সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জীবন বিমার মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি: নীরব দুর্দশায় ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ১০:৪৫:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৬৪ Time View

idra

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

idra

বর্তমানে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিটি খাত সংস্কারে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থাও সংস্কারের আওতায় এসেছে। কিন্তু একটি খাত যেন একেবারেই উপেক্ষিত – সেটি হলো জীবন বীমা খাত

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির (maturity claim) টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বছরের পর বছর ধরে প্রিমিয়াম দিয়ে গেছেন, বিশ্বাস করেছিলেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পাবেন, কিন্তু এখন যখন পাওয়ার সময় এসেছে, তখন তারা পাচ্ছেন না কিছুই।

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স: দুর্নীতির এক করুণ চিত্র (AS ON April 2025)

বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দুর্নীতির কারণে জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। কোম্পানিটি প্রায় ,২৮০ কোটি টাকারও বেশি পলিসি দাবির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। হাজার হাজার পলিসি হোল্ডার বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও কোনো টাকা পাননি। অফিসে গেলে বলা হয়, “ডকুমেন্ট যাচাই হচ্ছে”, “ম্যানেজার নেই”, “সিস্টেম ডাউন”—এইসব অজুহাতে ঘোরানো হয়। ফোনে যোগাযোগ করলে কেউ ধরেন না বা ঘুরিয়ে দেয়।

এটা কেবল একজন বা দুইজন নয়, দশ হাজারেরও বেশি পলিসি হোল্ডারের অভিজ্ঞতা। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এমনকি অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতি, এবং ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, এই কোম্পানির সাবেক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রভাবশালী

মহলের ছত্রছায়া, যার ফলে সাধারণ পলিসি হোল্ডাররা বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হয়েও ন্যায্য অর্থ পাচ্ছেন না।

বর্তমানে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স বলছে তারা সম্পত্তি বিক্রি করে দাবি পরিশোধ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেই সম্পত্তি বিক্রি কবে হবে, কে দেখভাল করবে, টাকা পাবে কারা – এসব কিছুই অনিশ্চিত।

আইডিআরএ (IDRA): নামেই নিয়ন্ত্রক?

জীবন বীমা খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই আইডিআরএ (Insurance Development and Regulatory Authority) একপ্রকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বছরের পর বছর অভিযোগ জমা পড়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফারইস্ট লাইফ বা অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, IDRA ছয়টি সমস্যা-সংকুল জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা‘ (revival plan) চেয়েছে, যাদের কাছে প্রায় লাখ পলিসি হোল্ডারের ,৮৮৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া থাকলেও কেন তারা আগে ব্যবস্থা নেয়নি?

IDRA-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখে কার্যকর তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতিবাজ কোম্পানিগুলোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের আস্থা পুরো বীমা খাত থেকেই উঠে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, কেবলমাত্র আইডিআরএ-এর “নামমাত্র নিয়ন্ত্রণ” আর জনগণের ক্ষোভের চাপা কান্না—এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আছেন লাখো পলিসি হোল্ডার। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এই খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

পলিসি হোল্ডারদের করুন আর্তি

আজ আমরা, দেশের লাখ লাখ পলিসি হোল্ডার, এই দুর্দশার কথা জাতির কাছে তুলে ধরছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বিনীত আবেদন জানাই – দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। আমাদের সঞ্চয়, আমাদের স্বপ্ন—সব আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

আমরা শুধুমাত্র ফারইস্ট নয়, অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির দুর্নীতির দিকেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আজ যদি কেউ আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে আগামী দিনে কেউই এই খাতে আস্থা রাখবে না। এটি শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, এটি মানবিক ট্র্যাজেডি।

 

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

জীবন বিমার মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি: নীরব দুর্দশায় ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার

Update Time : ১০:৪৫:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

idra

বর্তমানে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিটি খাত সংস্কারে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ব্যবস্থাও সংস্কারের আওতায় এসেছে। কিন্তু একটি খাত যেন একেবারেই উপেক্ষিত – সেটি হলো জীবন বীমা খাত

বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখেরও বেশি পলিসি হোল্ডার তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ দাবির (maturity claim) টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বছরের পর বছর ধরে প্রিমিয়াম দিয়ে গেছেন, বিশ্বাস করেছিলেন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পাবেন, কিন্তু এখন যখন পাওয়ার সময় এসেছে, তখন তারা পাচ্ছেন না কিছুই।

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স: দুর্নীতির এক করুণ চিত্র (AS ON April 2025)

বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি দুর্নীতির কারণে জীবন বীমা খাতে সবচেয়ে আলোচিত নাম। কোম্পানিটি প্রায় ,২৮০ কোটি টাকারও বেশি পলিসি দাবির অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। হাজার হাজার পলিসি হোল্ডার বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও কোনো টাকা পাননি। অফিসে গেলে বলা হয়, “ডকুমেন্ট যাচাই হচ্ছে”, “ম্যানেজার নেই”, “সিস্টেম ডাউন”—এইসব অজুহাতে ঘোরানো হয়। ফোনে যোগাযোগ করলে কেউ ধরেন না বা ঘুরিয়ে দেয়।

এটা কেবল একজন বা দুইজন নয়, দশ হাজারেরও বেশি পলিসি হোল্ডারের অভিজ্ঞতা

কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এমনকি অর্থ আত্মসাত, জালিয়াতি, এবং ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, এই কোম্পানির সাবেক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া, যার ফলে সাধারণ পলিসি হোল্ডাররা বছরের পর বছর হয়রানির শিকার হয়েও ন্যায্য অর্থ পাচ্ছেন না।

বর্তমানে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স বলছে তারা সম্পত্তি বিক্রি করে দাবি পরিশোধ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সেই সম্পত্তি বিক্রি কবে হবে, কে দেখভাল করবে, টাকা পাবে কারা – এসব কিছুই অনিশ্চিত।

আইডিআরএ (IDRA): নামেই নিয়ন্ত্রক?

জীবন বীমা খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই আইডিআরএ (Insurance Development and Regulatory Authority) একপ্রকার নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে বছরের পর বছর অভিযোগ জমা পড়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফারইস্ট লাইফ বা অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, IDRA ছয়টি সমস্যা-সংকুল জীবন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা‘ (revival plan) চেয়েছে, যাদের কাছে প্রায় লাখ পলিসি হোল্ডারের ,৮৮৭ কোটি টাকা বকেয়া আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় অঙ্কের অর্থ বকেয়া থাকলেও কেন তারা আগে ব্যবস্থা নেয়নি?

IDRA-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে তারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপের মুখে কার্যকর তদারকি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন দুর্নীতিবাজ কোম্পানিগুলোর সাহস বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের আস্থা পুরো বীমা খাত থেকেই উঠে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, কেবলমাত্র আইডিআরএ-এর “নামমাত্র নিয়ন্ত্রণ” আর জনগণের ক্ষোভের চাপা কান্না—এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে আছেন লাখো পলিসি হোল্ডার। এখনই যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে এই খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

পলিসি হোল্ডারদের করুন আর্তি

আজ আমরা, দেশের লাখ লাখ পলিসি হোল্ডার, এই দুর্দশার কথা জাতির কাছে তুলে ধরছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বিনীত আবেদন জানাই – দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। আমাদের সঞ্চয়, আমাদের স্বপ্ন—সব আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

আমরা শুধুমাত্র ফারইস্ট নয়, অন্যান্য জীবন বীমা কোম্পানির দুর্নীতির দিকেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আজ যদি কেউ আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তবে আগামী দিনে কেউই এই খাতে আস্থা রাখবে না। এটি শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, এটি মানবিক ট্র্যাজেডি।

 

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share