তাদের ক্লাস, গবেষণা ও স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যেতে পারছেন। তবে সেই স্বপ্ন নিরাপদ কিনা—তা নির্ভর করছে পরবর্তী বিচারিক ধাপ ও প্রশাসনিক অবস্থানের ওপর।