জীবন বিমার মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি: নীরব দুর্দশায় ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার

- Update Time : ১০:৪৫:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ৬৪ Time View
বর্তমানে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিটি খাত সংস্কারে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থাও সংস্কারের আওতায় এসেছে। কিন্তু একটি খাত যেন একেবারেই উপেক্ষিত – সেটি হলো জীবন বীমা খাত।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির (maturity claim) টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বছরের পর বছর ধরে প্রিমিয়াম দিয়ে গেছেন, বিশ্বাস করেছিলেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পাবেন, কিন্তু এখন যখন পাওয়ার সময় এসেছে, তখন তারা পাচ্ছেন না কিছুই।
ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স: দুর্নীতির এক করুণ চিত্র (AS ON April 2025)
বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দুর্নীতির কারণে জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। কোম্পানিটি প্রায় ২,২৮০ কোটি টাকারও বেশি পলিসি দাবির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। হাজার হাজার পলিসি হোল্ডার বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও কোনো টাকা পাননি। অফিসে গেলে বলা হয়, “ডকুমেন্ট যাচাই হচ্ছে”, “ম্যানেজার নেই”, “সিস্টেম ডাউন”—এইসব অজুহাতে ঘোরানো হয়। ফোনে যোগাযোগ করলে কেউ ধরেন না বা ঘুরিয়ে দেয়।
এটা কেবল একজন বা দুইজন নয়, দশ হাজারেরও বেশি পলিসি হোল্ডারের অভিজ্ঞতা। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এমনকি অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতি, এবং ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, এই কোম্পানির সাবেক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রভাবশালী
বর্তমানে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স বলছে তারা সম্পত্তি বিক্রি করে দাবি পরিশোধ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেই সম্পত্তি বিক্রি কবে হবে, কে দেখভাল করবে, টাকা পাবে কারা – এসব কিছুই অনিশ্চিত।
আইডিআরএ (IDRA): নামেই নিয়ন্ত্রক?
জীবন বীমা খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই আইডিআরএ (Insurance Development and Regulatory Authority) একপ্রকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বছরের পর বছর অভিযোগ জমা পড়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফারইস্ট লাইফ বা অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, IDRA ছয়টি সমস্যা-সংকুল জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ‘পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা‘ (revival plan) চেয়েছে, যাদের কাছে প্রায় ৯ লাখ পলিসি হোল্ডারের ২,৮৮৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া থাকলেও কেন তারা আগে ব্যবস্থা নেয়নি?
IDRA-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখে কার্যকর তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতিবাজ কোম্পানিগুলোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের আস্থা পুরো বীমা খাত থেকেই উঠে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, কেবলমাত্র আইডিআরএ-এর “নামমাত্র নিয়ন্ত্রণ” আর জনগণের ক্ষোভের চাপা কান্না—এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আছেন লাখো পলিসি হোল্ডার। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এই খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
পলিসি হোল্ডারদের করুন আর্তি
আজ আমরা, দেশের লাখ লাখ পলিসি হোল্ডার, এই দুর্দশার কথা জাতির কাছে তুলে ধরছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বিনীত আবেদন জানাই – দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। আমাদের সঞ্চয়, আমাদের স্বপ্ন—সব আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
আমরা শুধুমাত্র ফারইস্ট নয়, অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির দুর্নীতির দিকেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আজ যদি কেউ আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে আগামী দিনে কেউই এই খাতে আস্থা রাখবে না। এটি শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, এটি মানবিক ট্র্যাজেডি।
Please Share This Post in Your Social Media

জীবন বিমার মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি: নীরব দুর্দশায় ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার

বর্তমানে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিটি খাত সংস্কারে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থাও সংস্কারের আওতায় এসেছে। কিন্তু একটি খাত যেন একেবারেই উপেক্ষিত – সেটি হলো জীবন বীমা খাত।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির (maturity claim) টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বছরের পর বছর ধরে প্রিমিয়াম দিয়ে গেছেন, বিশ্বাস করেছিলেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পাবেন, কিন্তু এখন যখন পাওয়ার সময় এসেছে, তখন তারা পাচ্ছেন না কিছুই।
ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স: দুর্নীতির এক করুণ চিত্র (AS ON April 2025)
বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দুর্নীতির কারণে জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। কোম্পানিটি প্রায় ২,২৮০ কোটি টাকারও বেশি পলিসি দাবির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। হাজার হাজার পলিসি হোল্ডার বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও কোনো টাকা পাননি। অফিসে গেলে বলা হয়, “ডকুমেন্ট যাচাই হচ্ছে”, “ম্যানেজার নেই”, “সিস্টেম ডাউন”—এইসব অজুহাতে ঘোরানো হয়। ফোনে যোগাযোগ করলে কেউ ধরেন না বা ঘুরিয়ে দেয়।
এটা কেবল একজন বা দুইজন নয়, দশ হাজারেরও বেশি পলিসি হোল্ডারের অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স বলছে তারা সম্পত্তি বিক্রি করে দাবি পরিশোধ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেই সম্পত্তি বিক্রি কবে হবে, কে দেখভাল করবে, টাকা পাবে কারা – এসব কিছুই অনিশ্চিত।
আইডিআরএ (IDRA): নামেই নিয়ন্ত্রক?
জীবন বীমা খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই আইডিআরএ (Insurance Development and Regulatory Authority) একপ্রকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বছরের পর বছর অভিযোগ জমা পড়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফারইস্ট লাইফ বা অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, IDRA ছয়টি সমস্যা-সংকুল জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ‘পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা‘ (revival plan) চেয়েছে, যাদের কাছে প্রায় ৯ লাখ পলিসি হোল্ডারের ২,৮৮৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া থাকলেও কেন তারা আগে ব্যবস্থা নেয়নি?
IDRA-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখে কার্যকর তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতিবাজ কোম্পানিগুলোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের আস্থা পুরো বীমা খাত থেকেই উঠে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, কেবলমাত্র আইডিআরএ-এর “নামমাত্র নিয়ন্ত্রণ” আর জনগণের ক্ষোভের চাপা কান্না—এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আছেন লাখো পলিসি হোল্ডার। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এই খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
পলিসি হোল্ডারদের করুন আর্তি
আজ আমরা, দেশের লাখ লাখ পলিসি হোল্ডার, এই দুর্দশার কথা জাতির কাছে তুলে ধরছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বিনীত আবেদন জানাই – দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। আমাদের সঞ্চয়, আমাদের স্বপ্ন—সব আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
আমরা শুধুমাত্র ফারইস্ট নয়, অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির দুর্নীতির দিকেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আজ যদি কেউ আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে আগামী দিনে কেউই এই খাতে আস্থা রাখবে না। এটি শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, এটি মানবিক ট্র্যাজেডি।