ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সার্ককে পুনর্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা

- Update Time : ১০:৫১:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ১২৩ Time View
সার্কের সুপ্ত প্রতিশ্রুতি
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা—সার্ক (SAARC)—১৯৮৫ সালে ঢাকায় আত্মপ্রকাশ করেছিল এক উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সংহত অঞ্চল গড়ে তোলা। সদস্য রাষ্ট্রগুলো—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া আফগানিস্তান—বিশ্বের প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল সত্ত্বেও, সার্ক তার সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনি। এর প্রধান কারণ ভারত-পাকিস্তান বিরোধ, যা সংস্থাটিকে প্রায় অচল করে দিয়েছে। সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের ইসলামাবাদ সম্মেলন ভারত বর্জন করে, পরে অন্যান্য দেশও পিছু হটে। এর ফলে সংস্থাটি এক দশক ধরে কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
ভারত–পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছায়ায় সার্ক
ক. ঐতিহাসিক উত্তেজনা ও আস্থাহীনতা
ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ পর্যন্ত একাধিক সামরিক সংঘর্ষ, সীমান্ত উত্তেজনা এবং কাশ্মীর ইস্যুকে ঘিরে পারস্পরিক অবিশ্বাস চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা সার্ককে বহুবার জিম্মি করেছে।
খ. পাকিস্তানের চীনের দিকে ঝুঁক এবং ভারতের উদ্বেগ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC), যা BRI-এর অন্তর্ভুক্ত, পাকিস্তান-চীন সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। কিন্তু প্রকল্পটি বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যাকে ভারত তার অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড মনে করে। এর ফলে সার্কের মধ্যে কোনো বড় আঞ্চলিক অবকাঠামো প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
একটি অকার্যকর সার্কের মাশুল
ক. অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ও সম্ভাবনার অপচয়
দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের মাত্রা মাত্র ৫%—যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আসিয়ান অঞ্চলের তুলনায় নগণ্য। সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে SAPTA ও SAFTA চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন অনিয়মিত ও আস্থাহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর পাকিস্তান ভারতীয় পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
খ. জ্বালানি ও সংযোগের অগ্রগতির অভাব
দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যমান বিশাল জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। নেপাল-ভুটানের জলবিদ্যুৎ, বাংলাদেশের গ্যাস ও ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ একটি আঞ্চলিক জ্বালানি সংযোগের মাধ্যমে সবার উপকারে আসতে পারত। কিন্তু TAPI গ্যাস পাইপলাইন, সার্ক এনার্জি গ্রিড, আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ এসবই থমকে আছে।
গ. জনকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সংহতির ব্যর্থতা
একটি কার্যকর সার্ক যৌথ টিকা গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগোতে পারত। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সার্ক একবারের জন্য একটি ভিডিও কনফারেন্স করলেও কোনো স্থায়ী কাঠামো গড়ে ওঠেনি।
নতুন আঞ্চলিকতার জন্য সার্ককে পুনঃকল্পনা
ক. নমনীয় সহযোগিতা মডেল – SAARC 2.0
সার্ককে এমনভাবে গঠিত করতে হবে যাতে সব সদস্যের সম্মতি ছাড়াও কিছু উপগোষ্ঠী নির্দিষ্ট খাতে কাজ করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেমন শেনজেন বা ইউরোজোন সদস্যদের আলাদা কার্যক্রম রয়েছে, তেমন মডুলার কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ায়ও সম্ভব।
খ. কম বিতর্কিত বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ
- জলবায়ু পরিবর্তন: দক্ষিণ এশীয় জলবায়ু কমিশন গঠন করে অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: নিরপেক্ষ SAARC Rapid Response Force গঠন, ভূমিকম্প, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াবে।
- ডিজিটাল স্বাস্থ্য অবকাঠামো: একটি অভিন্ন ডিজিটাল হেলথ পাসপোর্ট ও আঞ্চলিক রোগ নজরদারি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
- সাংস্কৃতিক কূটনীতি ও যুব বিনিময়: SAARC Youth Games, চলচ্চিত্র উৎসব, এবং যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠবে।
গ. অর্থনৈতিক করিডোর ও ডিজিটাল সহযোগিতা
- আঞ্চলিক SME প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করে বাণিজ্যিক সুযোগ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
• SAARC Digital Currency Sandbox চালু করে এক্সচেঞ্জ রেটের জটিলতা কাটিয়ে ডিজিটাল ট্রান্সঅ্যাকশন সহজ করা সম্ভব।
ভারত ও পাকিস্তানের লাভ কোথায়?
