সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশের শত্রুরা এখনো গভীর চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া 

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৬৩ Time View

image 167729 1740642720

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

image 167729 1740642720

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তপ্ত বিতর্কের সূচনা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিএনপির বর্ধিত সভায় যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা চক্রান্তে লিপ্ত। আসুন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি। ঐক্যকে আরও বেগবান করি।” 

তিনি আরও বলেন, দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। ছাত্র ও জনগণের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকরা বিদায় নিয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা হলো, রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। 

খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।” 

তিনি তার ভাষণের শুরুতে বলেন, “আজ দীর্ঘ 16 বছর পর আপনারা আবার একসঙ্গে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছে, তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।” 

চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তিনি বলেন, “আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি। এই দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লাখ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন; আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।” 

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, আজ ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র সংকীর্ণতাকে ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। 

খালেদা জিয়া বলেন, “আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়ার স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরও বেগবান করি। আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই, আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।” 

বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আসুন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, পারস্পারিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।” 

উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি তিনি লন্ডন যান। সেখানে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। 

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তার ভাষণে তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাস, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার এই বক্তব্য বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং আগামী দিনগুলোতে দলের কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছে। 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশের শত্রুরা এখনো গভীর চক্রান্তে লিপ্ত: খালেদা জিয়া 

Update Time : ০৫:৩৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

image 167729 1740642720

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তপ্ত বিতর্কের সূচনা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বিএনপির বর্ধিত সভায় যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা চক্রান্তে লিপ্ত। আসুন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি। ঐক্যকে আরও বেগবান করি।” 

তিনি আরও বলেন, দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। ছাত্র ও জনগণের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকরা বিদায় নিয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা হলো, রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। 

খালেদা জিয়া দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।” 

তিনি তার ভাষণের শুরুতে বলেন, “আজ দীর্ঘ 16 বছর পর আপনারা আবার একসঙ্গে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছে, তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।” 

চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তিনি বলেন, “আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি। এই দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লাখ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন; আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।” 

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, আজ ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র সংকীর্ণতাকে ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে। এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। 

খালেদা জিয়া বলেন, “আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়ার স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরও বেগবান করি। আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই, আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।” 

বিএনপি চেয়ারপারসন দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, “আসুন প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, পারস্পারিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সকলে মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।” 

উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি তিনি লন্ডন যান। সেখানে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন। 

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তার ভাষণে তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাস, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার এই বক্তব্য বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে এবং আগামী দিনগুলোতে দলের কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছে। 

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share