সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বাংলাদেশি মডেল মেঘনা আলম গ্রেপ্তার

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৭৯ Time View

Meghna Alam

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
Meghna Alam
 

সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বাংলাদেশি মডেল ও সাবেক মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনা ঘিরে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

বিতর্কিত গ্রেপ্তার: বিশেষ ক্ষমতা আইন আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

৩০ বছর বয়সী মেঘনা আলমকে ৯ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়, যা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখার সুযোগ দেয়। এ আইনের অধীনে তাকে রাখা নিয়েই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা চলছে।

পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ তালেবুর রহমান এএফপি-কে জানান, প্রাথমিকভাবে তাকে অভিযোগ ছাড়া আটক রাখা হলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন।

অভিযোগের মূলভিত্তি: ব্যক্তিগত সম্পর্ক না ব্ল্যাকমেইল?

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মেঘনা ও কয়েকজন সহযোগী মিলে সৌদি কূটনীতিককে একটি ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। তারা রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পর্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।”

তবে অন্যদিকে, মেঘনার পরিবার ও নিজ বক্তব্য অনুযায়ী, পুরো ঘটনাটি ছিল এক ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিণতি, যা এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক রূপ নিচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মেঘনা আদালতে বলেন, “রাষ্ট্রদূতই প্রথমে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ দেখান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন এবং কিছুদিন সম্পর্কও রাখেন।”

তার বাবা বদরুল আলম বলেন, “রাষ্ট্রদূত আমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিবাহিত এবং তার সন্তান রয়েছে—এই কারণে মেঘনা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।”

সৌদি দূতাবাসের নীরবতা এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা

ঢাকায় অবস্থিত সৌদি দূতাবাস এই বিষয়ে সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে পর্দার আড়ালে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে, কারণ—

  • সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার,
  • দুই মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কর্মরত,
  • এবং সৌদি সরকার নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা পাঠায়।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সরকার চায় না একটি ব্যক্তিগত ইস্যু রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক।”

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ আহ্বান

মেঘনা আলমের দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রকৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক পোস্টে বলেছে,

“আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাই—মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো অপরাধে অভিযোগ আনুন, অথবা তাকে মুক্তি দিন। বিতর্কিত আইন প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া মিডিয়ায় আলোড়ন

ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ মেঘনাকে “ভিকটিম” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন—রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা কূটনৈতিক স্বার্থ বিঘ্নিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াই উচিত।

সামাজিকভাবে আলোচিত এই মামলাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিচ্ছেদ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং আইনের ব্যবহার নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বাংলাদেশি মডেল মেঘনা আলম গ্রেপ্তার

Update Time : ১০:৪১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
Meghna Alam
 

সৌদি আরবের সাবেক রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে বাংলাদেশি মডেল ও সাবেক মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনা ঘিরে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

বিতর্কিত গ্রেপ্তার: বিশেষ ক্ষমতা আইন আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

৩০ বছর বয়সী মেঘনা আলমকে ৯ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়, যা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখার সুযোগ দেয়। এ আইনের অধীনে তাকে রাখা নিয়েই মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনা চলছে।

পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ তালেবুর রহমান এএফপি-কে জানান, প্রাথমিকভাবে তাকে অভিযোগ ছাড়া আটক রাখা হলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন।

অভিযোগের মূলভিত্তি: ব্যক্তিগত সম্পর্ক না ব্ল্যাকমেইল?

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মেঘনা ও কয়েকজন সহযোগী মিলে সৌদি কূটনীতিককে একটি ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। তারা রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পর্ককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।”

তবে অন্যদিকে, মেঘনার পরিবার ও নিজ বক্তব্য অনুযায়ী, পুরো ঘটনাটি ছিল এক ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিণতি, যা এখন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক রূপ নিচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মেঘনা আদালতে বলেন, “রাষ্ট্রদূতই প্রথমে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ দেখান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন এবং কিছুদিন সম্পর্কও রাখেন।”

তার বাবা বদরুল আলম বলেন, “রাষ্ট্রদূত আমার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিবাহিত এবং তার সন্তান রয়েছে—এই কারণে মেঘনা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।”

সৌদি দূতাবাসের নীরবতা এবং কূটনৈতিক উত্তেজনা

ঢাকায় অবস্থিত সৌদি দূতাবাস এই বিষয়ে সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে পর্দার আড়ালে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে, কারণ—

  • সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার,
  • দুই মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কর্মরত,
  • এবং সৌদি সরকার নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা পাঠায়।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সরকার চায় না একটি ব্যক্তিগত ইস্যু রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলুক।”

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ আহ্বান

মেঘনা আলমের দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রকৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক পোস্টে বলেছে,

“আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাই—মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো অপরাধে অভিযোগ আনুন, অথবা তাকে মুক্তি দিন। বিতর্কিত আইন প্রয়োগ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া মিডিয়ায় আলোড়ন

ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ মেঘনাকে “ভিকটিম” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন—রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা কূটনৈতিক স্বার্থ বিঘ্নিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াই উচিত।

সামাজিকভাবে আলোচিত এই মামলাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিচ্ছেদ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং আইনের ব্যবহার নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share