ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত পরিকল্পনা: গাজার ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের প্রস্তাব,আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

- Update Time : ১১:২১:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ১৪১ Time View

২০২৫ সালের মে মাসে এনবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করছিল। এই তথাকথিত “নতুন মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা” আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে একে অনেকেই বিপজ্জনক ও অমানবিক বলে আখ্যা দেন।
পরিকল্পনার মূল বিষয়বস্তু:
এনবিসি নিউজ জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়ার তৎকালীন নেতাদের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠকে বসেছিল। আলোচনায় উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছু অর্থ মুক্ত করে দেওয়ার বিনিময়ে গাজার অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল।
এছাড়াও, পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য লিবিয়ায় নতুন আবাসন, স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। আর্থিক প্রণোদনার অংশ হিসেবে শিক্ষা বৃত্তি, ক্ষুদ্র ঋণ ও কর্মসংস্থান সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে ছিল মূলত একটি “লোভনীয় প্রলোভন”।
ফিলিস্তিনি জনগণ
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব সরব হয়। গাজার শাসক সংগঠন হামাসের অন্যতম সিনিয়র নেতা ড. বাসেম নাঈম একে “জাতিগত নির্মূলের সূচনা” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন:
“ফিলিস্তিনিরা কেবল একটি ভৌগোলিক এলাকার নাম নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের অংশ। মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তর করার চিন্তাই আমাদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত।”
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) একে “নব্য-উপনিবেশবাদের রূপরেখা” আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। পশ্চিমতীরের ফাতাহ আন্দোলনও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং একে “ফিলিস্তিনি জাতির আত্মহত্যার রূপরেখা” বলে অভিহিত করে।
লিবিয়ার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ:
লিবিয়া, ২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই এক গভীর রাজনৈতিক সংকট ও গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। দেশটিতে এখনো দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার — ত্রিপোলি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার এবং পূর্ব লিবিয়াভিত্তিক হাফতার সরকারের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ লেগেই আছে। এই অবস্থায় এমন এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা শুধু প্রশাসনিক দিক থেকেই নয়, নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও বিপর্যয়কর হতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ১০ লাখ নতুন উদ্বাস্তুর আগমন লিবিয়ার ইতোমধ্যেই ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন লিবিয়াকে আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সংস্থার মতামত:
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর, বিশেষ করে একটি দখলদার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে “অবৈধ, অমানবিক ও নিন্দনীয়” বলে উল্লেখ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে “একটি সজ্জিত জাতিগত নির্মূলের প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার এক বিবৃতিতে বলেন:
“ফিলিস্তিনিদের সম্মতি ছাড়া তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ট্রাম্পের বৃহত্তর পরিকল্পনা: ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ তত্ত্ব:
ট্রাম্প প্রশাসনের ভাবনার মধ্যে ছিল, গাজার জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করে ভূখণ্ডটিকে একটি ব্যবসাবান্ধব, পর্যটনসমৃদ্ধ, অবকাঠামো আধুনিক “রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তোলা, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বিনিয়োগের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছিলেন:
“যদি আমরা গাজাকে ফাঁকা করে সেখানে আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলি, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের হংকং বা দুবাই হতে পারে।”
এই বক্তব্য বিশ্বব্যাপী নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে। অনেকেই একে “উন্নয়নের নামে দখলদারিত্ব” বলেও অভিহিত করেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন:
“এই পরিকল্পনা একটি পরিষ্কার জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস একে “নৈতিক ও মানবিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন” আখ্যা দেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করে:
“এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজা সংকটকে আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল করে তোলা হচ্ছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে।”
চীন ও তুরস্কও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন:
“ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ একটি ঐতিহাসিক অপরাধ।”
ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিতর্কিত পরিকল্পনা শুধু একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব নয় — এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক মোড় নির্দেশ করে। এটি মানবিক, আইনি ও রাজনৈতিক দিক থেকে অনৈতিক ও অস্থিতিশীল। যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে শুধু ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বই নয়, বরং লিবিয়া ও গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
অতএব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একযোগে এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা এবং একটি টেকসই, ন্যায়সঙ্গত ও ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মতিসহ প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়া।
[তথ্যসূত্র: NBC News, UN Reports, Amnesty International, Human Rights Watch, Al Jazeera, The Guardian]
Please Share This Post in Your Social Media

ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত পরিকল্পনা: গাজার ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের প্রস্তাব,আন্তর্জাতিক উদ্বেগ


