সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

আওয়ামী লীগে পদত্যাগের ঢল: ভাঙনের শব্দ কি চূড়ান্ত পরিণতির পূর্বাভাস?

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • / ১৫৬ Time View

bb 20250516181740

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

bb 20250516181740

ফ্যাসিবাদী আচরণে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগে বর্তমানে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একের পর এক নেতা পদত্যাগ করছেন দল থেকে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকেই এ ভাঙন শুরু হয়। এই পদত্যাগগুলো কেবল নিঃশব্দ নয়—কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সরাসরি স্বৈরতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন, আবার কেউ সংবাদ সম্মেলন করে জনসম্মুখে দলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন। কেউ কেউ এমনও করছেন—দুধ ঢেলে নিজেকে ‘শুদ্ধ’ করে দল ছাড়ার প্রতীকী বার্তা দিচ্ছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে: হঠাৎ করে এত নেতার দলত্যাগের পেছনে কী কারণ?

এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু গূঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ বাস্তবতা। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের সময় স্বয়ং শেখ হাসিনা ‘চোরের মতো’ পালিয়ে গিয়ে মাঠের কর্মীদের ফেলে দেন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। সেই সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ছাত্র-জনতার’ ওপর দমনপীড়নে অংশ নেন হাসিনার নির্দেশে, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে। অথচ বিপদের সময় নেত্রী নিজে আত্মরক্ষায় লিপ্ত হয়ে, কর্মীদের মুখোমুখি রেখে দেশ ত্যাগ করেন। এ ধরনের নিষ্ঠুর ও অবিশ্বস্ত নেতৃত্বই আজ দলত্যাগের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এখন দেশের বাইরে। কেউ জানে না তারা আদৌ আবার দেশের মাটিতে ফিরতে পারবেন কি না। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে আবার জানা গেছে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এ সমস্ত তথ্য দলটির ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলেছে। এসব অনিশ্চয়তা, ভয়, ও হতাশা থেকেই বহু নেতা বাধ্য হয়েই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে হাসিনার নির্দেশে যারা ছাত্র জনতার ওপর নিপীড়নে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন আইনি জটিলতায় জর্জরিত। অনেকে আছেন কারাগারে, কেউবা পলাতক। এই কঠিন পরিণতি তাঁদের মধ্যে গভীর অনুশোচনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় সৃষ্টি করেছে, যার ফলশ্রুতিতে তারা আওয়ামী লীগ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আরেকটি দিকও উল্লেখযোগ্য। দেশের সাধারণ মানুষ এখন আওয়ামী লীগের নাম শুনতেও চায় না। জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনমনে তৈরি হয়েছে ঘৃণা ও প্রতিরোধের এক অনমনীয় আবহ। দেশের মাটিতে রয়ে যাওয়া নেতারাও আজ জনরোষ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার। এমন পরিস্থিতিতে দলের রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা অনেকের কাছে অসম্মানজনক ও আত্মঘাতী বলেই মনে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে, আওয়ামী লীগে এই দলবদ্ধ পদত্যাগ কেবল একটি দলীয় সংকট নয়—এটি এক গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়া থেকে মুক্তি পেতে চাওয়া সাবেক নেতারা আজ নতুন এক যাত্রায় পা রাখছেন—একটি সম্ভাব্য গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

আওয়ামী লীগে পদত্যাগের ঢল: ভাঙনের শব্দ কি চূড়ান্ত পরিণতির পূর্বাভাস?

Update Time : ১০:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

bb 20250516181740

ফ্যাসিবাদী আচরণে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগে বর্তমানে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একের পর এক নেতা পদত্যাগ করছেন দল থেকে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকেই এ ভাঙন শুরু হয়। এই পদত্যাগগুলো কেবল নিঃশব্দ নয়—কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সরাসরি স্বৈরতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন, আবার কেউ সংবাদ সম্মেলন করে জনসম্মুখে দলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন। কেউ কেউ এমনও করছেন—দুধ ঢেলে নিজেকে ‘শুদ্ধ’ করে দল ছাড়ার প্রতীকী বার্তা দিচ্ছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে: হঠাৎ করে এত নেতার দলত্যাগের পেছনে কী কারণ?

এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু গূঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ বাস্তবতা। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের সময় স্বয়ং শেখ হাসিনা ‘চোরের মতো’ পালিয়ে গিয়ে মাঠের কর্মীদের ফেলে দেন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। সেই সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ‘ছাত্র-জনতার’ ওপর দমনপীড়নে অংশ নেন হাসিনার নির্দেশে, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে। অথচ বিপদের সময় নেত্রী নিজে আত্মরক্ষায় লিপ্ত হয়ে, কর্মীদের মুখোমুখি রেখে দেশ ত্যাগ করেন। এ ধরনের নিষ্ঠুর ও অবিশ্বস্ত নেতৃত্বই আজ দলত্যাগের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন অনেকে।

অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা এখন দেশের বাইরে। কেউ জানে না তারা আদৌ আবার দেশের মাটিতে ফিরতে পারবেন কি না। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে আবার জানা গেছে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। এ সমস্ত তথ্য দলটির ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলেছে। এসব অনিশ্চয়তা, ভয়, ও হতাশা থেকেই বহু নেতা বাধ্য হয়েই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে হাসিনার নির্দেশে যারা ছাত্র জনতার ওপর নিপীড়নে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন আইনি জটিলতায় জর্জরিত। অনেকে আছেন কারাগারে, কেউবা পলাতক। এই কঠিন পরিণতি তাঁদের মধ্যে গভীর অনুশোচনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় সৃষ্টি করেছে, যার ফলশ্রুতিতে তারা আওয়ামী লীগ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আরেকটি দিকও উল্লেখযোগ্য। দেশের সাধারণ মানুষ এখন আওয়ামী লীগের নাম শুনতেও চায় না। জুলাই অভ্যুত্থানের পর জনমনে তৈরি হয়েছে ঘৃণা ও প্রতিরোধের এক অনমনীয় আবহ। দেশের মাটিতে রয়ে যাওয়া নেতারাও আজ জনরোষ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার। এমন পরিস্থিতিতে দলের রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা অনেকের কাছে অসম্মানজনক ও আত্মঘাতী বলেই মনে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে, আওয়ামী লীগে এই দলবদ্ধ পদত্যাগ কেবল একটি দলীয় সংকট নয়—এটি এক গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়া থেকে মুক্তি পেতে চাওয়া সাবেক নেতারা আজ নতুন এক যাত্রায় পা রাখছেন—একটি সম্ভাব্য গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share