সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বিজয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ১১:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৩৮ Time View

bijoy 2

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

 

bijoy 2

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ — বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতীক পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বিজয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়োজিত বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তালশহর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুফতি মোঃ ইসমাঈল ভূঁইয়া। তিনি তার বক্তব্যে নববর্ষ উদযাপনের ধর্মীয় ও সামাজিক দিক তুলে ধরে বলেন,

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন সাংঘর্ষপূর্ণ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তা শিরক বা বিদআতের পর্যায়ে না পড়ে। ইসলাম কখনও নিজস্ব সংস্কৃতি লালনপালনে বাধা দেয় না। বরং যেকোনো জাতির সংস্কৃতি তার আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলমানরাও তাদের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্মানের সাথে পালন করতে পারে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোঃ মহিবুর রহিম। তিনি তার প্রাঞ্জল বক্তৃতায় বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।

“বাংলা সনের সূচনা হয় সম্রাট আকবরের আমলে। তিনি কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের সাথে সমন্বয় করে ‘ফসলি সন’ নামে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। পরবর্তীকালে এটি ‘বাংলা সন’ নামে পরিচিতি পায়। সুতরাং ইতিহাস বলে দেয় যে, বাংলা সনের প্রবর্তক এক মুসলমান সম্রাটই ছিলেন। অতএব, মুসলমানদের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে কোনো ধর্মীয় বাধা নেই।”

বর্তমান সময়ে বাংলা নববর্ষ একটি সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আজ এই দিনটিকে ভালোবাসে। এবারের নববর্ষ আয়োজন অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও সুশৃঙ্খল, রুচিশীল এবং নিরাপদভাবে উদযাপন করা হয়েছে, যা আমাদের সমাজে সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশেরই ইঙ্গিত দেয়।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন—

  • প্রিন্সিপাল খলিলুর রহমান
  • প্রিন্সিপাল আবদুল হান্নান
  • অধ্যাপক কবির হোসেন
  • জনাব আবুল বাশার খাদেম
  • ব্যাংকার ও সাংবাদিক  বিল্লাল হোসেন

বক্তারা তাদের বক্তব্যে পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, ধর্ম ও সমাজে নববর্ষের ভূমিকা, এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় এই উৎসবের অবদান নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিপ্রেমী জনাব মোঃ গোলাম হাক্কানী খন্দকার। তার সাবলীল উপস্থাপনায় পুরো আয়োজনটি ছিল সুসংগঠিত ও প্রাণবন্ত।

 

অনুষ্ঠান শেষে কবিতা পাঠ পর্বে স্থানীয় ও অতিথি কবিরা তাদের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির বিষয়বস্তু ছিল বাংলা নববর্ষ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবিকতা— যা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। সার্বিকভাবে এই আয়োজনটি ছিল সাহিত্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিসেবীদের জন্য এক অনন্য মিলনমেলা।

 

দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয় । দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রিন্সিপাল আব্দুল হক আল আজাদ।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বিজয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠ অনুষ্ঠিত

Update Time : ১১:১৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

 

bijoy 2

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ — বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতীক পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বিজয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়োজিত বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তালশহর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুফতি মোঃ ইসমাঈল ভূঁইয়া। তিনি তার বক্তব্যে নববর্ষ উদযাপনের ধর্মীয় ও সামাজিক দিক তুলে ধরে বলেন,

ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপন সাংঘর্ষপূর্ণ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত তা শিরক বা বিদআতের পর্যায়ে না পড়ে। ইসলাম কখনও নিজস্ব সংস্কৃতি লালনপালনে বাধা দেয় না। বরং যেকোনো জাতির সংস্কৃতি তার আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলমানরাও তাদের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্মানের সাথে পালন করতে পারে।”

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোঃ মহিবুর রহিম। তিনি তার প্রাঞ্জল বক্তৃতায় বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।

“বাংলা সনের সূচনা হয় সম্রাট আকবরের আমলে। তিনি কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে হিজরি সনের সাথে সমন্বয় করে ‘ফসলি সন’ নামে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। পরবর্তীকালে এটি ‘বাংলা সন’ নামে পরিচিতি পায়। সুতরাং ইতিহাস বলে দেয় যে, বাংলা সনের প্রবর্তক এক মুসলমান সম্রাটই ছিলেন। অতএব, মুসলমানদের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে কোনো ধর্মীয় বাধা নেই।”

বর্তমান সময়ে বাংলা নববর্ষ একটি সর্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আজ এই দিনটিকে ভালোবাসে। এবারের নববর্ষ আয়োজন অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও সুশৃঙ্খল, রুচিশীল এবং নিরাপদভাবে উদযাপন করা হয়েছে, যা আমাদের সমাজে সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক বিকাশেরই ইঙ্গিত দেয়।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভিন্ন কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত অধ্যক্ষ ও অধ্যাপকবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন—

  • প্রিন্সিপাল খলিলুর রহমান
  • প্রিন্সিপাল আবদুল হান্নান
  • অধ্যাপক কবির হোসেন
  • জনাব আবুল বাশার খাদেম
  • ব্যাংকার ও সাংবাদিক  বিল্লাল হোসেন

বক্তারা তাদের বক্তব্যে পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, ধর্ম ও সমাজে নববর্ষের ভূমিকা, এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় এই উৎসবের অবদান নিয়ে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিপ্রেমী জনাব মোঃ গোলাম হাক্কানী খন্দকার। তার সাবলীল উপস্থাপনায় পুরো আয়োজনটি ছিল সুসংগঠিত ও প্রাণবন্ত।

 

অনুষ্ঠান শেষে কবিতা পাঠ পর্বে স্থানীয় ও অতিথি কবিরা তাদের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির বিষয়বস্তু ছিল বাংলা নববর্ষ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবিকতা— যা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। সার্বিকভাবে এই আয়োজনটি ছিল সাহিত্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিসেবীদের জন্য এক অনন্য মিলনমেলা।

 

দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয় । দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন প্রিন্সিপাল আব্দুল হক আল আজাদ।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share