ভারতের কৌশলগত সুফল:
- সার্ককে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা।
• অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আঞ্চলিক সংযোগের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করা।
• আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো।
পাকিস্তানের সম্ভাব্য লাভ:
- ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার, বিশেষত কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল খাতে।
• সাশ্রয়ী ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া।
• আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠা।
ছোট দেশগুলোর কৌশলগত দায়িত্ব
নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো ভারত-পাকিস্তান বিরোধে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে: • বিষয়ভিত্তিক সংলাপের সূচনা করতে পারে।
• ত্রিপাক্ষিক প্রকল্প (যেমন: জলবিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষাবিনিময়) চালু করতে পারে।
• একটি আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি কাঠামোর প্রস্তাব দিতে পারে (উদাহরণ: ইউরোপের OSCE)।
প্রতীকী সম্মেলনের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন
সার্কের ভবিষ্যৎ এখন প্রতীকী সম্মেলনের বাইরে গিয়ে বাস্তবমুখী, নমনীয় ও টেকসই আঞ্চলিক কাঠামো নির্মাণের ওপর নির্ভর করছে। ভারত ও পাকিস্তান যদি নিজেদের দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সহযোদ্ধা হতে পারে, তাহলে সার্ক দক্ষিণ এশিয়াকে শুধু একটি অঞ্চল নয়—একটি উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে।
সার্কের সামনে এখন দুটি রাস্তা—একটি অচলাবস্থার দিকে, আরেকটি পুনর্জন্মের পথে। ভারত ও পাকিস্তান যদি সংঘাত নয়, সহযোগিতা বেছে নেয়, যদি ছোট দেশগুলো কৌশলগত সাহস দেখায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া পারে বিশ্বের সবচেয়ে সংহত ও উদীয়মান অঞ্চলে পরিণত হতে।
সার্ক কোনো কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি মানবিক ও ঐতিহাসিক প্রয়োজন। এখন সময় এটি নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার।
Please Share This Post in Your Social Media

ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সার্ককে পুনর্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা

সার্কের সুপ্ত প্রতিশ্রুতি
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা—সার্ক (SAARC)—১৯৮৫ সালে ঢাকায় আত্মপ্রকাশ করেছিল এক উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সংহত অঞ্চল গড়ে তোলা। সদস্য রাষ্ট্রগুলো—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া আফগানিস্তান—বিশ্বের প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত মিল সত্ত্বেও, সার্ক তার সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেনি। এর প্রধান কারণ ভারত-পাকিস্তান বিরোধ, যা সংস্থাটিকে প্রায় অচল করে দিয়েছে। সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের ইসলামাবাদ সম্মেলন ভারত বর্জন করে, পরে অন্যান্য দেশও পিছু হটে। এর ফলে সংস্থাটি এক দশক ধরে কার্যত অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
ভারত–পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছায়ায় সার্ক
ক. ঐতিহাসিক উত্তেজনা ও আস্থাহীনতা
ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ পর্যন্ত একাধিক সামরিক সংঘর্ষ, সীমান্ত উত্তেজনা এবং কাশ্মীর ইস্যুকে ঘিরে পারস্পরিক অবিশ্বাস চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা সার্ককে বহুবার জিম্মি করেছে।
খ. পাকিস্তানের চীনের দিকে ঝুঁক এবং ভারতের উদ্বেগ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC), যা BRI-এর অন্তর্ভুক্ত, পাকিস্তান-চীন সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। কিন্তু প্রকল্পটি বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যাকে ভারত তার অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড মনে করে। এর ফলে সার্কের মধ্যে কোনো বড় আঞ্চলিক অবকাঠামো প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
একটি অকার্যকর সার্কের মাশুল
ক. অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ও সম্ভাবনার অপচয়
দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের মাত্রা মাত্র ৫%—যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আসিয়ান অঞ্চলের তুলনায় নগণ্য। সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে SAPTA ও SAFTA চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন অনিয়মিত ও আস্থাহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর পাকিস্তান ভারতীয় পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