২০২৫ সালের মে মাসে এনবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করছিল। এই তথাকথিত “নতুন মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা” আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে একে অনেকেই বিপজ্জনক ও অমানবিক বলে আখ্যা দেন।
পরিকল্পনার মূল বিষয়বস্তু:
এনবিসি নিউজ জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়ার তৎকালীন নেতাদের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠকে বসেছিল। আলোচনায় উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছু অর্থ মুক্ত করে দেওয়ার বিনিময়ে গাজার অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল।
এছাড়াও, পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য লিবিয়ায় নতুন আবাসন, স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। আর্থিক প্রণোদনার অংশ হিসেবে শিক্ষা বৃত্তি, ক্ষুদ্র ঋণ ও কর্মসংস্থান সুবিধার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে ছিল মূলত একটি “লোভনীয় প্রলোভন”।
ফিলিস্তিনি
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব সরব হয়। গাজার শাসক সংগঠন হামাসের অন্যতম সিনিয়র নেতা ড. বাসেম নাঈম একে “জাতিগত নির্মূলের সূচনা” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন:
“ফিলিস্তিনিরা কেবল একটি ভৌগোলিক এলাকার নাম নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের অংশ। মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তর করার চিন্তাই আমাদের অস্তিত্বের ওপর আঘাত।”
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) একে “নব্য-উপনিবেশবাদের রূপরেখা” আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয়। পশ্চিমতীরের ফাতাহ আন্দোলনও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং একে “ফিলিস্তিনি জাতির আত্মহত্যার রূপরেখা” বলে অভিহিত করে।
লিবিয়ার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ:
লিবিয়া, ২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই এক গভীর রাজনৈতিক সংকট ও গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। দেশটিতে এখনো দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার — ত্রিপোলি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার এবং পূর্ব লিবিয়াভিত্তিক হাফতার সরকারের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ লেগেই আছে। এই অবস্থায় এমন এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করা শুধু প্রশাসনিক দিক থেকেই নয়, নিরাপত্তাজনিত দিক থেকেও বিপর্যয়কর হতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ১০ লাখ নতুন উদ্বাস্তুর আগমন লিবিয়ার ইতোমধ্যেই ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে। ফলে, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন লিবিয়াকে আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সংস্থার মতামত:
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর, বিশেষ করে একটি দখলদার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে “অবৈধ, অমানবিক ও নিন্দনীয়” বলে উল্লেখ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে “একটি সজ্জিত জাতিগত নির্মূলের প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার এক বিবৃতিতে বলেন:
“ফিলিস্তিনিদের সম্মতি ছাড়া তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ট্রাম্পের বৃহত্তর পরিকল্পনা: ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ তত্ত্ব:
ট্রাম্প প্রশাসনের ভাবনার মধ্যে ছিল, গাজার জনগণকে অন্যত্র স্থানান্তর করে ভূখণ্ডটিকে একটি ব্যবসাবান্ধব, পর্যটনসমৃদ্ধ, অবকাঠামো আধুনিক “রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তোলা, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বিনিয়োগের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছিলেন:
“যদি আমরা গাজাকে ফাঁকা করে সেখানে আধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলি, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের হংকং বা দুবাই হতে পারে।”
এই বক্তব্য বিশ্বব্যাপী নেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে। অনেকেই একে “উন্নয়নের নামে দখলদারিত্ব” বলেও অভিহিত করেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন:
“এই পরিকল্পনা একটি পরিষ্কার জাতিগত নির্মূলের উদাহরণ এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।”
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস একে “নৈতিক ও মানবিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন” আখ্যা দেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্য করে:
“এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজা সংকটকে আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল করে তোলা হচ্ছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়াবে।”
চীন ও তুরস্কও এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন:
“ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ একটি ঐতিহাসিক অপরাধ।”
ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিতর্কিত পরিকল্পনা শুধু একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব নয় — এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক মোড় নির্দেশ করে। এটি মানবিক, আইনি ও রাজনৈতিক দিক থেকে অনৈতিক ও অস্থিতিশীল। যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে শুধু ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বই নয়, বরং লিবিয়া ও গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
অতএব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একযোগে এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা এবং একটি টেকসই, ন্যায়সঙ্গত ও ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মতিসহ প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হওয়া।
[তথ্যসূত্র: NBC News, UN Reports, Amnesty International, Human Rights Watch, Al Jazeera, The Guardian]