বিচার ও সংস্কার ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না: জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

- Update Time : ০৫:৫০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ৫৮ Time View
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দমন–পীড়ন, হত্যা, গুম ও মিথ্যা মামলার জবাব না দিয়ে এবং কার্যকর বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে প্রহসন আর বরদাস্ত করবে না জনগণ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন নিশ্চিত না হলে দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।”
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৃহৎ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক মিছিল নিয়ে সভাস্থলে জড়ো হন। শহরজুড়ে ছিল নিরাপত্তার চাদর ও উৎসবমুখর পরিবেশ। নারী উপস্থিতিদের জন্য শহরের আরেকটি মাঠে স্থাপন করা হয় বড় পর্দা, যাতে করে তারাও সমাবেশ উপভোগ করতে পারেন।
গণমানুষের দাবি তুলে ধরেন জামায়াত আমীর
জনসভায় ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন,
“তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করতে হবে। মোগলহাট স্থলবন্দর সচল করতে হবে। লালমনিরহাট–বুড়িমারী মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের একাংশে উন্নয়নের মোড়ক দিয়ে প্রকৃতপক্ষে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ উত্তরাঞ্চলের জনগণের প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি ও ভৌগোলিক অবস্থান দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।
ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কে ‘সমতা’ ও ‘শ্রদ্ধা’র তাগিদ
ডা. শফিক বলেন,
“আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, কিন্তু সেটি হতে হবে সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে। আমাদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে ভারত যদি ভাবেন তারা ভালো থাকবে, তাহলে ভুল করবে। আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। এটা পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়।”
তিনি বলেন, শুধু একপাক্ষিক সুবিধা দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায় না। তিস্তা চুক্তিসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
রাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ
জামায়াত আমীর আরও অভিযোগ করেন,
“দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও এখনো কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জমি দখলের মতো অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি, বরং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।”
তিনি দাবি করেন, জামায়াত ইসলামি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য সম্মান, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নারী ও পরিবারবান্ধব সমাজ গঠনে দলটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
বিপুল জমায়েত, উৎসবমুখর পরিবেশ
সকাল থেকেই জেলার হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল আসতে থাকে। জেলার বাইরের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর থেকেও বহু কর্মী-সমর্থক উপস্থিত হন।
শহরের প্রবেশপথ ও আশেপাশের এলাকা পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছাওয়া ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে অংশ নেন। পুরো শহরে এক ধরনের উৎসবের আবহ বিরাজ করে।
জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অ্যাডভোকেট আবু তাহের।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ডা. আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবীরসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সবাই সরকারবিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি দলীয় আদর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সমাপ্তি ও প্রতিজ্ঞা
সমাবেশের শেষাংশে দলীয় নেতাকর্মীরা দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
জনসভার সমাপ্তিতে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “জনগণই হবে আমাদের শক্তি। ইনশাআল্লাহ, ন্যায়বিচার ও ইসলামী আদর্শের সমাজ গড়ার স্বপ্ন আমরা একদিন বাস্তব করবো।”
Please Share This Post in Your Social Media

বিচার ও সংস্কার ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না: জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দমন–পীড়ন, হত্যা, গুম ও মিথ্যা মামলার জবাব না দিয়ে এবং কার্যকর বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে প্রহসন আর বরদাস্ত করবে না জনগণ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন নিশ্চিত না হলে দেশে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।”
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৃহৎ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এই জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক মিছিল নিয়ে সভাস্থলে জড়ো হন। শহরজুড়ে ছিল নিরাপত্তার চাদর ও উৎসবমুখর পরিবেশ। নারী উপস্থিতিদের জন্য শহরের আরেকটি মাঠে স্থাপন করা হয় বড় পর্দা, যাতে করে তারাও সমাবেশ উপভোগ করতে পারেন।
গণমানুষের দাবি তুলে ধরেন জামায়াত আমীর
জনসভায় ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন,
“তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করতে হবে। মোগলহাট স্থলবন্দর সচল করতে হবে। লালমনিরহাট–বুড়িমারী মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের একাংশে উন্নয়নের মোড়ক দিয়ে প্রকৃতপক্ষে জনগণকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ উত্তরাঞ্চলের জনগণের প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি ও ভৌগোলিক অবস্থান দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।
ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কে ‘সমতা’ ও ‘শ্রদ্ধা’র তাগিদ
ডা. শফিক বলেন,
“আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই, কিন্তু সেটি হতে হবে সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে। আমাদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে ভারত যদি ভাবেন তারা ভালো থাকবে, তাহলে ভুল করবে। আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। এটা পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়।”
তিনি বলেন, শুধু একপাক্ষিক সুবিধা দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলা যায় না। তিস্তা চুক্তিসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে।
রাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ
জামায়াত আমীর আরও অভিযোগ করেন,
“দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও এখনো কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জমি দখলের মতো অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি, বরং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।”
তিনি দাবি করেন, জামায়াত ইসলামি যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য সম্মান, নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নারী ও পরিবারবান্ধব সমাজ গঠনে দলটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান তিনি।
বিপুল জমায়েত, উৎসবমুখর পরিবেশ
সকাল থেকেই জেলার হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল আসতে থাকে। জেলার বাইরের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর থেকেও বহু কর্মী-সমর্থক উপস্থিত হন।
শহরের প্রবেশপথ ও আশেপাশের এলাকা পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছাওয়া ছিল। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে অংশ নেন। পুরো শহরে এক ধরনের উৎসবের আবহ বিরাজ করে।
জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অ্যাডভোকেট আবু তাহের।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ডা. আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মো. হুমায়ুন কবীরসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সবাই সরকারবিরোধী বক্তব্যের পাশাপাশি দলীয় আদর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সমাপ্তি ও প্রতিজ্ঞা
সমাবেশের শেষাংশে দলীয় নেতাকর্মীরা দেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
জনসভার সমাপ্তিতে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “জনগণই হবে আমাদের শক্তি। ইনশাআল্লাহ, ন্যায়বিচার ও ইসলামী আদর্শের সমাজ গড়ার স্বপ্ন আমরা একদিন বাস্তব করবো।”