খ. জ্বালানি ও সংযোগের অগ্রগতির অভাব
দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যমান বিশাল জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। নেপাল-ভুটানের জলবিদ্যুৎ, বাংলাদেশের গ্যাস ও ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পদ একটি আঞ্চলিক জ্বালানি সংযোগের মাধ্যমে সবার উপকারে আসতে পারত। কিন্তু TAPI গ্যাস পাইপলাইন, সার্ক এনার্জি গ্রিড, আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ এসবই থমকে আছে।
গ. জনকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক সংহতির ব্যর্থতা
একটি কার্যকর সার্ক যৌথ টিকা গবেষণা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেক দূর এগোতে পারত। কোভিড-১৯ মহামারির সময় সার্ক একবারের জন্য একটি ভিডিও কনফারেন্স করলেও কোনো স্থায়ী কাঠামো গড়ে ওঠেনি।
নতুন আঞ্চলিকতার জন্য সার্ককে পুনঃকল্পনা
ক. নমনীয় সহযোগিতা মডেল – SAARC 2.0
সার্ককে এমনভাবে গঠিত করতে হবে যাতে সব সদস্যের সম্মতি ছাড়াও কিছু উপগোষ্ঠী নির্দিষ্ট খাতে কাজ করতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেমন শেনজেন বা ইউরোজোন সদস্যদের আলাদা কার্যক্রম রয়েছে, তেমন মডুলার কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ায়ও সম্ভব।
খ. কম বিতর্কিত বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ
- জলবায়ু পরিবর্তন: দক্ষিণ এশীয় জলবায়ু কমিশন গঠন করে অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: নিরপেক্ষ SAARC Rapid Response Force গঠন, ভূমিকম্প, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়াবে।
- ডিজিটাল স্বাস্থ্য অবকাঠামো: একটি অভিন্ন ডিজিটাল হেলথ পাসপোর্ট ও আঞ্চলিক রোগ নজরদারি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব।
- সাংস্কৃতিক কূটনীতি ও যুব বিনিময়: SAARC Youth Games, চলচ্চিত্র উৎসব, এবং যৌথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগ গড়ে উঠবে।
গ. অর্থনৈতিক করিডোর ও ডিজিটাল সহযোগিতা
- আঞ্চলিক SME প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করে বাণিজ্যিক সুযোগ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
• SAARC Digital Currency Sandbox চালু করে এক্সচেঞ্জ রেটের জটিলতা কাটিয়ে ডিজিটাল ট্রান্সঅ্যাকশন সহজ করা সম্ভব।
ভারত ও পাকিস্তানের লাভ কোথায়?
ভারতের কৌশলগত সুফল:
- সার্ককে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা।
• অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আঞ্চলিক সংযোগের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করা।
• আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানো।
পাকিস্তানের সম্ভাব্য লাভ:
- ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার, বিশেষত কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল খাতে।
• সাশ্রয়ী ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া।
• আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠা।
ছোট দেশগুলোর কৌশলগত দায়িত্ব
নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো ভারত-পাকিস্তান বিরোধে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে: • বিষয়ভিত্তিক সংলাপের সূচনা করতে পারে।
• ত্রিপাক্ষিক প্রকল্প (যেমন: জলবিদ্যুৎ, কৃষি, শিক্ষাবিনিময়) চালু করতে পারে।
• একটি আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি কাঠামোর প্রস্তাব দিতে পারে (উদাহরণ: ইউরোপের OSCE)।
প্রতীকী সম্মেলনের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তব পদক্ষেপ প্রয়োজন
সার্কের ভবিষ্যৎ এখন প্রতীকী সম্মেলনের বাইরে গিয়ে বাস্তবমুখী, নমনীয় ও টেকসই আঞ্চলিক কাঠামো নির্মাণের ওপর নির্ভর করছে। ভারত ও পাকিস্তান যদি নিজেদের দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে অন্তত কিছু ক্ষেত্রে সহযোদ্ধা হতে পারে, তাহলে সার্ক দক্ষিণ এশিয়াকে শুধু একটি অঞ্চল নয়—একটি উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে।
সার্কের সামনে এখন দুটি রাস্তা—একটি অচলাবস্থার দিকে, আরেকটি পুনর্জন্মের পথে। ভারত ও পাকিস্তান যদি সংঘাত নয়, সহযোগিতা বেছে নেয়, যদি ছোট দেশগুলো কৌশলগত সাহস দেখায়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া পারে বিশ্বের সবচেয়ে সংহত ও উদীয়মান অঞ্চলে পরিণত হতে।
সার্ক কোনো কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি একটি মানবিক ও ঐতিহাসিক প্রয়োজন। এখন সময় এটি নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার।