সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়ীত্বের যৌক্তিকতা

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ১১:৩৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৭১ Time View

DR YUNUS NEW

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

b6 2501031743

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন, তা আজ আর বিতর্কিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি, দলীয়করণ, প্রশাসনিক পক্ষপাত, বিচার বিভাগের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, নির্বাচন ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন—এসব মিলিয়ে এক গভীর অবিশ্বাস ও অসন্তোষের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটময় প্রেক্ষাপটে দেশে একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে সেই সরকারের মাধ্যমে সমস্ত খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করাই এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনই নানা বিতর্ক, সহিংসতা, ভোট কারচুপি ও অংশগ্রহণহীনতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা বিশুদ্ধকরণ, ইভিএম ব্যবহারে জনগণের আস্থা ফেরাতে গবেষণা ও জনমত জরিপের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্বাচনী সময়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র একটি দলীয় সরকার নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারই এই সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের আস্থাকে চূর্ণ করেছে। বিচারপতি নিয়োগে দলীয় প্রভাব বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, বিচারকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও নৈতিক জবাবদিহিতা এবং বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হতে হবে সংস্কারের মূলধারা। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা অর্জন না হলে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার ছাড়া নিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা কল্পনা করা যায় না। পুলিশ ও র‍্যাবের মতো সংস্থাগুলো যদি দলীয় হুকুমে কাজ করে, তাহলে তা জনগণের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক মানদণ্ড প্রয়োগ, ‘কমিউনিটি পুলিশিং’-এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নির্বাচনের সময় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি আইনের শাসনের প্রতি আস্থা বাড়াবে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাধি রূপে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি খাতে ঘুষ ও অনিয়ম একটি নিয়মিত চিত্র। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা, দলীয় চাপমুক্ত থেকে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিবেশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণপ্রশাসনে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়।

গণমাধ্যম একটি জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও বেসরকারি মিডিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়ন কল্পনাই করা যায় না। বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব, তরুণ নেতৃত্বের অভাব, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এবং ছাত্র ও যুব রাজনীতিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দলগুলোর আর্থিক হিসাবের স্বচ্ছতা, আদর্শিক নেতৃত্ব গঠনে রাজনৈতিক সংলাপ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহমতের পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে দেশের রাজনীতিতে কখনোই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে—কেন সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকা উচিত? একটি দলীয় সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে, একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে। এই সরকার প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দলীয় হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে সংলাপ, সহমতি ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে। এই পরিবেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব।

উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ সময়ে একটি নিরপেক্ষ ও ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকার, যার একমাত্র দায়িত্ব হবে দেশের প্রতিটি খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা, সেটিই হতে পারে জাতির জন্য একটি নতুন সূচনা। এই সরকার শুধুমাত্র তখনই নির্বাচন আয়োজন করবে, যখন সকল দলের জন্য সমান সুযোগ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত হবে। ততদিন পর্যন্ত কোনও জাতীয় নির্বাচন না হওয়াই দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে সর্বোত্তম হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের স্থায়ীত্বের যৌক্তিকতা

Update Time : ১১:৩৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

b6 2501031743

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন, তা আজ আর বিতর্কিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুর্নীতি, দলীয়করণ, প্রশাসনিক পক্ষপাত, বিচার বিভাগের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, নির্বাচন ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন—এসব মিলিয়ে এক গভীর অবিশ্বাস ও অসন্তোষের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকটময় প্রেক্ষাপটে দেশে একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে সেই সরকারের মাধ্যমে সমস্ত খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করাই এখন সময়ের দাবি।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনই নানা বিতর্ক, সহিংসতা, ভোট কারচুপি ও অংশগ্রহণহীনতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটার তালিকা বিশুদ্ধকরণ, ইভিএম ব্যবহারে জনগণের আস্থা ফেরাতে গবেষণা ও জনমত জরিপের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নির্বাচনী সময়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র একটি দলীয় সরকার নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারই এই সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের আস্থাকে চূর্ণ করেছে। বিচারপতি নিয়োগে দলীয় প্রভাব বন্ধ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, বিচারকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও নৈতিক জবাবদিহিতা এবং বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হতে হবে সংস্কারের মূলধারা। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা অর্জন না হলে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সংস্কার ছাড়া নিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা কল্পনা করা যায় না। পুলিশ ও র‍্যাবের মতো সংস্থাগুলো যদি দলীয় হুকুমে কাজ করে, তাহলে তা জনগণের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক মানদণ্ড প্রয়োগ, ‘কমিউনিটি পুলিশিং’-এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নির্বাচনের সময় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি আইনের শাসনের প্রতি আস্থা বাড়াবে।

বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাধি রূপে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি খাতে ঘুষ ও অনিয়ম একটি নিয়মিত চিত্র। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা, দলীয় চাপমুক্ত থেকে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিবেশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণপ্রশাসনে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়।

গণমাধ্যম একটি জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, সাংবাদিকদের হয়রানি এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও বেসরকারি মিডিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়ন কল্পনাই করা যায় না। বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব, তরুণ নেতৃত্বের অভাব, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এবং ছাত্র ও যুব রাজনীতিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা জাতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দলগুলোর আর্থিক হিসাবের স্বচ্ছতা, আদর্শিক নেতৃত্ব গঠনে রাজনৈতিক সংলাপ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহমতের পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে দেশের রাজনীতিতে কখনোই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠে—কেন সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকা উচিত? একটি দলীয় সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে, একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে। এই সরকার প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দলীয় হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত করতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে পারে এবং জনগণের মধ্যে সংলাপ, সহমতি ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে। এই পরিবেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন সম্ভব।

উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এ সময়ে একটি নিরপেক্ষ ও ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকার, যার একমাত্র দায়িত্ব হবে দেশের প্রতিটি খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করা, সেটিই হতে পারে জাতির জন্য একটি নতুন সূচনা। এই সরকার শুধুমাত্র তখনই নির্বাচন আয়োজন করবে, যখন সকল দলের জন্য সমান সুযোগ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত হবে। ততদিন পর্যন্ত কোনও জাতীয় নির্বাচন না হওয়াই দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে সর্বোত্তম হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share