সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ১১:০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • / ১৩২ Time View

images 20(1)

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

images 20(1)

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার এমন এক সুযোগ এসেছে, যখন জাতি হিসেবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ার, ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করতে পারতাম। কিন্তু আমরা কি সেই সুযোগের মর্যাদা দিচ্ছি? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা আবারও ক্ষমতার লোভে, হিংসা-বিদ্বেষে, এবং আত্মস্বার্থে বিভক্ত হয়ে পড়ছি।

আমরা ভুলে যাচ্ছি, মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলেছেন:

আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে।”
(সূরা রাদ, আয়াত ১১)

এই আয়াত আমাদের জন্য এক অপূর্ব বার্তা ও সতর্কবার্তা। আল্লাহ আমাদের হাতে একটি মহামূল্যবান সুযোগ দিয়েছেন—একটি নতুন সূচনা করার সুযোগ। কিন্তু আমরা যদি সেই সুযোগকে অবহেলা করি, যদি আমরা নিজেদের চরিত্র, রাজনীতি ও সমাজের দুর্নীতিপূর্ণ অবস্থা বদলানোর উদ্যোগ না নিই, তাহলে সেই আশীর্বাদ অভিশাপে পরিণত হবে।

বর্তমান সময়ে আমরা কি করছি?

  • আমরা রাজনৈতিক সংস্কারের পরিবর্তে দলাদলিতে লিপ্ত হচ্ছি।
  • আমরা ক্ষমতার জন্য পরস্পরকে অপমান করছি, ষড়যন্ত্র করছি, এমনকি সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছি।
  • আমরা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
  • আমরা সুশাসনের পরিবর্তে সুবিধাবাদী রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছি।
  • আমরা নৈতিকতা ও ন্যায়ের পথে চলার পরিবর্তে কৌশলী অসততা ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি।

একটি জাতির পক্ষে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য তখনই ঘটে, যখন সে সুযোগ পাওয়ার পরও তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। আমরা যেন সেই ভুল না করি। স্বাধীনতার পর বহু বছর আমরা নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন, দুর্নীতিপূর্ণ শাসন এবং একনায়কতন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছি। এখন যখন মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে—সংস্কার, জবাবদিহিতা ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের দাবি উঠেছে, তখন আবার কিছু গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সেই আশাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।

আমরা যেন ভুলে না যাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার একই সুযোগ দেন না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা আল্লাহর দানকে অবহেলা করেছে, যারা তার হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়েছে। ফারাও, নমরুদ, কারুন—সবাই তার উদাহরণ।

এখন সময় introspection বা আত্মবিশ্লেষণের। সময় এসেছে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক চরিত্রকে বদলানোর। এখনই প্রয়োজন—

  • সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার,
  • সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার,
  • ইসলামি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার,
  • ক্ষমতা নয়, বরং দায়িত্ব ও সেবার মানসিকতায় রাজনীতি চর্চার।

আমরা যদি এখনই না বদলাই, তাহলে হয়তো আমাদের সামনে আরও অন্ধকার অপেক্ষা করছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া এই সুযোগ যদি আমরা অপচয় করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

অতএব আসুন, আমরা সকলে মিলে নিজেরা বদলাই, সমাজকে বদলাই, দেশকে বদলাই। ফ্যাসিবাদী অতীত ভুলে গিয়ে, একটি ন্যায্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ি—যেখানে থাকবে না অন্যায়, থাকবে না দুঃশাসন, থাকবে না বৈষম্য।

আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত দেন, এই সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে, নিজেদের ও জাতির ভাগ্য বদলাতে। আমিন।

@billalhossain

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে

Update Time : ১১:০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

images 20(1)

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার এমন এক সুযোগ এসেছে, যখন জাতি হিসেবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ার, ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করতে পারতাম। কিন্তু আমরা কি সেই সুযোগের মর্যাদা দিচ্ছি? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা আবারও ক্ষমতার লোভে, হিংসা-বিদ্বেষে, এবং আত্মস্বার্থে বিভক্ত হয়ে পড়ছি।

আমরা ভুলে যাচ্ছি, মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে সূরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলেছেন:

আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে।”
(সূরা রাদ, আয়াত ১১)

এই আয়াত আমাদের জন্য এক অপূর্ব বার্তা ও সতর্কবার্তা। আল্লাহ আমাদের হাতে একটি মহামূল্যবান সুযোগ দিয়েছেন—একটি নতুন সূচনা করার সুযোগ। কিন্তু আমরা যদি সেই সুযোগকে অবহেলা করি, যদি আমরা নিজেদের চরিত্র, রাজনীতি ও সমাজের দুর্নীতিপূর্ণ অবস্থা বদলানোর উদ্যোগ না নিই, তাহলে সেই আশীর্বাদ অভিশাপে পরিণত হবে।

বর্তমান সময়ে আমরা কি করছি?

  • আমরা রাজনৈতিক সংস্কারের পরিবর্তে দলাদলিতে লিপ্ত হচ্ছি।
  • আমরা ক্ষমতার জন্য পরস্পরকে অপমান করছি, ষড়যন্ত্র করছি, এমনকি সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছি।
  • আমরা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
  • আমরা সুশাসনের পরিবর্তে সুবিধাবাদী রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছি।
  • আমরা নৈতিকতা ও ন্যায়ের পথে চলার পরিবর্তে কৌশলী অসততা ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি।

একটি জাতির পক্ষে সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য তখনই ঘটে, যখন সে সুযোগ পাওয়ার পরও তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়। আমরা যেন সেই ভুল না করি। স্বাধীনতার পর বহু বছর আমরা নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন, দুর্নীতিপূর্ণ শাসন এবং একনায়কতন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়েছি। এখন যখন মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে—সংস্কার, জবাবদিহিতা ও ন্যায়ভিত্তিক শাসনের দাবি উঠেছে, তখন আবার কিছু গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে সেই আশাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।

আমরা যেন ভুলে না যাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার একই সুযোগ দেন না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা আল্লাহর দানকে অবহেলা করেছে, যারা তার হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়েছে। ফারাও, নমরুদ, কারুন—সবাই তার উদাহরণ।

এখন সময় introspection বা আত্মবিশ্লেষণের। সময় এসেছে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক চরিত্রকে বদলানোর। এখনই প্রয়োজন—

  • সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার,
  • সুশাসন, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার,
  • ইসলামি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার,
  • ক্ষমতা নয়, বরং দায়িত্ব ও সেবার মানসিকতায় রাজনীতি চর্চার।

আমরা যদি এখনই না বদলাই, তাহলে হয়তো আমাদের সামনে আরও অন্ধকার অপেক্ষা করছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া এই সুযোগ যদি আমরা অপচয় করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

অতএব আসুন, আমরা সকলে মিলে নিজেরা বদলাই, সমাজকে বদলাই, দেশকে বদলাই। ফ্যাসিবাদী অতীত ভুলে গিয়ে, একটি ন্যায্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ি—যেখানে থাকবে না অন্যায়, থাকবে না দুঃশাসন, থাকবে না বৈষম্য।

আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত দেন, এই সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে, নিজেদের ও জাতির ভাগ্য বদলাতে। আমিন।

@billalhossain

শেয়ার করুনঃ
Pin Share