বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে : বিশ্বব্যাংক

- Update Time : ০৫:৪১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
- / ১০৮ Time View
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানায়, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপে দেশের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হতে পারে।
২৩ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর ২০২৫-২৬-এ প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়লেও তা হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা পূর্বের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক অর্থনীতিও দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২৫ সালে এই অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যেখানে গত অক্টোবরে দেওয়া পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২৬ সালে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। যদিও কর আদায়ের হার তুলনামূলক ভালো মনে হলেও প্রকৃত রাজস্ব আদায় অনেক কম রয়ে গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে এই হার ছিল প্রায় ২৪ শতাংশ। দুর্বল কর ব্যবস্থা, অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রসার এবং কৃষি খাতের আধিপত্য এই ব্যবধানের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, “এই অঞ্চলের রাজস্ব ঘাটতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।”
প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কেও তথ্য দেয়। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাসের কারণে প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ সালে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ সালে তা কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ভুটানে কৃষি খাত দুর্বল থাকায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, তবে পরবর্তী বছরে জলবিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির কারণে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মালদ্বীপে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কারণে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, “গত এক দশকে একাধিক প্রতিকূলতায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের প্রসার, কৃষি আধুনিকীকরণ ও বেসরকারি খাতকে সক্রিয় করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার।”
প্রতিবেদনে আরও সুপারিশ করা হয়— কর কাঠামোর সংস্কার, নীতিমালার সরলীকরণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং পরিবেশ দূষণজনিত কর প্রবর্তনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করার।
Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে : বিশ্বব্যাংক

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানায়, চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক চাপে দেশের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হতে পারে।
২৩ এপ্রিল প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর ২০২৫-২৬-এ প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়লেও তা হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা পূর্বের পূর্বাভাসের চেয়ে কম।
দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক অর্থনীতিও দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২৫ সালে এই অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যেখানে গত অক্টোবরে দেওয়া পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ২০২৬ সালে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি। যদিও কর আদায়ের হার তুলনামূলক ভালো মনে হলেও প্রকৃত রাজস্ব আদায় অনেক কম রয়ে গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সময়কালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল অঞ্চলে এই হার ছিল প্রায় ২৪ শতাংশ। দুর্বল কর ব্যবস্থা, অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রসার এবং কৃষি খাতের আধিপত্য এই ব্যবধানের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, “এই অঞ্চলের রাজস্ব ঘাটতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।”
প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কেও তথ্য দেয়। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাসের কারণে প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ সালে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ সালে তা কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। ভুটানে কৃষি খাত দুর্বল থাকায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, তবে পরবর্তী বছরে জলবিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির কারণে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। মালদ্বীপে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কারণে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, “গত এক দশকে একাধিক প্রতিকূলতায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের প্রসার, কৃষি আধুনিকীকরণ ও বেসরকারি খাতকে সক্রিয় করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার।”
প্রতিবেদনে আরও সুপারিশ করা হয়— কর কাঠামোর সংস্কার, নীতিমালার সরলীকরণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং পরিবেশ দূষণজনিত কর প্রবর্তনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করার।