স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি

- Update Time : ০৫:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৬৫ Time View
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নারী অধিকার কর্মী, তরুণ সমাজসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে সেখানে উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো। তবে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে যখন তারা রাজধানীর শিক্ষা ভবন মোড়ে পৌঁছান, তখনই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পুলিশের বাধা ও ধাক্কাধাক্কি
আন্দোলনকারীরা শিক্ষা ভবন মোড়ে আসার আগেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ রোধ করে। তবে বিক্ষোভকারীরা সেই ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তখন তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ না করলেও শারীরিকভাবে ধাক্কা দেয় এবং কিছু নারী আন্দোলনকারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের এই ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা
“পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে! অথচ ধর্ষকদের, অপরাধীদের থামাতে পারছে না। আমরা আর থামব না। আমাদের হাত থেকে এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাঁচতে পারবে না।“
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, “এখানে কোনো নারী পুলিশ ছিল না, অথচ ব্যানারে থাকা অধিকাংশই নারী আন্দোলনকারী। অথচ পুরুষ পুলিশরাই আমাদের ওপর হাত তুলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।“
নারী আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার বলেন,
“আমরা নারীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি কারণ আমাদের নিরাপত্তা নেই। অথচ আন্দোলনে নামলেই আমাদের কটাক্ষ করা হয়, উপহাস করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও আমরা অনিরাপদ ছিলাম। কিন্তু এখনো কেন নিরাপদ নই?”
তিনি আরও বলেন,
“নিজের ক্যাম্পাসে পর্যন্ত আমরা নিরাপদ নই। রাতে তো দূরের কথা, দিনে রাস্তায় বের হলেও ভয় লাগে। এই রাষ্ট্র আমরা কখনও চাইনি। যেখানে নারী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, যেখানে ধর্ষকদের বিচার হবে না, সেই রাষ্ট্র আমরা মানতে পারি না।“
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন,
“আমরা আর আশ্বাস শুনতে চাই না, বাস্তব নিরাপত্তা চাই। আমাদের সমাজ নিরাপদ করুন। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। তাহলেই আমাদের আন্দোলন সফল হবে।“
বিভিন্ন দাবি ও স্লোগান
আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের পোস্টারগুলোতে লেখা ছিল—
- “পাহাড় থেকে সমতল, সকল ধর্ষণের বিচার চাই“
- “বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ধর্ষণের রাজনীতি“
- “আমরা জন্ম থেকে শহীদ, তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার কই?”
- “ধর্ষক নয়, রাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন চাই“
- “নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ চাই“
বিক্ষোভকারীদের দাবি, রাষ্ট্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ফলে অপরাধীরা বারবার ধর্ষণ, নারী নিপীড়নসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে পরিবর্তন আনতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি
বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। তাই তাকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যতক্ষণ না তিনি পদত্যাগ করবেন, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।“
তারা আরও বলেন,
“আমরা চাই নারী ও শিশুর জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্র। শুধু আইন করে লাভ নেই, তার বাস্তবায়ন থাকতে হবে। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার করতে হবে। সমাজের সব স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।“
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা
আন্দোলনকারীরা জানান,
“এটি আমাদের শেষ কর্মসূচি নয়। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আগামী দিনে আরও বড় কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।“
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়, যেখানে পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, তারা কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তব নিরাপত্তা চান। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
Please Share This Post in Your Social Media

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, পুলিশের বাধা ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই পদযাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নারী অধিকার কর্মী, তরুণ সমাজসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে সেখানে উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো। তবে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটের দিকে যখন তারা রাজধানীর শিক্ষা ভবন মোড়ে পৌঁছান, তখনই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পুলিশের বাধা ও ধাক্কাধাক্কি
আন্দোলনকারীরা শিক্ষা ভবন মোড়ে আসার আগেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ রোধ করে। তবে বিক্ষোভকারীরা সেই ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তখন তাদের আটকানোর চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ না করলেও শারীরিকভাবে ধাক্কা দেয় এবং কিছু নারী আন্দোলনকারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের এই ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা
“পুলিশ আমাদের বাধা দিচ্ছে! অথচ ধর্ষকদের, অপরাধীদের থামাতে পারছে না। আমরা আর থামব না। আমাদের হাত থেকে এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাঁচতে পারবে না।“
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, “এখানে কোনো নারী পুলিশ ছিল না, অথচ ব্যানারে থাকা অধিকাংশই নারী আন্দোলনকারী। অথচ পুরুষ পুলিশরাই আমাদের ওপর হাত তুলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।“
নারী আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার বলেন,
“আমরা নারীরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি কারণ আমাদের নিরাপত্তা নেই। অথচ আন্দোলনে নামলেই আমাদের কটাক্ষ করা হয়, উপহাস করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও আমরা অনিরাপদ ছিলাম। কিন্তু এখনো কেন নিরাপদ নই?”
তিনি আরও বলেন,
“নিজের ক্যাম্পাসে পর্যন্ত আমরা নিরাপদ নই। রাতে তো দূরের কথা, দিনে রাস্তায় বের হলেও ভয় লাগে। এই রাষ্ট্র আমরা কখনও চাইনি। যেখানে নারী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না, যেখানে ধর্ষকদের বিচার হবে না, সেই রাষ্ট্র আমরা মানতে পারি না।“
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন,
“আমরা আর আশ্বাস শুনতে চাই না, বাস্তব নিরাপত্তা চাই। আমাদের সমাজ নিরাপদ করুন। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। তাহলেই আমাদের আন্দোলন সফল হবে।“
বিভিন্ন দাবি ও স্লোগান
আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন পোস্টার-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাদের পোস্টারগুলোতে লেখা ছিল—
- “পাহাড় থেকে সমতল, সকল ধর্ষণের বিচার চাই“
- “বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ধর্ষণের রাজনীতি“
- “আমরা জন্ম থেকে শহীদ, তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার কই?”
- “ধর্ষক নয়, রাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন চাই“
- “নারীদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ চাই“
বিক্ষোভকারীদের দাবি, রাষ্ট্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ফলে অপরাধীরা বারবার ধর্ষণ, নারী নিপীড়নসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে পরিবর্তন আনতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি
বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। তাই তাকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যতক্ষণ না তিনি পদত্যাগ করবেন, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।“
তারা আরও বলেন,
“আমরা চাই নারী ও শিশুর জন্য একটি নিরাপদ রাষ্ট্র। শুধু আইন করে লাভ নেই, তার বাস্তবায়ন থাকতে হবে। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার করতে হবে। সমাজের সব স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।“
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা
আন্দোলনকারীরা জানান,
“এটি আমাদের শেষ কর্মসূচি নয়। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আগামী দিনে আরও বড় কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।“
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়, যেখানে পুলিশ বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, তারা কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তব নিরাপত্তা চান। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।