সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন: শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে: ড. ইউনূস

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৩:৪৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • / ৭৪ Time View

1741156431 af43176abdb43196427795bd8c17a8ab

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
1741156431 af43176abdb43196427795bd8c17a8ab
যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্কাই নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের সাথে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। বিচারের মুখোমুখি করা হবে তার সহযোগীদেরও।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকায়, প্রশ্ন উঠছে—আমরা তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারব কী না। এটি নির্ভর করছে ভারতের ওপর এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনার ওপর।”

এ প্রসঙ্গে, তিনি জানান, “এই বিষয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।” এর মাধ্যমে, ড. ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিচারের প্রসঙ্গে

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের সম্মুখীন করতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, এবং তাকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তবে, তিনি এই প্রক্রিয়াটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আইনগত চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করারও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

ড. ইউনূসের মতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, জাতিগত নিধন, এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, এসব মামলা বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচিত হচ্ছে।

আয়নাঘর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

সাক্ষাৎকারের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ড. ইউনূসের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে মন্তব্য। তিনি বলেন, “যখন আপনি (সাংবাদিক) আয়নাঘরগুলো (বিশ্ববিদ্যালয়, কারাগার) দেখবেন এবং নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, কতটা ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।”

ড. ইউনূস একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা এই স্থানগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করতে চাই। সেখানে জনগণ আসতে পারবে এবং ইতিহাসের এক কাল্পনিক অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে যা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।”

ভারত আন্তর্জাতিক আইনের ভূমিকা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ভারতের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। তিনি জানায়, “আমরা ভারত সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি যে, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখন ভারতের পক্ষ থেকে কী জবাব আসে, সেটি দেখার বিষয়।”

এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ও। আন্তর্জাতিক সমাজ এবং আইন ব্যবস্থার সহায়তা ছাড়া, বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”

প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পর্যালোচনা

ড. ইউনূসের মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিনি আসলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন এক চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, তাঁর মন্তব্য দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করছেন, এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে আরও এক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

এটি স্পষ্ট যে, ড. ইউনূসের এই মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। এই প্রসঙ্গের ওপর আরও বিস্তারিত আলোচনা এবং সমালোচনা দেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে, এবং ভবিষ্যতে কী পরিণতি আসবে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে।

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

স্কাই নিউজের প্রতিবেদন: শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে: ড. ইউনূস

Update Time : ০৩:৪৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
1741156431 af43176abdb43196427795bd8c17a8ab
যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্কাই নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের সাথে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে। বিচারের মুখোমুখি করা হবে তার সহযোগীদেরও।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রমাণ সরকারের কাছে রয়েছে। তবে তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থাকায়, প্রশ্ন উঠছে—আমরা তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারব কী না। এটি নির্ভর করছে ভারতের ওপর এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনার ওপর।”

এ প্রসঙ্গে, তিনি জানান, “এই বিষয়ে ভারত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।” এর মাধ্যমে, ড. ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিচারের প্রসঙ্গে

ড. ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর দাবি, শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের সম্মুখীন করতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে, এবং তাকে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তবে, তিনি এই প্রক্রিয়াটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আইনগত চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করারও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।

ড. ইউনূসের মতে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন, জাতিগত নিধন, এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, এসব মামলা বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচিত হচ্ছে।

আয়নাঘর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন

সাক্ষাৎকারের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ড. ইউনূসের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে মন্তব্য। তিনি বলেন, “যখন আপনি (সাংবাদিক) আয়নাঘরগুলো (বিশ্ববিদ্যালয়, কারাগার) দেখবেন এবং নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, কতটা ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।”

ড. ইউনূস একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা এই স্থানগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করতে চাই। সেখানে জনগণ আসতে পারবে এবং ইতিহাসের এক কাল্পনিক অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে যা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।”

ভারত আন্তর্জাতিক আইনের ভূমিকা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ভারতের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক আইনের নির্দেশনা অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। তিনি জানায়, “আমরা ভারত সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি যে, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখন ভারতের পক্ষ থেকে কী জবাব আসে, সেটি দেখার বিষয়।”

এছাড়া, তিনি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ও। আন্তর্জাতিক সমাজ এবং আইন ব্যবস্থার সহায়তা ছাড়া, বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”

প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পর্যালোচনা

ড. ইউনূসের মন্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিনি আসলে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন এক চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, তাঁর মন্তব্য দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করছেন, এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে আরও এক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

এটি স্পষ্ট যে, ড. ইউনূসের এই মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। এই প্রসঙ্গের ওপর আরও বিস্তারিত আলোচনা এবং সমালোচনা দেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে, এবং ভবিষ্যতে কী পরিণতি আসবে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাবে।

 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share